অরুণ জেটলি ও সীতারাম ইয়েচুরি
ঘটনা ৪৩ বছর আগের। ইন্দিরা আমলে জারি হওয়া জরুরি অবস্থা নিয়েই কংগ্রেসকে নতুন করে আক্রমণ নেমেছে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি। বিপরীতে কংগ্রেস সরব এই জমানার ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’র বিরুদ্ধে। এই চাপানউতোরের মধ্যেই এ বার জরুরি অবস্থাকে টেনে বামেদের আক্রমণ করলেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি। যা শুনে সীতারাম ইয়েচুরি তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলেন ইতিহাস ও তাঁদের ছাত্রাবস্থার আন্দোলনের কথা।
বামেদের বিঁধে জেটলি বলেছেন, ‘‘সিপিআই জরুরি অবস্থার নির্লজ্জ সমর্থক ছিল। তাদের রাজনৈতিক লাইন ছিল, জরুরি অবস্থা আসলে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। সিপিএম তাত্ত্বিক ভাবে জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে থাকলেও সেই সময়ের লড়াইয়ে তারা সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেনি।’’ সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে জেটলির আরও মন্তব্য, ‘‘জরুরি অবস্থা থেকে পাওয়া শিক্ষা এটাই যে, আপনি যদি বাক্স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ করে শুধু ঢাক পেটানোকেই ছাড় দেন, তা হলে আপনিই সেই প্রচারের প্রথম বলি হবেন! কারণ, তখন আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন আপনার নিজের প্রচারটাই পূর্ণ সত্য!’’
জেটলির এমন আক্রমণের জবাবে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ‘‘ইতিহাসকে বিকৃত করাই ওঁদের পেশা!’’ ইয়েচুরি উল্লেখ করেছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সিপিএমের লড়াই ও তাদের শহিদদের কথা ইতিহাসেই আছে। ইতিহাসে আরও আছে জেল থেকে মুক্তি চেয়ে এবং ইন্দিরার বিশ দফা কর্মসূচিকে সমর্থন করে আরএসএস প্রধানের দু’টি ‘মুচলেকা-সমান চিঠি’র কথাও। আইনজীবী জেটলিকে ইয়েচুরি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আপনি এবং আমি সেই প্রজন্মের ছাত্র ছিলাম, যারা জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে এবং দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে লড়াই করেছিল। এখনও আমি সঙ্ঘ-বিজেপির সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধেই লড়াই করছি!’’ পুরনো বাম নেতাদের অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গেলে সেখানকার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ইয়েচুরি কী ভাবে তাঁর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
এই বিতর্কে কংগ্রেস বা বামেদের সরাসরি পক্ষ না নিয়েও তৃণমূল মোদী-অমিত শাহদের জমানাকে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ বলেই অভিহিত করেছে। দলের তরফে মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে দেখানো হয়েছে, কাশ্মীরের সাংবাদিকদের শুজাত বুখারির মতো পরিণতি হবে হুমকি দিচ্ছেন বিজেপি নেতা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র জন্য সিবিআইকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গেই তৃণমূল বলেছে, ‘জরুরি অবস্থার পরে সেই সরকারকে যেমন মানুষ ভোটে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন, সুপার ইমার্জেন্সির সরকারেরও সেই পরিণতি হবে।’’
এই একই সুরে আবার বাংলার তৃণমূল সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ইন্দিরার মতোই স্বৈরাচারী শাসন চালিয়ে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছেন মমতাদিদি। এখানকার শাসকের খুব দ্রুত ইন্দিরাজি’র মতোই পরিণতি হবে!’’ যার জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘জরুরি অবস্থা আছে বলেই তো যা খুশি বলতে পারছেন! প্ররোচনা ছাড়া কাজ নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy