Advertisement
২৯ মে ২০২৪
Kidnap

Mumbai Police: অবসরের পরেও হাল ছাড়েননি, ‘গার্ল নম্বর ১৬৬’-কে খুঁজে পেয়ে কেঁদে ফেললেন এএসআই

পূজাকে দেখার পর ভোঁসলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিলেন। চিৎকার করে বলেছিলেন, “মেরি পূজা মিল গয়ি! হ্যাপি…হ্যাপি ডে। ইটস আ হ্যাপি…হ্যাপি ডে।”

অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর (এএসআই) রাজেন্দ্র ধোন্ডু ভোঁসলে।

অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর (এএসআই) রাজেন্দ্র ধোন্ডু ভোঁসলে।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২২ ১১:২৫
Share: Save:

গার্ল নম্বর ১৬৬। অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর (এএসআই) রাজেন্দ্র ধোন্ডু ভোঁসলের চাকরিজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা এটি। ১৬৬-এই সংখ্যার খোঁজেই চাকরিজীবনের শেষ কয়েকটা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। বলা ভাল, এই সংখ্যাই ছিল তাঁর চাকরিজীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অবসরের পরেও তাঁকে এক মুহূর্তের জন্যও শান্তিতে ঘুমোতে দেয়নি এই সংখ্যা। তাই অবসরের পরেও চাকরিজীবনের সেই চ্যালেঞ্জকে সঙ্গে নিয়ে চলেছেন।

এই সংখ্যার পিছনে কী কাহিনি রয়েছে?

সাল ১৯৮০। মুম্বইয়ের ইয়েলো গেট থানায় বছর তেইশের এক যুবক চাকরি শুরু করলেন। ওই বছরেরই এক দিন সকালে ওই যুবকের কাছে তাঁর দিদির মৃত্যুর খবর আসে। পণের জন্য শ্বশুরবাড়িতে চাপ দেওয়া হত দিদিকে। তার পরই মৃত্যুর খবর আসে। নিজে পুলিশে কাজ করলেও দিদির পাশে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।

দিদির জন্য কিছু করতে না পারলেও সেই ঘটনার পর থেকে মহিলা সংক্রান্ত কোনও মামলা তাঁর হাত থেকে ফস্কায়নি। এক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে ভোঁসলে বলেছিলেন, “মহিলা সংক্রান্ত প্রতিটি মামলায় আমি নিজের দিদিকে দেখতে পাই।”

৫ অগস্ট, শুক্রবার তিনি খবর পেয়েছিলেন যে পূজাকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ছুটে গিয়েছিলেন তার কাছে। খবরটা সত্যি কি না যাচাই করতে। পূজাকে নিজের চোখে দেখার পর ভোঁসলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিলেন। চিৎকার করে বলেছিলেন, “মেরি পূজা মিল গয়ি! হ্যাপি…হ্যাপি ডে। ইটস আ হ্যাপি…হ্যাপি ডে।”

এই পূজাই হল ‘গার্ল নম্বর ১৬৬।’ পূজা গৌড়। পশ্চিম অন্ধেরির কিশোরী। সাল ২০০৮। ডি এন নগর থানায় দায়িত্ব পান ভোঁসলে। এই থানা থেকেই ২০১৫-য় অবসর নেন। এই সময়ের মধ্যে ওই থানা এলাকা থেকে ১৬৬টি মেয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। ভোঁসলে এবং তাঁর দল ১৬৫ জনকে উদ্ধার করতে পারলেও পূজার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই পূজাই ছিল তাঁর চাকরিজীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

২০১৩ সালে পূজা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। তখন তার সাত বছর বয়স। স্কুলে যাওয়ার পথে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল হ্যারি জোসেফ ডি’সুজা এবং তাঁর স্ত্রী সোনি। ওই দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন। তাই পূজাকে অপহরণ করেছিলেন। দু’বছর ধরে পূজার খোঁজ করেছিলেন ভোঁসলে। কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এ দিকে অবসরের দিনও এগিয়ে আসছিল তাঁর। তবে হাল ছাড়েননি ভোঁসলে। অবসর নেওয়ার পরেও নিজের সোর্স কাজে লাগিয়ে পূজার তল্লাশি জারি রেখেছিলেন। তাঁর দিদির ছবি ছাড়াও নিজের কাছে সব সময়ের জন্য পূজার ছবি রাখতেন ভোঁসলে। তাঁর জীবনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠেছিল পূজা।

শুক্রবার এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন ভোঁসলে। তখন তাঁর কাছে পূজার খবরটা আসে। এক মুহূর্ত দেরি করেননি তিনি। পূজাকে দেখার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন। পূজাকে দেখার পরই কান্নায় ভেঙে পড়েন। হবে না-ই বা কেন! তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ওই পূজাই, গার্ল নম্বর ১৬৬। পূজাকে খুঁজে পাওয়ার পর নিজের পার্স খুলে দিদির ছবির দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, “ঈশ্বর আমার প্রার্থনা শুনেছে। ওকে খুঁজে পাওয়ার যে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তা রাখতে পেরেছি।”

পুলিশ জানিয়েছে, ডি’সুজা দম্পতি পূজাকে অপহরণ করে কর্নাটকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ধরা পড়ার ভয়ে পূজাকে কর্নাটকের রায়চূড়ে একটি হস্টেলে রেখে দিয়ে আসেন ওই দম্পতি। ২০১৬-তে ওই দম্পতির সন্তান হওয়ায় পূজাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন সেই বাচ্চাটিকে দেখাশোনা করার জন্য। পূজাকে অপহরণের ঘটনার অনেক বছর কেটে গিয়েছে, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সেই মামলা ধামাচাপা পড়েছে, এমনটাই ভেবেছিলেন দম্পতি। আর সেই ভেবেই তাঁরা পূজা এবং তাঁদের সন্তানকে নিয়ে মুম্বইয়ে ফিরে আসেন। কাকতালীয় ভাবে, পূজার বাড়ি যে এলাকায়, সেই এলাকাতেই এসে বাড়ি ভাড়া নেন ডি’সুজা দম্পতি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ডি এন নগর থানার পুলিশ আধিকারিক মিলিন্দ কুর্দে জানান, ডি’সুজা দম্পতি ভেবেছিলেন যে, পূজাকে তার এলাকার কেউ চিনতে পারবে না। ডি’সুজা দম্পতির যখন সন্তান হয়, পূজাকে এক দিন বকার সময় বলেছিলেন যে, তাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছে। সেই কথাটা পূজার মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। সে-ও মরিয়া হয়ে উঠেছিল কী ভাবে তার আসল বাবা-মায়ের খোঁজ পাবে। ডি’সুজা দম্পতির বাড়িতে যে পরিচারিকা কাজ করতেন তাকে কথাটা জানিয়েছিল পূজা। তার কথা শুনে ওই পরিচারিকা গুগলে সার্চ করেন নিখোঁজ সংক্রান্ত বিষয়ে। তখনই সেখানে পূজা নামে এক কিশোরীর নাম দেখতে পান। এই পূজা, সেই পূজাই কি না, তা নিশ্চিত হতে একটি প্রিন্টআউট নিয়ে পূজাকে দেখান। তখন পূজা তাকে জানায়, এই ছবি তারই। তার পরই ওই পরিচারিকা গুগলে সার্চ করে পাওয়া সেই খবরে যে ফোন নম্বরগুলি ছিল সেগুলিতে ফোন করেন। দেখা যায়, চারটি ফোন নম্বরের কোনও অস্তিত্ব নেই। পঞ্চম ফোন নম্বরে ডায়াল করতেই এক জন তা রিসিভ করেন। তাঁকে জানানো হয়, যে পূজা নামে একটি মেয়েকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ঘটনাচক্রে সেই নম্বর ছিল পূজার কাকা রফিকের। তিনি বিষয়টি প্রথমে পাত্তা দেননি। পাল্টা বলেন, এমন অনেকেই তাঁকে মাঝেমধ্যে ফোন করে জ্বালাতন করেন। তবে পরিচারিকা বিষয়টি ছেড়ে দেননি। এক দিন ভিডিয়ো কলে পূজাকে তার বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করান। তাকে দেখতে পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন পূজার মা, কাকা। তার পরই তাঁরা ডিএন নগর থানায় খবর দেন। পুলিশ ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পূজাকে উদ্ধার করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kidnap Mumbai police ASI Girl No 166
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE