অসম বিধানসভায় পাশ হল ডাইনি হত্যা প্রতিরোধ আইন।
আজ বিধানসভায় আলোচনার পর বিলটি গৃহীত হয়। তাতে ডাইনি অপবাদ দিলে অভিযুক্তকে ৩ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে। ডাইনি অপবাদে কাউকে অত্যাচার করা হলে ৫ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড ও এক থেকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ডাইনি বলে অপবাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে জনতা জড়িত থাকলে সকলের কাছ থেকে ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের বিধান থাকছে। ডাইনি অপবাদে খুন করার অভিযোগে ৩০২ ধারায় বিচার হবে। ডাইনি হিসেবে চিহ্নিত করায় কেউ আত্মহত্যা করলে প্ররোচনার দায়ে ৭ বছর থেকে যাবজ্জীবন সাজা ও এক থেকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে। তদন্তে গাফিলতি হলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ হবে ১০ হাজার টাকা।
রাজ্য সরকারের দাবি, অসমের এই আইন বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রের চেয়েও কড়া হবে। উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগে ঝাড়খণ্ডের রাঁচির মাণ্ডরে ডাইনি অপবাদে পাঁচ মহিলাকে পিটিয়ে খুন করা হয়। অন্য রাজ্যগুলির প্রত্যন্ত গ্রামে মাঝেমধ্যেই ডাইনি অপবাদে অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে।
অসমে পাশ হওয়া আইনে ডাইনি অপবাদে অত্যাচার চালানো, একঘরে করা বা হত্যার ঘটনায় তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন সাজার সুপারিশ থাকছে। সেই সঙ্গে ‘প্রিভেনশন অব অ্যান্ড প্রোটেকশন ফ্রম উইচ হান্টিং বিল ২০১৫’ আইনে হাতুড়ে চিকিৎসকদের বেআইনি অনুশীলন ও সালিশি সভা বন্ধেরও কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে ডাইনি অপবাদে একঘরে হওয়া, জখম হওয়া, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মহিলা বা পুরুষকে ক্ষতিপূরণ এবং ডাইনি-শিকারের বলি হওয়া পরিবারের অনাথ শিশুদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করা হবে।
রাজ্যে গত ৫ বছরে ডাইনি অপবাদে প্রায় ৭০ জনকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনা বেশি ঘটেছে শোণিতপুর, লখিমপুর, মাজুলি, বড়ো ও সাঁওতাল অধ্যূষিত জেলাগুলিতে। পুলিশ তদন্ত চালিয়ে দেখেছে, অনেক ঘটনার পিছনেই রয়েছে জমি বিবাদ বা ব্যক্তিগত শত্রুতা। রাজ্য পুলিশ ডাইনি হত্যা রোধে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছিল। পাশাপাশি বীরুবালা রাভা ও দিব্যজ্যোতি শইকিয়া ডাইনি হত্যা রোধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। কিন্তু, তার পরও এই সব ঘটনা আটকানো যাচ্ছিল না।
দিব্যজ্যোতিবাবু জানান, প্রায় ছ’বছর ধরে তাঁরা ডাইনি হত্যা রোধে কড়া আইনের জন্য সুপারিশ করছিলেন। অসম সরকার বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে খসড়া বিল তৈরি করে। মন্ত্রিসভা তাতে সম্মতি দেয়। তিনি বলেন, ‘‘ছ’বছরের চেষ্টায় বিল পাশ হওয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু, ওঝাদের রমরমা বন্ধ করতে কোনও দল মুখ খুলল না। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা ৩০ অগস্ট থেকে দু’মাস ব্যাপী জনজাগরণ অভিযান শুরু করব।’’ রাজ্য সরকারের হিসেবে, ২০১১ সালে ২৯ জন, ২০১২ সালে ১১ জন, ২০১৩ সালে ১৬ জন ও ২০১৪ সালে ডাইনি অপবাদে ৯ জনকে খুন করা হয়। এ বছর এখনও পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৭।
এ দিন বিধানসভায় এআইইউডিএফ বিধায়ক আবদুল রহিম খান জরিমানার টাকা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। অগপ বিধায়ক কেশব মহন্ত বলেন, ‘‘শাস্তি দিয়ে ডাইনি-হত্যার রাশ টানা যাবে না। স্কুলে স্কুলে অন্ধবিশ্বাস রোধে সচেতনতা শিবির ও এই বিষয়টি পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।’’
ডাইনি হত্যা রোধে বিল ছাড়াও এ দিন অসম কৃষিজমি নিয়ন্ত্রণ-পুনর্মূল্যায়ণ-হস্তান্তর সংক্রান্ত বিল পেশ করা হয়। পাশাপাশি অসম ভ্যাট আইন, অসম কৃষি আইন, অসম মোটর ভেহিক্যালস কর আইন, কটন কলেজ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় আইন এবং অসম স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামো ও বিকাশ তহবিল সংক্রান্ত আইনের সংশোধনী বিলও বিধানসভায় পেশ হয়। সবকটি বিলই গৃহীত হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy