অসমের চিকিৎসক ধনীরাম।
গ্লাসগো থেকে এফআরসিএস করা অসমের ধনীরাম বরুয়া যে কাজ করে ৪০ দিন হাজতবাস করেছেন, ২৫ বছর পরে সেই পথে হেঁটেই বিশ্বজোড়া সুখ্যাতি কুড়োচ্ছেন বাল্টিমোরের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিকেল স্কুলের চিকিৎসক বার্টলে গ্রিফিথ। দাবি করা হচ্ছে, ইতিহাসে ‘প্রথম বার’ মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা হল শূকরের হৃৎপিণ্ড। অনুল্লেখিত থাকছে ১৯৯৭ সালে ধনীরামের করা অস্ত্রোপচারের আখ্যান। যে দিন সত্যিই ইতিহাসে প্রথম বার শূকরের হৃৎপিণ্ড মানবদেহে বসানোর কাজটি করেছিলেন গুয়াহাটির এই চিকিৎসক।
যদিও আমেরিকায় হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপন হয়েছে সে দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এইউডিএ-র অনুমতি নিয়ে। অন্য প্রাণীর অঙ্গের প্রত্যাখ্যান এড়াতে দাতা শূকরের জিনে যেমন ১০টি বদল করা হয়েছে, তেমন কিছু তখন করা হয়েছিল কি না, সে তথ্য অজানা। কারণ, ধনীরাম পুরোটাই করেছিলেন গোপনে। এবং সেই কাজের জন্য অনুমতিও নেননি তিনি।
২০১৬ সালে স্ট্রোকের পরে মস্তিষ্কে হওয়া অস্ত্রোপচারে বাকশক্তি কার্যত লোপ পেয়েছে ধনীরামের। তাঁর যে পদক্ষেপকে ‘পাগলামি’ ও ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক গুরুতর ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল, সেই পথে হেঁটেই আমেরিকার চিকিৎসকেরা স্বীকৃতি পাওয়ায় ঘনিষ্ঠ জনদের কাছে আনন্দও প্রকাশ করেছেন তিনি।
৭২ বছরের ধনীরাম তখন ৪৭ বছরের গবেষক-চিকিৎসক। ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এর প্রাক্তনী। কাজ চালাচ্ছিলের কৃত্রিম হৃদ্যন্ত্র ও অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন নিয়ে। ১৯৯৬ সালে ধনীরাম খোঁজ পান ভেন্টিলেশনে থাকা ৩২ বছরের পূর্ণ শইকিয়ার। নিশ্চিত মৃত্যুর পথে পা বাড়ানো শইকিয়ার পরিবারের অনুমতি নিয়েই চলে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি। গুয়াহাটিতে ডেকে নেন হংকংয়ের হৃদ্যন্ত্র বিশেষজ্ঞ ও শল্য চিকিৎসক জোনাথন হো কে। ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি ১৫ ঘণ্টা ধরে গোপন অস্ত্রোপচারে শূকরের হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের অংশ বসানো হয় পূর্ণ শইকিয়ার দেহে। কিন্তু পূর্ণর শরীরে দেখা দেয় ‘হাইপার অ্যাকিউট রিজেকশন’। সাত দিনের মাথায় তিনি মারা যান।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে সরকার তদন্তের নির্দেশ দেয়। পূর্ণর দেহ বাজেয়াপ্ত করা হয়। ধনীরাম ও জোনাথনকে ১০ জানুয়ারি গ্রেফতার করে পুলিশ। ৪০ দিন হাজতবাসের পর ধনীরাম বেরিয়ে দেখেন সোনাপুরে তাঁর হার্ট ইনস্টিটিউট ও রিসার্চ সেন্টার কারা পুড়িয়ে দিয়েছে। তাঁকে উন্মাদ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। সকলের আড়ালে চলে যান তিনি। কিন্তু গবেষণা থামাননি। সোনাপুরের গবেষণাকেন্দ্র ফের গড়ে তোলেন। ২০০৭ সালে তিনি ওষধি গাছ থেকে ‘বরুয়া আলফা ডিএট২’ ও ‘বরুয়া বিটা ডিএচ২’ আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করে দাবি করেন, এই দুই ‘ম্যাজিক মলিকিউল’ ব্যবহার করলে বাইপাস অস্ত্রোপচারে ব্যথার বোধই থাকবে না!
২০০৯ সালে তাঁর গবেষণাকেন্দ্রের কাছে যোগদলে একটি পরিবারকে হত্যা করা হয়। পরিবারের দু’জনের কাটা মুণ্ড সেন্টারের পাশেই উদ্ধার হওয়ায় গ্রামবাসীরা হামলা চালান। দাবি করা হয়, ধনীরাম মানব দেহাংশ সংগ্রহ করতে এই কাজ করিয়েছেন। ২০১১ সালে তিনি এডসের ওষুধ আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু বিতর্কিত অতীতের জেরে সেই দাবিতেও আমল দেননি কেউ। ২০১৫ সালে তিনি ফের ঘোষণা করেন তাঁর ওষুধ প্রায় ১০০ জন রোগীকে সুস্থ করেছে। পরের বছরই তাঁর স্ট্রোক হয়। এত দিন পরে আনন্দিত তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy