Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

চাকরির আকালেই হার, মানছে সিপিএম

সিপিএম মানছে, তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের চাহিদা পূরণ করে ওঠা যায়নি এবং দল বেঁধে ওই প্রজন্ম সাড়া দিয়েছে বিজেপির ‘চলো পাল্টাই’ স্লোগানে।

নয়া দায়িত্ব: বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার।

নয়া দায়িত্ব: বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৭
Share: Save:

বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল, প্রতি ঘরে চাকরি। বাস্তবে তেমন ঘটুক বা না ঘটুক, তরুণ প্রজন্ম আস্থা রেখেছে ওই আশ্বাসে। যুব প্রজন্মের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারাই তাদের এ বারের বিপর্যয়ের মূল কারণ বলে মেনে নিচ্ছে ত্রিপুরা সিপিএম।

বিপর্যয়ের ময়না তদন্তে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের প্রথমিক রিপোর্ট উল্লেখ করেছে, কংগ্রেসের ভোট ঝুলিশুদ্ধ বিজেপি-তে যাওয়া, আইপিএফটি-র সঙ্গে বিজেপির জোট এবং পৃথক রাজ্যের ভাবাবেগ ভোটের ফলে প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু মূল কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে কর্মসংস্থানের করুণ চিত্রকেই। বুনিয়াদি শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য, সঙ্গতিহীন মানুষের জন্য বাসস্থানের জমি, ভূমিহীনের জন্য জমির পাট্টা— দীর্ঘ সময় রাজ্যপাট চালাতে গিয়ে এ সব ব্যবস্থাই করেছিল ত্রিপুরার বাম সরকার। কিন্তু সিপিএম মানছে, তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের চাহিদা পূরণ করে ওঠা যায়নি এবং দল বেঁধে ওই প্রজন্ম সাড়া দিয়েছে বিজেপির ‘চলো পাল্টাই’ স্লোগানে।

দিল্লিতে আজ, শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের পলিটব্যুরোর দু’দিনের বৈঠক। ত্রিপুরায় গিয়ে স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বসে হারের কারণ নিয়ে কাটাছেঁড়া করেছেন। সেই আলোচনার ভিত্তিতেই ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করেছে। যে রিপোর্ট দিল্লির বৈঠকে গিয়ে পেশ করার কথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের।

ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরায় মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২৫ লক্ষ ৭৩ হাজার। তার মধ্যে প্রায় এক লক্ষ নাম প্রথম বার ভোটার তালিকায় উঠেছিল। সিপিএমের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘‘বাংলা বা কেরলের মতো ত্রিপুরাতেও আমরা সাধারণ মানুষের জীবনের মানোন্নয়নের চেষ্টা করেছি। শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য, জমির অধিকারে জোর দিয়েছি। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম চাকরি চায়। বেসরকারি বিনিয়োগ যেখানে প্রায় নেই, সেখানে অত কর্মসংস্থান আমরা করব কোথায়?’’ বিপর্যয়ের প্রাথমিক বিশ্লেষণ আরও বলছে, রাজ্যে ১৮ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বয়সের ভোটারেরা বাম সরকার ছাড়া অন্য কিছু দেখেনইনি! চাকরির প্রত্যাশায় তাঁরা আরও বেশি করে বিকল্প সরকার দেখতে চেয়েছেন।

আরও পড়ুন: হারের দায় কার, দু’পক্ষই কাঠগড়ায়

চড়িলাম কেন্দ্রে বৃহস্পতিবারের ঘোষিত ফল বাদ দিলে এ বার ত্রিপুরায় বিজেপি একক ভাবে পেয়েছে ৯, ৯৯, ০৯৩টি ভোট। সিপিএমের প্রাপ্তি সেখানে ৯,৯২,৫৭৫ ভোট। অর্থাৎ ফারাক মাত্র সাড়ে ৬ হাজার ভোটের! তবু আসনের নিরিখে বিজেপি ৩৫, সিপিএম ১৬। বাম ভোটে ৭% ক্ষয়ে উদ্বিগ্ন হলেও থেকে যাওয়া প্রায় ৪৫% জনসমর্থনে ভরসা রেখে বিরোধী ভূমিকায় সক্রিয় হতে চাইছে সিপিএম। যে লক্ষ্যে মানিকবাবুকে বিরোধী দলনেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাদল চৌধুরীকে উপ-দলনেতা বাছা হয়েছে।

বিপর্যয়েও ত্রিপুরার পাশে দাঁড়িয়ে ইয়েচুরি বলছেন, ‘‘কর্মসংস্থান উত্তর-পূর্বের সব রাজ্যেরই সমস্যা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ছিল আগে। এখন সে সব কোথায়? রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে যাতে বিনিয়োগ হয়, সেটা কেন্দ্রীয় সরকারকে দেখতে হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE