ভাটিণ্ডার ‘স্মার্ট স্কুল’। ছবি: সংগৃহীত।
মহা সমারোহে চালু হয়েছিল ‘স্মার্ট স্কুল’। রঙিন ঝলমলে টেবিল-চেয়ার, প্রজেক্টর মেশিন, পড়াশোনার অন্য সরঞ্জাম— সবই রয়েছে। এমনকি, অত্যাধুনিক লাইব্রেরিও রয়েছে। আছে মিড ডে মিলের ব্যবস্থাও। তবু নেই ছাত্রছাত্রী। এক জন মাত্র পড়ুয়া, কিন্তু তা বলে স্কুল তো আর বন্ধ করে দেওয়া যায় না! পড়ুয়া কিংবা শিক্ষিকা, কারওরই উৎসাহের কোনও কমতি নেই। তাই সবেধন নীলমণি একটি ছাত্রকে নিয়েই রমরমিয়ে চলছে পাঞ্জাবের ভাটিণ্ডার প্রত্যন্ত গ্রাম কোঠে বুধ সিংহের সরকারি স্মার্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়।
লোয়ার কেজি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা করার পরিকাঠামো রয়েছে স্কুলটিতে। বিদ্যালয়ের ঘরের দেওয়ালে শিশুদের উপযোগী করে আঁকা হয়েছে রঙিন ছবি। খেলাধুলার সরঞ্জাম এবং আসবাবপত্রও রয়েছে। সেখানেই পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে ভিন্দর সিংহ। সে-ই এই স্কুলের একমাত্র পড়ুয়া। তার জন্য রোজ নিয়ম করে যথাসময়ে স্কুলে আসেন স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকা সর্বজিৎ সিংহ। আসেন মিড ডে মিলের রাঁধুনিও। ভিন্দরের জন্য সরকারি বরাদ্দ কাঁচামাল দিয়ে রান্না হয়। তার খাওয়ার ব্যবস্থা করা থেকে পড়ানো, সবটাই একা হাতে সামাল দেন সর্বজিৎ।
কিন্তু কেন এই অবস্থা স্কুলের? সর্বজিৎ জানিয়েছেন, আগে স্কুলে ২০ জনের বেশি পড়ুয়া ছিল, কিন্তু তারা সবাই অন্য স্কুলে চলে গিয়েছে। সূত্রের খবর, গ্রামের জনসংখ্যা ৪২৫। তাঁদের মধ্যে নথিভুক্ত ভোটদাতা রয়েছেন ৩০০ জন। গ্রামে প্রায় ৮০টি পরিবার রয়েছে, যে সব পরিবারের সকলেই তুলনামূলক ভাবে সচ্ছল। তাঁরা বাড়ির বাচ্চাদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করেছে।
সর্বজিৎ জানিয়েছেন, প্রায় ন’মাস আগে তিনি এই স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন। তখন তিন জন ছাত্র ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু ভিন্দর ছাড়া বাকিরা খাতায়কলমে স্কুলের পড়ুয়া হলেও কেউই স্কুলে আসত না। সেই কারণে অন্য দুই ছাত্রের নাম কেটে দিতে হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম প্রথম অবাক লাগলেও এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।’’
স্কুলের জন্য পড়ুয়া জোগাড় করতে কার্যত গ্রামবাসীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন সর্বজিৎ। পঞ্চায়েতের কাছেও দরবার করেছিলেন, যাতে এই সরকারি স্কুলে আরও ছাত্র ভর্তি করানো হয়। কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি। ক’দিন পর পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করলে প্রাথমিকের পড়াশোনার পাট চুকবে ভিন্দরেরও। তার পর কী ভাবে স্কুল চলবে, সেটাই এখন চিন্তার কারণ শিক্ষিকা সর্বজিতের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy