Advertisement
২০ মে ২০২৪

চিন সাগর নিয়ে প্যাঁচে বেজিং, সতর্ক দিল্লি

সাগর দখলের যুদ্ধে যথেষ্ট বেকায়দায় পড়ে গেল বেজিং। দক্ষিণ চিন সাগরের জলসীমা ও তার সম্পদের উপরে বেজিংয়ের কোনও ঐতিহাসিক অধিকার নেই বলে জানিয়ে দিল দ্য হেগ-এ রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল।

দক্ষিণ চিন সাগরে টহল চিনা নৌবাহিনীর। —ফাইল চিত্র।

দক্ষিণ চিন সাগরে টহল চিনা নৌবাহিনীর। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৪
Share: Save:

সাগর দখলের যুদ্ধে যথেষ্ট বেকায়দায় পড়ে গেল বেজিং। দক্ষিণ চিন সাগরের জলসীমা ও তার সম্পদের উপরে বেজিংয়ের কোনও ঐতিহাসিক অধিকার নেই বলে জানিয়ে দিল দ্য হেগ-এ রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল। এই পরিস্থিতিকে ভারত পরে কূটনৈতিক ভাবে কাজে লাগাতে পারবে বলেই আশা সাউথ ব্লকের। তাই আপাতত সতর্ক হয়ে এগোতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিংয়ের কার্যকলাপ নিয়ে ক্ষুব্ধ আমেরিকা, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনামের মতো দেশ। ওই এলাকা নিজেদের দখলে রাখতে বেশ কয়েকটি কৃত্রিম দ্বীপও তৈরি করেছে চিন। আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে স্বীকৃত এই এলাকায় চিনের খবরদারিতে ভারতের স্বার্থেও আঘাত লেগেছে। ফলে আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে দক্ষিণ চিন সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল ভারত।

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে চিনের বিরুদ্ধে মামলা করে ফিলিপিন্স। তাদের অভিযোগ ছিল, রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশন অনুযায়ী, কোনও দেশ তার মূল ভূখণ্ড লাগোয়া সমুদ্রের ১২ নটিক্যাল মাইল এবং তার পর সর্বোচ্চ ২০০ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রকে নিজের অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারে। অথচ চিন প্রায় ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরের এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করছে।

এ দিন আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, চিনের ঐতিহাসিক অধিকারের কোনও আইনি ভিত্তি নেই। বরং কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করতে গিয়ে প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি করেছে চিন। বেশ কিছু বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীও যথেচ্ছ ভাবে ধরেছেন চিনা ধীবররা। প্রত্যাশিত ভাবেই রায় নিয়ে উচ্ছ্বসিত ফিলিপিন্স ও আমেরিকা। মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র জন কার্বি বলেছেন, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। চিন এবং ফিলিপিন্স, উভয়েই তা মেনে চলতে বাধ্য। আমরা চাই আইনের শাসন। শান্তিপূর্ণ পথেই সংঘাতের অবসান হোক।’’

যদিও কূটনীতিকরা মেনে নিচ্ছেন, বেজিংকে এই রায় মানতে বাধ্য করানোর মতো কোনও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নেই। চিন মামলায় অংশ নেয়নি। আজ তারা জানিয়ে
দিয়েছে, এই রায় বেজিং মানবে না। সে দেশের যুদ্ধজাহাজ দক্ষিণ চিন সাগরে সক্রিয় থাকবে।

সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, প্রকাশ্যে এই রায়কে চিন উড়িয়ে দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এই রায়ে মুখ পুড়েছে চিনা সরকারের। এমন ঘটনা হতে পারে বুঝেই চিন ভারতকে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ভারতের স্বার্থ জড়িত রয়েছে এমন কিছু বিষয়ের ফয়সালা এখন চিনের মত ছাড়া সম্ভব নয়। দক্ষিণ চিন সাগর বিতর্কে ভারত আমেরিকার সঙ্গ ছাড়লে চিন সেই বিষয়গুলি বিবেচনা করে দেখবে বলেও ওই বার্তায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি পরমাণু জ্বালানি সরবরাহকারী গোষ্ঠীতে (এনএসজি) ভারতের ঢোকার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল চিন। সাউথ ব্লক সূত্রের মতে, দক্ষিণ চিন সাগরের বদলে ওই বিষয়টি নিয়েই দর কষাকষি করতে চেয়েছিল বেজিং।

সূত্রের খবর, এ দিনের রায়ের পর এখন একই বিষয় নিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে পাল্টা দর কষাকষি করতে চায় দিল্লি। আগে তাই চিনের মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করবে তারা। এবং সেই কারণেই প্রকাশ্যে এ নিয়ে ‘ধীরে চলো’ কৌশল নেওয়া হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক শুধু বলেছে, আন্তর্জাতিক আইন মেনে জল ও আকাশপথে অবাধ যোগাযোগ ও বাণিজ্যকে সমর্থন করে দিল্লি। তাই সব দেশ যেন কনভেনশনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং পরিস্থিতি জটিল হওয়ার মতো কোনও পদক্ষেপ না করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Beijing South china sea
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE