Advertisement
১৮ জুন ২০২৪
Bilkis Bano

‘আমরা নির্দোষ, হিন্দুরা এমনটা করে না’, দাবি করলেন স্বাভাবিক জীবনে ফেরা বিলকিসের এক ধর্ষক

গুজরাতের দাহোদ জেলার রন্ধিকপুর গ্রামে বিলকিসের দোষীদের বাড়ি রয়েছে। যেখানে চার হাজার মানুষের বসবাস। তবে ২০০২ সালের সেই ঘটনার পর ওই গ্রামে আর পা রাখেননি বিলকিস।

বিলকিস বানো।

বিলকিস বানো। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
আমদাবাদ শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২২ ০৯:১০
Share: Save:

২০০২ সালের সেই রাতের বিভীষিকাময় ঘটনার পর থেকেই নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে গিয়েছেন বিলকিস বানো। তাঁর বাড়ি এখন আস্ত একটা দোকান। যেখানে বিক্রি হয় পোশাক। আর সেই বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার ডান দিকে দীপাবলি উপলক্ষে বাজির পসরা সাজানো রয়েছে। সেই দোকানটি রাধেশ্যাম শাহের। বিলকিসকে ধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুনে যে ১১ জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে এক জন রাধেশ্যাম। জেলে ‘ভাল আচরণের’ জন্য গত স্বাধীনতা দিবসে রাধেশ্যাম-সহ ১১ জন দোষীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। অতীত ভুলে তাঁরা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন।

গুজরাতের দাহোদ জেলার রন্ধিকপুর গ্রামে বিলকিসের দোষীদের বাড়ি রয়েছে। যেখানে চার হাজার মানুষের বসবাস। তবে ২০০২ সালের সেই ঘটনার পর ওই গ্রামে আর পা রাখেননি বিলকিস। দোষীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। এনডিটিভিকে গোবিন্দ নাই যেমন বললেন, ‘‘আমরা নির্দোষ। কখনও দেখেছেন কাকা ও ভাইপো একে অপরের সামনে কাউকে ধর্ষণ করছে? হিন্দু সমাজে এমনটা হয় কখনও? না, হিন্দুরা এমনটা করে না।’’

বিলকিস মামলায় ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ায় দুই ব্যক্তিকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল গোবিন্দের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন এড়িয়েছেন তিনি। এই মামলা নিয়ে মুখে রা কাটেননি তাঁর বাবাও।

২০২০ সালের ৩ মার্চ ২১ বছর বয়সি বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। সে সময় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বিলকিস। তাঁর তিন বছরের শিশুকন্যা-সহ ১৪ জনকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনা ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। ঘটনার পর আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে চলে যান বিলকিস। এনডিটিভি সূত্রে খবর, বাড়িটি এক হিন্দু মহিলাকে ভাড়া দেন বিলকিসের পরিবার। সেখানেই পোশাকের দোকান করা হয়েছে এখন।

বিলকিসের বাড়ির সামনে একটি বহুতল রয়েছে। সেখানেই থাকেন রাধেশ্যাম শাহ। যদিও তাঁর ভাই আশিস শাহ দাবি করেছেন, সেখানে আর রাধেশ্যাম থাকেন না। বাজির পসরা সাজিয়ে দোকান করেছেন আশিস। বিলকিস মামলায় প্যারোলে থাকাকালীন এক মহিলাকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল রাধেশ্যাম, আশিস এবং আরও এক দোষীর বিরুদ্ধে। এফআইআরেও তাঁদের নাম ছিল। যদিও এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আশিস।

রাজুভাই সোনি নামে আরও এক দোষীও স্বাভাবিক জীবন শুরু করেছেন। তাঁর গয়নার দোকান রয়েছে। এনডিটিভি সূত্রে খবর, সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখেই দোকান থেকে পালান রাজুভাই।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ অগস্ট বিলকিসের ১১ ধর্ষককে মুক্তি দেওয়া হয়। ঘটনাচক্রে ওই একই দিনে স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লালকেল্লা থেকে নারী ক্ষমতায়নের পক্ষে সওয়াল করেন। দোষীরা ছাড়া পাওয়ার পর বিলকিস গুজরাত সরকারের কাছে ‘ভয়মুক্ত হয়ে শান্তিতে বাঁচার’ আর্জি জানিয়েছিলেন। বিলকিসের স্বামী বলেছিলেন, তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। সারা দেশেই বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়। কেন ১১ দোষীকে মুক্তি দেওয়া হল, এ নিয়ে সরব হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

সম্প্রতি বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার প্রসঙ্গে শীর্ষ আদালতে গুজরাত সরকার জানায় যে, তাঁরা জেলে ভাল আচরণ করেছেন। সে কারণেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bilkis Bano national news
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE