শ্রীলঙ্কার জনপ্রিয় গানের সুরে ত্রিপুরা ভোটের ‘থিম সং’ বিজেপির। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গত সপ্তাহেই ভোটের ইস্তাহার প্রকাশ করেছে তৃণমূল। এ বার ইস্তাহার প্রকাশ করল বিজেপিও। পদ্ম-পরিভাষায় ‘সংকল্প পত্র’। ইস্তাহারের পাশাপাশি প্রকাশ করা হয়েছে সমাজমাধ্যমে প্রবল জনপ্রিয় গানের সুরের আদলে ভোটের ‘থিম সং’ও। গেরুয়া শিবিরের সংকল্প পত্রে একাধিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। গৈরিক সেই প্রতিশ্রুতির মধ্যে অনেকেই বাংলার ছায়া দেখছেন।
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ভোট ত্রিপুরায়। ফলঘোষণা ২ মার্চ। তার আগে সব পক্ষই ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রচারে। আগরতলা গিয়ে সভা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ইস্তাহারে একাধিক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি মমতা জানিয়েছিলেন, ত্রিপুরার মানুষ ভোটে জেতালে বাংলার মতোই উন্নয়নের রথ ছুটবে বাংলাভাষী ওই রাজ্যে। সেই আবহে নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করল ক্ষমতাসীন বিজেপি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, ক্ষমতা ধরে রাখতে সেই ইস্তাহারে যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তার অনেকগুলিতেই বাংলার ছোঁয়া খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
‘সংকল্প পত্র’-এর প্রথম প্রতিশ্রুতি ‘বালিকা সমৃদ্ধি স্কিম’। বলা হয়েছে, এই প্রকল্পে আর্থিক ভাবে দুর্বল পরিবারে জন্মানো কন্যাসন্তানের জন্য ৫০ হাজার টাকার একটি বন্ড দেওয়া হবে। ঘটনাচক্রে, বাংলায় তৃণমূল সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে এর অনেক মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। যদিও বাংলায় বন্ডের ব্যাপার নেই।
বিজেপির ‘সংকল্প পত্র’-এ দাবি করা হয়েছে, ৫ টাকা প্রতি প্লেটের হিসাবে রাজ্যে তিন বার রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হবে। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে অনুকূলচন্দ্র ক্যান্টিন। ঠিক একই রকম প্রকল্প রয়েছে বাংলাতেও। যার নাম, ‘মা ক্যান্টিন’।
এ ছাড়া বিজেপি ত্রিপুরায় ভোটে জিতে ফিরে এলে ৫০ হাজার মেধাবী কলেজ পড়ুয়াকে স্মার্টফোন দেবে বলে ইস্তাহারে লিখেছে। বাংলাতেও নবম এবং একাদশের পড়ুয়াদের স্মার্টফোন কেনার টাকা সরাসরি অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
এখানেই শেষ নয়। মিল আরও আছে। ভোটের প্রচার করতে ‘থিম সং’ প্রকাশ করা ইদানীং দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই। বিশেষ করে বাংলায় ২০২১-এর ভোটের আগে নিয়ম করে গানের ছড়াছড়ি দেখা গিয়েছিল। বাম থেকে ডান, তৃণমূল থেকে বিজেপি— সকলেই একাধিক ‘থিম সং’য়ে বাজার মাত করতে চেষ্টার কসুর করেনি। একই চিত্র ত্রিপুরাতেও। এখানেও ভোটের আগে গান প্রকাশ করেছে বিজেপি। ঘটনাচক্রে, এ ক্ষেত্রেও বাংলার ‘অনুকরণ’ দেখতে পাচ্ছে তৃণমূল।
শ্রীলঙ্কার তুমুল জনপ্রিয় ইউটিউবার ইওহানির মায়াবী কণ্ঠে ‘মানিকে মাগে হিথে’ নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা উপমহাদেশকে। সে গানের সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। ত্রিপুরায় ভোট বৈতরণী পেরোতে সেই সুরের তালে তালেই আস্ত একখানা গান বেঁধে ফেলেছে গেরুয়া শিবিরও। গমগম করে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাকে পুনর্নির্বাচিত করার আবেদন বাজছে ‘মানিকে মাগে হিথে’র আদলে। ঘটনাচক্রে, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলও ব্যবহার করেছিল এই গানটিকেই। হিট গানটির সুরে ‘মা-মাটি-মানুষ হিতে’ নামে বাংলা গানটিও ভাল জনপ্রিয়তা পায়। তার পাল্টা হিসাবে ‘মানি হেইস্ট’-এর সুরের অনুকরণে গান বেঁধেছিল বঙ্গের পদ্ম শিবির। সেই গানও জনপ্রিয় হয়। কিন্তু বাংলা পেরিয়ে ত্রিপুরার ভোটে তৃণমূলের দেখানো পথেই হেঁটে লঙ্কার সুর আমদানি করল বিজেপি। ইস্তাহারেও বাংলারই ছোঁয়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। যদিও বাংলার মতো লক্ষীর ভান্ডার, দুয়ারে সরকারের মতো কোনও প্রকল্পের ঘোষণা নেই বিজেপির সংকল্প পত্রে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy