হরিশ নানজাপ্পা রক্তে ভিজে গিয়েছে রাস্তা। যন্ত্রণায় ছটফট করছেন বছর তেইশের যুবক। ট্রাকের ধাক্কায় তাঁর শরীর থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে নিম্নাংশ। একটু দূরেই পড়ে রয়েছে কাটা পা দু’টো।
মঙ্গলবার টুমকুরু-বেঙ্গালুরু রোডের ঘটনা। ঘটনার বীভৎসতায় চমকে যান পথচলতি লোকজন। দেরিতে হলেও হরিশ নানজাপ্পাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন কিছু লোক। তবে চমকের তখনও বাকি ছিল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে হরিশ তাঁদের বললেন, ‘অঙ্গদান করে যেতে চাই আমি’!
দু’খণ্ড হয়ে গিয়েছে দেহ। মৃত্যু নিশ্চিত। এ হেন শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় হরিশের এই ইচ্ছা প্রকাশে স্বাভাবিক ভাবেই বিস্মিত হয়ে যান উদ্ধারকারীরা। মা-বাবা-প্রিয়জনের কথা নয়, বরং শেষ সময়টুকু ওই যুবক কি না বারবার করে অনুরোধ করে যাচ্ছেন, তাঁর অঙ্গ যেন সংরক্ষণ করা হয় এবং কোনও দুঃস্থ রোগীকে দান করা হয়।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মিনিট কয়েকের মধ্যেই মৃত্যু হয় হরিশের। তাঁর ইচ্ছের কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাতে ভোলেননি সেই পথচারীরা। হরিশের চোখ দান করা হয়েছে। পরে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক ভুজঙ্গ শেট্টি বলেন, ‘‘হরিশের চোখ সংগ্রহ করা হয়েছে। অবিশ্বাস্য, একটা লোক ওই অবস্থায় এ ভাবে ভাবতে পেরেছেন। এমন
ঘটনা শোনা যায় না। উনি হেলমেট পরে ছিলেন। তাই মাথায় কোনও আঘাত লাগেনি...।’’
ঠিক কী ঘটেছিল মঙ্গলবার?
টুমকুরুর গুব্বিতে পঞ্চায়েত ভোট চলছে। ভোট দিতে বাড়ি গিয়েছিলেন হরিশ। বেঙ্গালুরু ফেরার পথেই দুর্ঘটনা। এনএইচ৪-এ চিনির বস্তাভর্তি একটি ট্রাক পিছন থেকে এসে হরিশের মোটরবাইক কাটিয়ে এগোতে যায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে মোটরবাইকে। হরিশ ছিটকে গিয়ে পড়েন ট্রাকের তলায়। তার উপর দিয়ে চলে যায় ট্রাক, দেহটাকে দু’টুকরো করে দিয়ে। কয়েক মিনিট ও ভাবেই রাস্তায় পড়েছিলেন তিনি। সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু ব্যস্ত সড়কে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে গাড়ি। কিছু লোককে আবার দেখা যায় মোবাইলে ভিডিও করতে। শেষমেশ অবশ্য পথচলতি কিছু লোকজনই খবর দেয় পুলিশে। অ্যাম্বুল্যান্স
ডাকে তারাই।
ডিএসপি রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘খবর যাওয়ার ৭-৮ মিনিটের মধ্যেই দু’টো অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়েও যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছনোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যান হরিশ।’’ গ্রেফতার করা হয়েছে ওই ট্রাক চালককে। তাঁর বিরুদ্ধে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy