অচ্ছে দিন সুদূর না নিকটে—দোলাচলটা রয়েছে।
তবে সুপবন বহিতেছে!
পুণে-মুম্বইয়ের বিভিন্ন মলের ঝকঝকে দোকানে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে—‘‘আমাকে একটা লেক লুইজি দিন তো’’। দোকানের সুদৃশ্য র্যাক থেকে চাহিদা মতো নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ‘হিমালয়-বাতাসের’ হাফ লিটারের ক্যান।
সে বাতাস কিঞ্চিৎ সেবন করলে নাকি প্রাণের আরাম, ফুসফুসের শান্তি। রুপোলি ‘টিনড্ এয়ার’-এর গায়ে ঝলমল করছে পাক্কা গ্যারান্টি।
চেরাপুঞ্জি থেকে গোবি-সাহারার বুকে মেঘ পাঠানোর কথা ভেবেছিলেন কবি। অতটা না হলেও, আপাতত বিলেতের হাওয়া কিংবা কানাডার জনবিরল লেক লুইজি আর বাফ ন্যাশনাল পার্কের ‘বিশুদ্ধ’ বাতাস বোতলে পুরে মহাদেশ উজিয়ে কারবার ফেঁদেছেন কানাডা আর ইংল্যান্ডের দুই উদ্যোগপতি যুবক।
বাজার ধরতে যাঁরা এ বার পা বাড়িয়েছেন এ দেশেও। বলছেন—‘‘দিল্লি, কলকাতার দূষণে ডুব দেওয়ার আগে এক আঁজলা হিমালয়-বায়ু সেবন করবেন নাকি!’’
হাওয়া ধরার ব্যবসার কথা শুনে হো হো করে হাসছেন নাট্য নির্দেশক তথা ‘বিজ্ঞাপন-গুরু’ অ্যালেক পদমসি। বললেন, ‘‘শেষে কি না হাওয়া! রুজির এমন সহজ রাস্তা এত দিন কারও মাথায় আসেনি কেন!’’ তবে ‘আসল-নকল’ যাই হোক, অ্যালেকের মতে, ‘‘হাওয়া বেচাকেনার ব্যবসায় একটা সরকারি সিলমোহর থাকে যেন। না হলে লোক ঠকানোটা সরাসরি হয়ে যাবে যে!’’
‘‘লোক ঠকানো? কী বলছেন?’’ ঝাঁঝিয়ে উঠছেন বিবেকজ্যোতি অঞ্জলেকর। কানাডার হাওয়া বিকিকিনির সংস্থাটির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন পুণের এই উদ্যোগপতি। তিনি বলছেন, ‘‘শুধু হিমালয় কেন, তাজা বাতাসের খোঁজে দেশের জল-জঙ্গল ঢুঁড়ে দূষণমুক্ত এলাকার একটা তালিকা তৈরি করেছেন আমাদের প্যানেলে থাকা পরিবেশবিদেরা। আর আপনারা বলছেন লোক ঠকানো?’’ বিবেকের দাবি, সেই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে এ রাজ্যের প্রায় অচেনা এক পাহাড়ি জনপদ, কোলাখাম। ওক-পাইনের ছায়া ঢাকা পাহাড়ি সেই গ্রামে ‘পরিশুদ্ধ হাওয়া’ ধরার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে বলে জানালেন বিবেক।
হাওয়া-কারবারিরা দাবি করেছেন, তাজা হাওয়ার আদত ঠিকানা হচ্ছে জনমনিষ্যিহীন কোনও এলাকা। তা কানাডার লেক লুইজি হোক বা এ দেশের হিমালয়। যেখানে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ প্রায় শূন্য বললেই চলে।
সে বাতাস কি তবে শ্বাসকষ্টের উপশমও ঘটাবে? বিশিষ্ট বক্ষ এবং ফুসফুস বিশেষজ্ঞ পার্থসারথি ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘কখনওই নয়। যত পরিশুদ্ধ বাতাসই হোক, সেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ মেরেকেটে ২০ শতাংশ থাকতে পারে। তাতে তো শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীর কষ্ট কমবে না।’’
সে কথা শুনছে কে? এক আঁজলা বিলিতি হাওয়া গিলে ঢেঁকুর তুলছে মুম্বই। বিবেক বলছেন, ‘‘তিন লিটার বিলিতি হাওয়া ১৪৫০ টাকা। দিব্যি বিকোচ্ছে। খুচরো প্যাকেও পাবেন, তিন ঢোক সাড়ে সাঁইত্রিশ টাকা।’’
হাওয়া বেচা-কেনার ব্যবসা ফাঁদা অবশ্য নতুন নয়। ধোঁয়াশা ঢাকা চিনের সাংহাই শহরের মানুষ একটু তাজা হাওয়ার খোঁজে যে হাঁসফাঁস করছেন, বছর কয়েক আগে তা টের পেয়েছিলেন সে দেশের ব্যবসায়ী শেন গুয়ানবিও। চিনের জনবিরল এলাকা থেকে বোতলবন্দি তাজা বাতাস সংগ্রহ করে, বেজিংয়ের ফুটপাথে নিতান্তই স্বল্প দামে বিক্রি করে গুয়ানবিওর লাখপতি হয়ে ওঠার গল্প এখন সে দেশে মুখে মুখে ফেরে। ‘ইন্ডিপেনডেন্ট’ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে গুয়ানবিও কবুল করেছেন, ৮০ সেন্ট (৫৩ টাকা) দামে ৯০ লক্ষ বোতল তাজা হাওয়া সাকুল্য দশ দিনে বিক্রি করেই রাতারাতি বরাত ফিরে গিয়েছিল তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy