প্রতীকী ছবি।
অতিমারির দাপটে দীর্ঘ গৃহবন্দিদশায় ক্লান্ত? হাঁসফাঁস লাগছে? দূরসফরের সময় এখনও আসেনি ঠিকই। তবে কাছেপিঠে দু’চার দিন ঘুরে আসার জন্য রাজ্য সরকারের পাশাপাশি ঢালাও ব্যবস্থা করছে কেন্দ্রও। সেই জন্য বাংলার হারিয়ে যেতে বসা লোকসংস্কৃতি, ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে আঁকড়ে ধরে গ্রামীণ মেলায় পর্যটনের পসরা সাজাচ্ছে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক। তাদের ডালিতে বাউল ও ভাটিয়ালি গান, ছৌ ও রায়বেঁশে নাচ, মাদুর, পটচিত্র-সহ থাকছে অনেক কিছুই।
লোকশিল্প ও সংস্কৃতি নিয়ে নানান মেলার আয়োজন দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে রাজ্য সরকার। এ বারের শীতে, ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত গ্রামবাংলার শিল্প-সংস্কৃতিকে সামনে রেখে ছোট ছোট ভ্রমণ প্যাকেজের আয়োজন করছে কেন্দ্রও। কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের পশ্চিমবঙ্গের রিজিওনাল ডিরেক্টর সাগ্নিক চৌধুরীর কথায়, “উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের গ্রামে-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে থাকা লোকশিল্পীদের কাছে আমরা পৌঁছতে পেরেছি। ডিসেম্বরের শেষ থেকে সারা জানুয়ারি কেন্দ্রের তরফে বিভিন্ন গ্রামে বিনিয়োগ করে ছোট ছোট মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। শুধু কলকাতা নয়, দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও মানুষ এসে সপ্তাহান্তে এই ভ্রমণ সেরে ফিরে যেতে পারবেন। এর আয়োজন করছেন আমাদের তালিকাভুক্ত টুর অপারেটরেরা।”
এতে এক উদ্যোগেই অন্তত তিনটি উদ্দেশ্য সফল হবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় পর্যটনকর্তা। ১) যে-সব ভ্রমণপিপাসু মানুষ করোনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ঘরে আটকে আছেন, তাঁরা শীতের মধ্যে সপ্তাহান্তে কাছাকাছি বেড়ানোর সুযোগ পাবেন। ২) ব্যবসায় ক্রমাগত মার খেতে থাকা টুর অপারেটরদের কিছু রোজগারের সংস্থান হবে। ৩) সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, গ্রামের যে-সব শিল্পীর রুজিরোজগার তলানিতে ঠেকেছে, তাঁদের হাতে কিছু টাকা আসবে।
সাগ্নিকবাবু জানান, প্রতিটি টুরেই কোনও না-কোনও ধরনের স্থানীয় লোকগীতির আসর বসানো হচ্ছে। সেখানে শিল্পীদের টাকা দেবে কেন্দ্র। দিনের বেলায় গ্রাম সাজিয়ে মেলা করার জন্যও টাকা পাবেন তাঁরা। ঘুরতে গিয়ে পছন্দ হলে সেই সব গ্রামীণ শিল্পীর হাতে তৈরি সামগ্রী কিনতেও পারবেন পর্যটকেরা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং-পিংলার মাদুর, ঝাড়গ্রামের পটচিত্র, বীরভূমের জয়দেব ও কেন্দুলির মেলা, বাউল গান, শোলা ও কাঁথা শিল্প, পুরুলিয়ার ছৌ নাচের সঙ্গে গড়পঞ্চকোট ও বড়ন্তি, বাঁকুড়ার টেরাকোটা ও ডোকরা শিল্প, মুর্শিদাবাদের নবাবকুলের ইতিহাস, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প, মাদারিহাট, তিনচুলে, তাকদা, সোনাদা, সুন্দরবনের বনবিবির পালা— তালিকায় রয়েছে অনেক কিছুই। কেন্দ্র নিজেদের ওয়েবসাইটে জানানোর পাশাপাশি হোর্ডিং লাগিয়ে, বিজ্ঞাপন দিয়ে এই উদ্যোগের প্রচারে নেমেছে। কেন্দ্রীয় পর্যটনকর্তা জানান, সেগুলো দেখে ভ্রমণার্থীরা চাইলে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ঘুরে আসতে পারেন। প্রতিটি টুরের সঙ্গে পথনির্দেশকের ফোন নম্বর দেওয়া থাকছে। তিনি ঠিকঠাক দিশা দেখিয়ে ভ্রমণার্থীদের গ্রামে নিয়ে যাবেন। তবে সে-ক্ষেত্রে থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত পর্যটকদের নিজেদেরই করতে হবে। এ ছাড়া তালিকায় থাকা টুর অপারেটরদের সাহায্য নিয়েও ঘুরে আসা যাবে।
কেন্দ্রীয় পর্যটনকর্তা জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকারও বিভিন্ন প্রত্যন্ত জায়গায় পর্যটন কেন্দ্র খুলেছে। থাকার ভাল ব্যবস্থা আছে। পর্যটকেরা রাতে সেখানে থেকেও লোকশিল্পীদের এই সব গ্রাম ঘুরে আসতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy