গত ১১ দিনে অসমে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছে ১০টি হাতি। তা নিয়ে টানাপড়েন চলছে রেল ও বন দফতরের।
ট্রেনের ধাক্কায় হাতিমৃত্যু ঠেকাতে আজ সচিবালয়ে রেল, পুলিশ, প্রশাসন ও বন দফতরের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ল। তিনি নির্দেশ দেন, রেলপথের আশপাশে থাকা গ্রামবাসীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বনকর্মীরা যৌথ টহলদার বাহিনী ও হাতি কমিটি গড়বেন। হাতি চলাচল করে এমন সব রেলপথের কন্ট্রোল রুমে বন দফতরের প্রতিনিধিও থাকবেন। যৌথ টহলদাররা হাতির গতিবিধি পেলেই স্টেশন ও কন্ট্রোল রুমে খবর দেবেন। রেললাইনগুলির আশপাশের জঙ্গল সাফাই করে দৃশ্যমানতা বাড়ানো হবে। হাতি করিডরে উজ্জ্বল চিহ্ন লাগানো হবে। বিপজ্জনক করিডরে বসানো হবে আধুনিক সতর্কীকরণ সেন্সর ব্যবস্থা, সৌরআলো, জিপিএস ইন্ডিকেটর। রেললাইনের উপর বা নীচ দিয়ে হাতি চলাচলের রাস্তা তৈরির প্রকল্পও হতে পারে। চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রেলকে জোর দেন তিনি। এ নিয়ে ২০ ডিসেম্বর লামডিংয়ে সচেতনতা শিবির হবে বলে রেল জানায়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ট্রেনে হাতি কাটা পড়ার বিষয় নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাঁকে অনুরোধ করেছেন রেল যেন বন মন্ত্রকের নিয়ম মেনে চলে ও আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেয়।
পশুপ্রেমী সংগঠনগুলির বক্তব্য, পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়িয়ে হাতিমৃত্যু ঠেকানোই প্রথম কাজ। কারণ শীতের মরসুমে বুনো হাতিরা ঢুকবে ধানখেতে। ঘন কুয়াশায় ঢাকা রেললাইনে ট্রেনের ধাক্কায় তা-ই মরতে পারে আরও হাতি। সে দিকে তাকিয়ে নতুন করে হাতি করিডর চিহ্নিতকরণের দাবি তুলেছে তারা।
ডব্লিউডব্লিউএফ জানায়, চার দিন আগে রেল ও বন দফতর বৈঠক করে ওই সব এলাকায় ট্রেনের গতি ৩০ কিলোমিটারে বেঁধে রাখতে সম্মত হয়। তার পরও গত কাল হোজাইয়ে ইঞ্জিনের ধাক্কায় তিনটি হাতির মৃত্যু হয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক। ওই সংগঠনের মতে, এ দেশে রেললাইনে ৪১ শতাংশ হাতি করিডর রয়েছে উত্তর-পূর্বে। তার মধ্যে ২৫ শতাংশ অসমে। উত্তর-পূর্ব রেলের অধীনে নথিভুক্ত হাতি করিডর ২৭টি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বুনো হাতির পাল অন্য জায়গা দিয়েও লাইন পার করচে। হাতি করিডরগুলিতে জবরদখল বা গ্রামবাসীদের ফাটানো আতসবাজির আওয়াজে ভয় পেয়ে চেনা পথ বদলাচ্ছে তারা। তাই নতুন করে হাতি করিডরগুলি চিহ্নিত করার দাবি তুলেছে ওই সংগঠন।
বন দফতর জানায়, আগে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে হাতি করিডরে নজরদারি চালানো হতো। টাকার অভাবে তা বন্ধ। রেলের বক্তব্য, জঙ্গল থেকে হাতির পাল বেরোলেই রেলকে সতর্ক করার কথা জানিয়েছিল বন দফতর। কিন্তু গত কাল যে এলাকা নিয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া হয় তার প্রায় তিরিশ কিলোমিটার দূরে রেল লাইনে ওঠে হাতিরা। বন দফতরের দাবি, একই সময় বিভিন্ন এলাকায় হাতি রেলপথ পার হচ্ছে। হোজাই-লামডিং রেলপথে বার বার হাতির মৃত্যু ঠেকাতে সম্প্রতি বন দফতর, জেলা প্রশাসন ও রেলকর্তারা বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়— রেল, পুলিশ, বন দফতর ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে তৈরি হবে ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy