Advertisement
১৭ মে ২০২৪

মাদকে বলীয়ান হয়ে মাঠে মিঠুন-জিতেন্দ্র

কে বড় হিরো, মিঠুন না জিতেন্দ্র? নাকি চিরঞ্জীবীর দক্ষিণী চালই মন জয় করবে বেশি? এই সংক্রান্তিতে টুসুর প্রাণেশ্বর হয়ে ওঠার লড়াইয়ে প্রতি বারের মতো নাম লিখিয়েছে সকলেই।

চলছে মরণপণ লড়াই। শনিবার জামশেদপুরের কাছে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

চলছে মরণপণ লড়াই। শনিবার জামশেদপুরের কাছে। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৬
Share: Save:

কে বড় হিরো, মিঠুন না জিতেন্দ্র? নাকি চিরঞ্জীবীর দক্ষিণী চালই মন জয় করবে বেশি? এই সংক্রান্তিতে টুসুর প্রাণেশ্বর হয়ে ওঠার লড়াইয়ে প্রতি বারের মতো নাম লিখিয়েছে সকলেই।

লড়াই হবে সামনাসামনি। গায়ের জোর আর খেলার কৌশল দিয়েই জিততে হবে যুদ্ধ। লড়াইয়ের সেই রিং ঘিরে এখন জোর উত্তেজনা। এ দিক-সে দিক কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, যুদ্ধ জয়ের নেশায় নাকি মন গিয়েছে ডোপিংয়েও। সি কর্ড ট্যাবলেট, ইঞ্জেকশন থেকে দেশি তরল— তেজ বাড়ানোর নেশায় বাদ যাচ্ছে না কিছুই। শুধু যে

হিরো হওয়া নয়, মালিকদের জন্য জিতে আনতে হবে সাইকেল, ঘড়ি কিংবা মোটরসাইকেল। চ্যালেঞ্জ যে কম নয়।

কিন্তু নায়কের আবার মালিক? এ যে রুপোলি পর্দা নয়, রিং-টা মোরগ লড়াইয়ের। জামশেদপুরের খরকাই ও সুবর্ণরেখা নদীর ধারে তৈরি হয়েছে আখড়া। পায়ে বাঁধা ধারালো ছুরি নিয়ে সেই আখড়ায় নামবে তারা। আর তা ঘিরেই এখন সরগরম সংক্রান্তির টুসু উৎসব। অনেকেই বলছেন, বাকি মালিকেরা যত ডোপিংই করান না কেন, জিতবে সাত কেজি ওজনের হায়দরাবাদি মোরগ চিরঞ্জীবীই।

বলিউড আবারও বুঝি হেরে ভূত হবে দক্ষিণী ‘বিগ শটের’ কাছে? খেলা শেষের আগেই হার মানতে নারাজ মিঠুনের মালিক লক্ষ্মণ টুডু। জামশেদপুরের দোমোহানি থেকে আসা ঝাড়খণ্ডী মোরগ মিঠুনও কিছু কম যায় না, মনে করিয়ে দেন লক্ষ্মণ। বলেন, ‘‘মিঠুনের ওজন এখন ছ’কেজি। ওকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা। আমি প্রথমে ২০০০ টাকা বাজি রাখব। কয়েক রাউন্ড যদি মিঠুন জিতে যায়, তা হলে বাজির অঙ্ক বাড়বে।’’ লক্ষ্মণের মিঠুন রয়েছে তো অজয় মুণ্ডার রয়েছে লালবাদশা। অজয় বলেন, ‘‘এ বার তো হায়দরাবাদ থেকে অনেকেই মোরগ ভাড়া করে এনে লড়াচ্ছেন। তাই বলে আমাদের ঝাড়খণ্ডী মোরগ কোনও অংশে কম যায় না। আসলে বেশির ভাগ ভিন্‌ রাজ্যের মোরগকে বল বর্ধক ওষুধ খাইয়ে রিংয়ে নামানো হচ্ছে।’’

আর এক মোরগ-মালিক মিন্টু মুণ্ডার অভিযোগ, ‘‘মোরগদের তো মূত্র পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। থাকলে দেখা যেত, বেশির ভাগ মোরগকেই তো ডোপ করানো হয়েছে। ডোপ করানো মোরগের সঙ্গে লড়াইয়ে গত বার আমার কানোয়ারজিৎ হেরে যায়।’’ বাকিরা যতই রাগ করুন, ডোপিংয়ে কোনও দোষ দেখেন না লক্ষ্মণ। বলেন, ‘‘কেন ডোপিং হবে না বলুন? পুরষ্কার মেলে সাইকেল, ঘড়ি। এমনকী মোটরসাইকেলও। সে সব পেতে কার না ইচ্ছে করে? গত বার তো আমাদের পাড়ার মোহন ওঁর জিতেন্দ্রকে লড়িয়ে ঘড়ি পেয়েছেন।’’

লড়াইটা অবশ্য শুধু মালিকের সম্মানের নয়, মোরগের জীবন-মৃত্যুরও বটে। এক বার রিংয়ে নেমে পড়লে আর পালানোর উপায় নেই। পালিয়ে যাওয়া মোরগের দিকে তেড়ে গিয়ে টুঁটি চিপে ধরে প্রতিপক্ষ মোরগ। লড়াইের সময়ে পায়ে বাঁধা ছুরি দিয়ে অপর পক্ষের বুক চিড়ে দেয় মোরগরা।

এ লড়াই বেআইনি। তবু বছরের পর বছর ধরে চলছে প্রশাসন-পুলিশের সামনেই। কী ভাবে? জামশেদপুরের এসএসপি অনুপ টি ম্যাথু বলেন, ‘‘এটা স্থানীয় মানুষদের একটা বহু প্রাচীন খেলা। এর সঙ্গে ওঁদের আবেগ জড়িত। তবে কেউ অভিযোগ করলে আমরা অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’’ মোরগ লড়াইয়ের আখড়ায় দেখা যায় ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মন্ত্রী দুলাল ভুইয়াঁকেও। তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা প্রতীকী লড়াই। বহু বছরের পুরনো এই খেলা বন্ধ করা যাবে না। প্রতি বছর আমার ‘ঝাড়খণ্ড সাংস্কৃতিক কলা মঞ্চ’ মোরগ লড়াইয়ের আয়োজন করে। প্রথম পুরষ্কার নগদ এক লক্ষ টাকা। এ ছাড়া সাইকেল, টিভি, ঘড়ি তো রয়েছেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cock Fight
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE