—প্রতীকী ছবি।
গোটা শহরের রংটাই আচমকা লাল!পার্টি কংগ্রেসের শেষে সুরুর নগর স্টেডিয়ামের দিকে পিলপিল করে এগোচ্ছে লাল মানুষ! লাল জামা, টুপিতে ২৫ হাজারের বাহিনী! তার আগে তেলঙ্গানা কায়দার বাদক বাহিনী। আর সাজানো ম্যাটাডোর-রথে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্যেরা।
এক দিনের জন্য হলেও তাক লাগানো দৃশ্য! তেলঙ্গানা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সাগর তিলাগা ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘ওই বাহিনীর নাম রেড শার্টস। স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে দিনের পর দিন এই মহড়়া অনুশীলন করানো হয়েছে।’’ দলের তেলঙ্গানা রাজ্য সম্পাদক তাম্মিনেনি বীরভদ্রমের সংযোজন, ‘‘৭০০ স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত কাজ করেছেন একটা সপ্তাহ। রান্নার বাসন আর মণ্ডপের বাঁশ-কাপড়় ভাড়়া নেওয়া ছাড়়া কিছুই বাইরে থেকে নিইনি।’’
ঠিকই! এক দিনের তো নয়। পাঁচ দিনের পার্টি কংগ্রেস নামক মহাযজ্ঞ আয়োজনে দলের কর্মী আর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর উপরেই ভরসা রেখেছে সিপিএম। রোজ গড়়ে দু’হাজার লোকের পাত পড়়েছে। স্বেচ্ছাসেবকেরাই রেঁধেছেন, খাইয়েছেন, বাসন মেজেছেন আবার পার্টি কংগ্রেসের প্রেক্ষাগৃহ থেকে মিডিয়া পয়েন্টে অষ্টপ্রহর মোতায়েন থেকেছেন যে কোনও দরকারে সাহায্যের জন্য। অঙ্গনওয়াড়়ি কর্মীরা পরিবেশনে হাত লাগিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবকদের পরিবারের ছোটরা পর্যন্ত নেমে পড়়েছে কোথায় কী আছে, এই তথ্য অতিথিদের জানানোর মতো ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সাহায্যে।
তেলঙ্গানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, টিআরএস নেতা নরসিংহ রেড্ডি কি আর সাধে বলছেন, ‘‘আজকের দিনে বিয়ের আয়োজনও এজেন্সি দিয়ে হয়। সিপিএম এখানে একটা পার্টি কংগ্রেস নিজেরা পরিশ্রম করে আয়োজন করল!’’ উদ্যোক্তাদের সেই প্রচেষ্টাকে পার্টি কংগ্রেসের সমাপ্তি মঞ্চে নজিরবিহীন ভাবে সেলাম জানিয়েছে সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বে গোটা দল। যা দেখে বাংলার প্রতিনিধিরাও অভিভূত!
দলের সদস্য তেলঙ্গানায় এখন ৩৫ হাজার। তাঁরা চাঁদা তুলেছেন ৮ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা। সিপিএমের প্রগতিনগর কমিটির হাতে এক ‘বাম দরদি’ ৫০ লক্ষ টাকার আনাজ এবং ফল দিয়েছেন। বাম সংগঠন ও সহানুভূতিশীল শিক্ষকেরা নিজেদের টাকায় পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের জন্য ট্রাভেল ব্যাগ ও তোয়ালে কিনে দিয়েছেন। যার খরচ ১৬ লক্ষ টাকা। সিপিএম পরিচালিত সুন্দরাইয়া বিজ্ঞান কেন্দ্র প্রতিনিধি ও অতিথি সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিয়েছে নোটবুক। নানা জেলা কমিটি সাধ্যমতো কাঁচা বাজার এবং মাল-মশলা পাঠিয়েছে। আর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী চারটে বিশাল রসুইখানা চালিয়েছে, শহর জুড়়ে তোরণ গড়়েছ, ছবি এঁকেছে।
পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চ সাজিয়েছেন শিল্প নির্দেশক রামানা। হলিউডের পুরস্কারপ্রাপ্ত তরুণ শিল্পী পার্টি কংগ্রেসেও সংবর্ধিত। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলায় হায়দরাবাদে সিপিএমের হয়ে দেওয়াল লিখতাম। সেই দিনগুলো ভুলিনি!’’ মূল রাঁধুনি ছিলেন ইউসুফ আলি। তিনি বলছেন, ‘‘এত রাজ্যের এত মানুষ। খাওয়ার অভ্যাস আলাদা। আমিষ-নিরামিষ মিলে চারটে ডাইনিং হলে রাজ্যগুলোকে ভাগ করে সাধ্যমতো ভাল খাবার দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy