দোরাইসামী রাজা এবং অ্যানি রাজা। ছবি সংগৃহীত।
ঘরের সমস্যা সামাল দিতে গিয়ে বড় ঘরে আরও সমস্যা! আচমকাই বেকায়দায় দোরাইসামী রাজা!
বলা হয়, কমিউনিস্ট নেতাদের কাছে দলই আসল ঘর। সেই দলেই এখন বেনজির তোপের মুখে পড়েছেন সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক রাজা। কারণ, তিনি দলের মহিলা সংগঠন নিখিল ভারত মহিলা সমিতির (এনএফআইডব্লিউ) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের একটি বিতর্কিত মন্তব্যের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলেন। কেরল পুলিশকে নিয়ে করা যে মন্তব্যকে ‘অনুমোদন’ করেনি রাজ্য সিপিআই এবং জাতীয় কর্মসমিতিও সমালোচনার সুরই ধরে রেখেছে। দলের সম্মিলিত মতের বিরুদ্ধে গিয়ে মহিলা সংগঠনের নেত্রীর পাশে দাঁড়ানোয় সাধারণ সম্পাদক রাজাকে রীতিমতো তুলোধোনা করে এস এ ডাঙ্গের উদাহরণ স্মরণ করিয়ে দিয়েছে কেরলের ক্ষমতাসীন সিপিআই! ঘটনাচক্রে, মহিলা সমিতির যে জাতীয় নেত্রী অ্যানি রাজার মন্তব্য ঘিরে এমন সঙ্কট, ব্যক্তিগত পরিচয়ে তিনি ডি রাজার সহধর্মিণী!
গোলমালের সূত্রপাত কিছু দিন আগে অ্যানির একটি মন্তব্যকে ঘিরে। তাঁর অভিযোগ ছিল, কেরল পুলিশের মধ্যে একটি ‘আরএসএস গ্যাং’ সক্রিয়। মহিলাদের উপরে নির্যাতনের তদন্তে তাদের ভূমিকা ঠিক নয় এবং কেরলের মতো শিক্ষিত রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার এটা অন্যতম কারণ। রাজ্যের পুলিশ সম্পর্কে অ্যানির এমন মত তারা সমর্থন করে না বলে পত্রপাঠ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চিঠি লিখে জানায় কেরল সিপিআই। দিল্লিতে সিপিআইয়ের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেও আলোচনা হয় যে, কেরলের পুলিশের সম্পর্কে ‘সাধারণ ভাবে’ এমন মত পোষণ ঠিক নয়। কিন্তু পরে রাজা তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘পুলিশের ভূমিকা ঠিক না হলে সমালোচনা তো হবেই। সেটা উত্তরপ্রদেশের পুলিশ হোক বা কেরলের!’’
এখান থেকেই বিতর্কে নতুন মোড় এসেছে। তিরুঅনন্তপুরমে সিপিআইয়ের রাজ্য কর্মসিমিতি ও রাজ্য পরিষদের বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক রাজার ওই মন্তব্যের কড়া নিন্দা করেছেন দলীয় নেতারা। তাঁদের যুক্তি, একটা বিতর্কিত মন্তব্যকে আড়াল করতে গিয়ে রাজা যা বলেছেন, তা আরও আপত্তিকর। উত্তরপ্রদেশে যে চিকিৎসক অক্সিজেন সঙ্কটের কথা জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্যের পুলিশ মামলা করেছে। আর কেরলের পুলিশ কোভিড পরিস্থিতিতে টানা সহায়তা দিয়েছে। দুই রাজ্যের পুলিশকে কী ভাবে এক করে দেখানো সম্ভব? সিপিআইয়ের কেরল রাজ্য সম্পাদক কানম রাজেন্দ্রন বলে দিয়েছেন, ‘‘দলের নীতি ও পদ্ধতি সকলেই মেনে চলতে হবে। ব্যক্তি দলের ঊর্ধ্বে হতে পারেন না, তিনি সাধারণ সম্পাদকই হোন বা রাজ্য সম্পাদক। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তির মত প্রতিষ্ঠা করতে যাওয়ায় ডাঙ্গেকেও (তদানীন্তন পার্টির চেয়ারম্যান) ছেড়ে কথা বলা হয়নি!’’
রাজ্য সম্পাদককে আবার পাল্টা বিঁধে দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য এবং কেরলের নেতা কে ই ইসমাইল সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, রাজার মতোই ‘নীতি’ ভাঙছেন রাজেন্দ্রনও। যার প্রতিক্রিয়ায় রাজেন্দ্রন বলেছেন, সাধারণ সম্পাদকের মতো রাজ্য সম্পাদকও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নন। কারও ভিন্ন মত থাকতেই পারে।
সংগঠিত দলে ব্যক্তির মত ঠিক কতটা বড়, সেই গোড়ার বিতর্কে আবার ফিরে গিয়েছে সাবেক কমিউনিস্ট পার্টি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy