বাংলায় বসে বাঙালিরাই বাংলা ভুলছেন, প্রবাসে সঙ্কট তো আরও গভীর!
মরূদ্যানের মতো একচিলতে বাংলাকে রাজধানীতে ধরে রেখেছে ‘এক এবং দশ’। দিল্লির বাঙালিপাড়া চিত্তরঞ্জন পার্কে ‘এক এবং দশ’ নিছক ক্লাব নয়। এটিকে বাংলা অনুশীলনের আখড়াও বলা চলে। বাংলা আখর লালন হয় আড্ডার ছলে।
আড্ডা আর বাঙালিকে আলাদা কী করে রাখা যায়? কিন্তু এখানে আড্ডা হয় কবিতা, গল্প, সাহিত্য নিয়ে। শুধু কি তাই? সিনেমা, নাটকও অনায়াসে চলে আসে আড্ডার ফাঁকে।
সত্তরের দশকে পথ চলা শুরু। দিল্লির বুকে আড্ডা আজও থামেনি। এখানে যাঁরা আসেন তাঁরা কবিতা পাঠ বা সেই নিয়ে আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে অনেক রকমের অনুষ্ঠানও করেন। এই আড্ডার প্রধান উদ্যোক্তা কবি হিমাদ্রি দত্ত জানিয়েছেন, কবিতা, গল্পপাঠ নিয়েও তাঁরা বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠান করেছেন। শুরুতে ‘রাজধানীর কবিতা সংকলন’ ও ‘রাজধানীর গল্প সংকলন’ বার করা হয় ‘এক এবং দশ’-এর পক্ষ থেকে। সেই সময় এ দু’টির রিভিউ বেরোয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। ১৯৭০ সালের দিল্লির বাঙালিদের কবিতা আন্দোলনের মধ্যেই ছিল এই আড্ডার সূত্রপাত।
এখানে যে শুধু বাংলা কবিতাচর্চা বা বাঙালি কবি সাহিত্যিকদেরই ডাকা হয় তা নয়। বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু বা অন্যান্য ভাষার কবিতারও চর্চা হয়ে থাকে, আসেন সেই সব ভাষার সাহিত্যিকরাও। বাংলা কবিতার বহু কবি ও সাহিত্যিকই কখনও না কখনও এই আড্ডায় সামিল হয়েছেন। শঙ্খ ঘোষ, শংকর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কি জয় গোস্বামী বা তসলিমা নাসরিন— এঁরা সবাই এই আড্ডায় এসছেন।
হিমাদ্রিবাবু জানিয়েছেন, তাঁরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানও করে থাকেন, তা সে রবীন্দ্রজয়ন্তীই হোক বা ভাষা দিবস। এ বছর কবি সমর সেনের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান করার কথা ‘এক এবং দশ’-এর পক্ষ থেকে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়: ‘‘এখন যখন সবাই নিজের ভাষার থেকে বেশি ইংরেজিতেই কথা বলে, তখন এই কবিরা এখানকার সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছেন।’’
এই আড্ডা দলের ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ৬ জন চিত্তরঞ্জন পার্কের বাসিন্দা, বাকিরা রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আড্ডায় যোগ দিতে আসেন।
‘এক এবং দশ’ দীর্ঘকাল ধরে নিজের লক্ষ্য বজায় রেখে এগিয়ে চলেছে, বাংলা কবিতা, সাহিত্য নিয়ে নিছক আড্ডার ছলে তাদের এই এগিয়ে যাওয়া। রাজধানীর বুকে বাংলা সাহিত্যের বা বলা ভাল, সাহিত্যের ধারাকে নিজেদের মতো এগিয়ে নিয়ে চলেছে ‘এক এবং দশ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy