—ফাইল চিত্র।
আর কোনও হৃদয় খুঁড়ে বেদনা নয়, স্মৃতির ফ্রেমে হাঁচোরপাঁচোর কাটাও নয়। সদ্যসমাপ্ত কলকাতা বইমেলার নস্টালজিয়া কাটতে না কাটতেই দক্ষিণ দিল্লির কালীবাড়ি প্রাঙ্গন সেজে উঠতে চলছে বাংলা বইয়ের পশরা নিয়ে। দিল্লির প্রায় সমস্ত বইপ্রেমী বাঙালির দোল-পরবর্তী ঠিকানা হতে চলেছে, দিল্লি বাংলা বইমেলা।
১৪ থেকে ১৯শে মার্চ নিউ দিল্লি কালীবাড়ি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ষোড়শ দিল্লি বাংলা বইমেলা ও সাহিত্য উৎসব। এই বইমেলার প্রধান আকর্ষণ গান, কবিতা, নাটক নিয়ে আড্ডা, ক্যুইজ, আবৃত্তি, ছোটদের জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। ‘বই বিপণনের বাজারি দিকটাকে ছাপিয়ে বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের এই অনুষ্ঠান যেন পরিণত হয় এক উৎসবে।’ জানালেন বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তপন সেনগুপ্ত। সংস্থার অন্যতম কর্ণধার সৌরাংশু সিংহ বললেন, “জায়গার সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক প্রকাশককে আমাদের ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। ৬৩টি প্রকাশনী সংস্থা এ বার উপস্থিত থাকছে এই বইমেলায়।”
আরও পড়ুন- কোচিতে নীতি-সেনার জবাবে চুম্বনে প্রতিবাদ
কার্টুন, ভিডিওগেমস, অ্যাপসের জগতে মগ্ন আজকের শিশুদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া, বাংলা থেকে দূরে থাকার জন্য ও প্রবাসের স্কুলে বাংলা ভাষার সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হওয়ার জন্যই বাংলা থেকে প্রায় দেড় হাজার কিমি দূরে এই বাংলা বইমেলার খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন গুরুগ্রাম-এর বাসিন্দা দীপিকা ভট্টাচার্য। প্রতি বার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বইমেলায় আসেন। “ডোরেমন-নবিতা, পাওয়ার রেঞ্জার্স, টম অ্যান্ড জেরি— ইত্যাদি কার্টুন চরিত্রগুলোর মধ্যেই আজকের শিশুদের কমিক্সের ধারণা সীমাবদ্ধ। নন্টে-ফন্টে বা হাঁদা-ভোঁদা-র মতো বাংলা কমিকগুলোর সঙ্গে এই প্রজন্মের শিশুদের কোনও যোগসূত্রই তৈরি হয়নি। তাই প্রতি বারই এই মেলায় স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে আমরা আসি। আমরা চাই, আজকের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমাদের শৈশব ও বাংলার একটা যোগসূত্র তৈরি করতে।” জানালেন রাইসিনা পাবলিক স্কুলের শিক্ষিকা।
কলকাতা বইমেলার ছোঁয়া দিল্লিতেও। ছবি- নিজস্ব চিত্র
ছোটদের জন্য থাকছে আরও নানা আকর্ষণ। ফেলুদা, অর্থাৎ সব্যসাচী চক্রবর্তীর মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠানে ছোটরা তাদের প্রিয় চরিত্রের সঙ্গে কিছু ক্ষণ সময় কাটানোর সুযোগ পাবে। ‘প্রকাশকের মুখোমুখি পাঠকেরা’ এ বছর এই বইমেলায় নতুন আয়োজন। জানালেন অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা সুমনা কাঞ্জিলাল। ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত থেকে সরোদবাদক আমজাদ আলি খান, সকলেই উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। উপস্থিত থাকবেন সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী। বাংলা সাহিত্যের সাম্প্রতিকতম কাজ নিয়ে আলোচনা করতে বাংলা থেকে আসছেন একঝাঁক তরুণ কবি ও সাহিত্যিক।
দিল্লির নাটক ও ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়েছে এ বারের বইমেলায়। দিল্লির ব্যস্ততম জীবনে ও শর্করা সংস্কৃতির মাঝে বাংলা কবিতা নিয়ে নিঃশব্দ বিপ্লবের মতোই বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষামূলক কাজ করে চলেছেন বেশ কয়েক জন কবি। তাও কয়েক দশক ধরে। এই বছর বইমেলায় কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে কবি ও বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের মধ্যে একটা যোগসূত্র স্থাপন হবে বলে আশা রাখছেন উদ্যোক্তা ও পাঠকমহল উভয়েই। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে বই কেনাকাটায় বিশেষ ছাড়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy