৪৯৮ ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছে সব মহল।
৪৯৮-এ ধারার অপব্যবহার হচ্ছে, এই ধরনের বহু অভিযোগ পেয়ে গত বছর জুলাইয়ে সুপ্রিম কোর্ট রক্ষাকবচ হিসেবে কিছু নির্দেশিকা তৈরি করে দিয়েছিল। পুলিশের গ্রেফতারির ক্ষমতায় সুপ্রিম কোর্ট বিধিনিষেধ আরোপ করায় তখন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, এতে আসল অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাবে না তো? আজ প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ সেই নির্দেশিকাকে খারিজ করে দেওয়ার পরে শীর্ষ আদালতের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছে সব পক্ষই। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূণ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এ বার পুলিশের কাজ করতে সুবিধা হবে।’’ নারী অধিকার আন্দোলনকারী রঞ্জনা কুমারী রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘পণের দাবিতে বধূ-নির্যাতন এখনই বন্ধ করতে হবে।’’
তবে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের পুলিশি হেনস্থার কী ভাবে সমাধান হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ২০১২-তে পণের দাবিতে বধূনির্যাতনের অভিযোগে ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৭৬২ জন স্বামী-শ্বশুরবাড়ির লোক গ্রেফতার হন। এই সমস্যাটি যে রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তবে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘আইনের ধারা সব সময় যে যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে তা নয়। সেটা সব আইনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু, ৪৯৮এ-এর ক্ষেত্রে যেখানে ফৌজদারি অপরাধ জড়িত, সেখানে অন্য কমিটি ঢুকে পড়লে পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্য লঘু হয়ে যেতে পারে।’’ কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার গৌতমমোহন চক্রবর্তীও বলছেন, ‘‘এটা ঠিক, আইনের কোনও কোনও ধারা অপব্যবহার করা হয়। কিন্তু, তা বলে তার জন্য আইনের সেই ধারার গুরুত্ব তো কমে যায় না।’’
সমাজকর্মী-অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষের কথায়, ‘‘পরিবার কল্যাণ কমিটির হাতে কী সুবিচার মিলবে তা নিয়ে আগেই আমাদের সন্দেহ ছিল! সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট পুলিশি তদন্তের খামতির দিকটা বলায় ভাল লাগছে। বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, বেশির ভাগ মেয়েরাই নিরুপায় না হয়ে ৪৯৮এ ধারায় মামলা করে না। গৃহহিংসার আইনও মজবুত হওয়া দরকার।’’ আবার পুরুষ অধিকার রক্ষা আন্দোলনকর্মী নন্দিনী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পরিবার কল্যাণ কমিটি দিয়ে আইনের অপপ্রয়োগ কিন্তু কখনওই আটকানো যায়নি। পুরুষ অধিকারের জন্য দেশে আলাদা আইন দরকার। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট পুরুষদের আগাম জামিনের দরকারের কথা বলছে দেখে বরং শান্তি পাচ্ছি।’’
নারী অধিকার আন্দোলনকারীদের আরেকটি আশঙ্কা ছিল, পুলিশি ব্যবস্থা নিতে দেরি হলে নির্যাতিতাকে ভয় দেখিয়ে মামলা তোলানোর আশঙ্কা বাড়বে। গত বছরের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, বিবাদ আপসে মিটে গেলে জেলা আদালতের বিচারকই বধূনির্যাতনের অভিযোগের মামলা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন। কিন্তু আজ শীর্ষ আদালত বলেছে, সমঝোতা হলেও মামলা তুলতে উভয়পক্ষকে হাইকোর্টে যেতে হবে। শ্বশুরবাড়ি থেকে পণের সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে বলেই অভিযুক্তের জামিন নাকচ করা যাবে না। অভিযুক্ত বিদেশে থাকলে নিছক রুটিন মাফিক পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত বা রেড কর্নার নোটিস জারি করা যাবে না। শারীরিক আঘাত বা খুনের অভিযোগ না থাকলে, মামলা চলাকালীন কোর্টে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যও আবেদন করা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy