ফাইল চিত্র।
বিদায় সংবর্ধনাও হল না। আজ সকালে তামিলনাড়ু ছেড়ে গাড়িতে মেঘালয়ের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে একটি চিঠিতে মাদ্রাজ হাই কোর্টের বিচারপতি ও আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে গেলেন ওই হাই কোর্টের বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে দুঃখপ্রকাশ করে জানালেন, হাই কোর্টের কর্মীরা যে ‘সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতি’র মধ্যে কাজ করেন তা পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারলেন না।
জানুয়ারি মাসে মাদ্রাজ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকটি মামলায় কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করেন তিনি। সেপ্টেম্বরে তাঁকে মেঘালয় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে বদলি করা নিয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয় সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামে। ৯ নভেম্বর সেই সুপারিশ প্রকাশিত হয়। মাদ্রাজ হাই কোর্টে যোগ দেওয়ার ১১ মাসের মধ্যে এই বদলির সুপারিশের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণাকে চিঠি লেখেন মাদ্রাজের আইনজীবীরা। পথে নেমে প্রতিবাদও জানান তাঁরা। ১৫ নভেম্বর বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলির সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়।
মাদ্রাজ হাই কোর্টে বিদায় সংবর্ধনার অপেক্ষা করেননি বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন একটি চিঠিতে মাদ্রাজ হাই কোর্টে তাঁর ‘পরিবার’-এর উদ্দেশে কিছু বার্তা দিয়েছেন তিনি। হাই কোর্টের বিচারপতিদের কাছে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালাতে না পারা ও তাঁদের কাছে ব্যক্তিগত ভাবে বিদায় নিতে না পারার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, তাঁর পদক্ষেপের ফলে কয়েক জন ক্ষুব্ধ হয়ে থাকতে পারেন। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘জানবেন ব্যক্তিগত কারণে কোনও পদক্ষেপ করিনি। আমি মনে করেছি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ওই পদক্ষেপ করা উচিত।’’ বিচারপতিদের ভালবাসা ও উষ্ণতায় যে তিনি ও তাঁর স্ত্রী অভিভূত, উল্লেখ করেছেন সে কথাও।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠিতে জানিয়েছেন, মাদ্রাজ হাই কোর্টের আইনজীবীরা দেশের শ্রেষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্যে পড়েন। তাঁর কথায়, ‘‘বেশি কথা বলেন এবং কখনও কখনও সহজেই মেজাজ হারান এমন এক বয়স্ক বিচারপতিকে অনেক ধৈর্য, শ্রদ্ধা ও বিবেচনার সঙ্গে সহ্য করেছেন আপনারা। হয়তো এতটা ধৈর্য, শ্রদ্ধা ও বিবেচনা পাওয়ার যোগ্য আমি নই।’’
হাই কোর্টের প্রশাসন সহজ ভাবে চালানোর জন্য রেজিস্ট্রির কর্মীদের প্রশংসা করেছেন তিনি। হাই কোর্টের ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কর্মীদের উদ্যোগের প্রশংসা করে সে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।
হাই কোর্টের সমস্ত কর্মীর উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার জন্য আপনাদের দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে হয়েছে। সে জন্য দুঃখিত। আপনারা যে সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতির মধ্যে কাজ করেন তা পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারলাম না। সে জন্য আমি দুঃখিত।’’
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ১১ মাস ধরে ওই ‘সুন্দর’ ও ‘মহান’ রাজ্যে যে সহৃদয় উষ্ণতার পরিচয় পেয়েছেন, তার জন্য তিনি ও তাঁর স্ত্রী চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy