Advertisement
২১ মে ২০২৪
26/11 Attack

মুম্বই হামলার চক্রীরা পাকিস্তানে সুরক্ষিত, সেই তাজে দাঁড়িয়ে অভিযোগ বিদেশমন্ত্রীর

জঙ্গি কার্যকলাপে অর্থ জোগানে অভিযুক্ত পাকিস্তানকে ধূসর তালিকা থেকে মুক্তি দিয়েছে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স। জয়শঙ্করের বিবৃতির নেপথ্যে এই ঘটনার ‘প্রভাব’ রয়েছে বলে মনে করছে।

পাকিস্তানকে নিশানা করলেন জয়শঙ্কর।

পাকিস্তানকে নিশানা করলেন জয়শঙ্কর। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৫৩
Share: Save:

১৪ বছর আগে সেখানে পাক জঙ্গিদের হামলায় বয়ে গিয়েছিল রক্তের স্রোত। মুম্বইয়ের সেই তাজ হোটেলে শুক্রবার শুরু হল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস-বিরোধী কমিটির বৈঠক। ২৬/১১ সন্ত্রাসের কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পাকিস্তানের নাম না করে হামলাকারীদের আড়াল করার অভিযোগ তুললেন।

সন্ত্রাসে আর্থিক সহায়তা দমনে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে ‘করণীয়’ পাঁচ দফা প্রস্তাব দেন বিদেশমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাসে জড়িতদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপুঞ্জ এখনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারছে না।’’ চলতি সপ্তাহেই চিনের বাধায় ২৬/১১ সন্ত্রাসের মূল চক্রী তথা লস্কর প্রধান হাফিজ সঈদের ছেলে তলহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারত এবং আমেরিকার আনা নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব পাশ হতে পারেনি। পাশাপাশি, লস্করের জঙ্গি সাজিদ মীর, আব্দুল রহমান মাক্কি অথবা জইশ-ই-মহম্মদের নেতা আব্দুল রউফ আসগরকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি তালিকাভুক্ত করার জন্য ভারত-আমেরিকার যৌথ প্রয়াস আটকে দিয়েছে চিন।

পাশাপাশি, গত ২১ অক্টোবর জঙ্গি কার্যকলাপে অর্থ জোগানে অভিযুক্ত পাকিস্তানকে ধূসর তালিকা থেকে মুক্তি দিয়েছে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)। জয়শঙ্করের বিবৃতির নেপথ্যে এই জোড়া ঘটনার ‘প্রভাব’ রয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতি বিশ্লেষকদের একাংশ। তিনি বলেন, ‘‘২৬/১১ হামলা শুধু মুম্বইয়ের উপর ছিল না। ছিল বিশ্ববাসীর উপর।’’

২০০৮ সালের নভেম্বরে এই তাজ হোটেলে পাকিস্তান থেকে আসা লস্কর-ই-তইবা জঙ্গিরা তিন দিন ধরে হামলা চালিয়ে ৩০ জনেরও বেশি মানুষকে খুন করেছিল। সব মিলিয়ে ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসে মোট ১৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন। এর পর বার বার হামলা সংক্রান্ত তথ্য ও প্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও ইসলামাবাদ মূল ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আর এ বার সেই হামলার অন্যতম কেন্দ্রস্থলে আন্তর্জাতিক স্তরের সর্বোচ্চ সন্ত্রাস-বিরোধী বৈঠকের আয়োজন করে বাকি বিশ্ব এবং পাকিস্তানকে ভারত কড়া বার্তা দিতে চাইছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিদেশ মন্ত্রকের মতে, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের উদাহরণ তুলে ধরার জন্য এর থেকে ভাল জায়গা আর হয় না। এ বার সেখানেই সন্ত্রাসদমন নিয়ে মত বিনিময় করবেন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ১৫টি প্রতিনিধি সদস্য দেশের কর্তারা। রাষ্ট্রপুঞ্জের সন্ত্রাস-বিরোধী কমিটি একটি যৌথ ঘোষণাপত্র দিল্লি থেকে প্রকাশ করবে বলে জানা গিয়েছে।

ঘটনাচক্রে, শুক্র ও শনিবার নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস-বিরোধী কমিটির দু’টি বৈঠকের আয়োজন করছে ভারত। তার মধ্যে প্রথমটি মুম্বইয়ের তাজ হোটেলে। দ্বিতীয়টি দিল্লিতে। কূটনৈতিক শিবির বলছে, সন্ত্রাস-বিরোধী এই কমিটি রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতর নিউ ইয়র্কের বাইরে বৈঠকে বসছে, এমন ঘটনা খুবই বিরল। সূত্রের দাবি, নয়াদিল্লির নিরবচ্ছিন্ন দৌত্যে তা সম্ভব হয়েছে। ভারত এই বছর এই কমিটির নেতৃত্বেও রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, নিউ ইয়র্কের বাইরে এই বৈঠক করতে কমিটির রাজি হওয়ার অর্থ, সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারতের কূটনৈতিক ভূমিকা এবং উদ্যোগকে স্বীকৃতি দেওয়া।

এই পরিস্থিতিতে মূলত তিনটি বিষয়কে নয়াদিল্লি বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে চাইছে বলে সরকারি সূত্রের খবর— সন্ত্রাসে ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার আটকানো, সন্ত্রাসে পুঁজির জোগান বন্ধ করা এবং ড্রোনের মাধ্যমে জঙ্গি হামলার নয়া পাক কৌশল নিয়ে আলোচনা। শুক্রবার অধিবেশনের গোড়াতেই জয়শঙ্কর সন্ত্রাস দমনে আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার কথা বলে সেই পদক্ষেপের সূচনা করলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE