Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

ট্রাইবুনালে কী পরিচয়, যাচাই করা হবে কমিটিতে

সন্দেহভাজন বিদেশি মামলা জটিল থেকে জটিলতর হল। এখন আর ‘ফরেনার্স ট্রাইবুনাল’ ভারতীয় বলে রায় দিলেই ঝামেলা মিটবে না। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ট্রাইবুনালের রায় সরকার পর্যালোচনা করবে। আদালতে দেওয়া নথিপত্রে তাদের সংশয় না কাটলে উচ্চতর আদালতে আপিল করা হবে।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫৮
Share: Save:

সন্দেহভাজন বিদেশি মামলা জটিল থেকে জটিলতর হল। এখন আর ‘ফরেনার্স ট্রাইবুনাল’ ভারতীয় বলে রায় দিলেই ঝামেলা মিটবে না। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ট্রাইবুনালের রায় সরকার পর্যালোচনা করবে। আদালতে দেওয়া নথিপত্রে তাদের সংশয় না কাটলে উচ্চতর আদালতে আপিল করা হবে।

আজই এ সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রায় পর্যালোচনার জন্য রাজ্য ও জেলা—দুই স্তরে ‘স্ক্রিনিং কমিটি’ গঠন করা হবে। প্রথমে জেলা পর্যায়ের কমিটি রায়গুলি পর্যালোচনা করবে। কাউকে সন্দেহভাজন বলে মনে করলে আপিলের সুপারিশ যাবে রাজ্য কমিটির কাছে। রাজ্য কমিটি ফের যাবতীয় বিষয় খতিয়ে দেখে ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল জানাবে।

এ নিয়ে বরাক উপত্যকার সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সর্বানন্দ সোনোয়ালের নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোট সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে বহু সংস্থা ও সংগঠন।

বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রাজদীপ রায় অবশ্য বলেন, এ নিয়ে হিন্দুদের আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে যাঁরা এ দেশে এসেছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার তাঁদের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখছে। এই ইস্যুতে তাঁর দলের অবস্থান স্পষ্ট বলেই দাবি করেন তিনি। তবু গুয়াহাটিতে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন বলে রাজদীপবাবু আজ জানিয়েছেন।

রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বাঙালি হিন্দুদের আশ্বস্ত করতে চাইলেও, কেন্দ্র-রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর সন্দেহভাজনদের হয়রানি মোটেও কমেনি। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান, পার্সিরা বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসে আশ্রয় নিলে তারা এখানে থাকতে পারবে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আগেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এরপরও রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার (তখনও তিনি বিজেপি বিধায়ক) দিলীপ পালের ভাই প্রদীপ পালকে সস্ত্রীক বিদেশি সন্দেহে নোটিশ পাঠানো হয়। লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশের পরও বিদেশি বলে নোটিশ গিয়েছে সোমেশ চন্দ্র দেবরায়ের নামে। তাঁর মা-বাবার লিগ্যাসি ডাটা রয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, তিনি প্রায় ৩৫ বছর আগে শিলচর ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে চলে গিয়েছেন। এ দু’টি উদাহরণ মাত্র। আর দু’টিই হিন্দু পরিবার।

বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতীশকুমার ভট্টাচার্য রাজ্য সরকারের আজকের বিজ্ঞপ্তিকে ‘অমানবিক ও আইনবিরুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘সন্দেহভাজন ব্যক্তি ভারতীয় নাকি বিদেশি, তা নির্ধারণের জন্য ট্রাইবুনাল গঠিত হয়েছে। তাঁরা ভারতীয় বলে রায় দেওয়ার পর আবার কেন উচ্চতর আদালতে আপিল জানানো! একজন প্রকৃত ভারতীয়ের পক্ষে বারবার এ আদালত, সে আদালতে নাগরিকত্বের পরীক্ষা দেওয়া অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা।’’

সরকারের এই নির্দেশে ক্ষুব্ধ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছাড় জেলা কমিটিও। আজ পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুসারে শিলচরে গণ-কনভেনশন করেন তাঁরা। সেখানে রাজ্য সরকারের উপর ভরসা হারিয়ে তাঁরা রেজিস্ট্রার-জেনারেল অব ইন্ডিয়ার সরাসরি তত্ত্বাবধানে এনআরসি-র কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানায়। এনআরসি-র জন্য আধার কার্ডের কাজ আটকে রাখাকে অযৌক্তিক বলেও উল্লেখ করেন তাঁরা। সিদ্ধান্ত হয়েছে: পুজোর পর এই সব নিয়ে আন্দোলনে নামবে মানবাধিকার সংস্থাটি। তখনও অবশ্য তাঁরা কেউ আজকের নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানেন না। পরে সংস্থার জেলা সভাপতি অরুণ দত্তমজুমদার বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ট্রাইবুনাল তৈরি করেছে। তারাই যদি এখন ট্রাইবুনালের রায় না মানে, তবে তা দুর্ভাগ্যজনক।’’

হিন্দু লিগ্যাল সেলের রাজ্য আহ্বায়ক ধর্মানন্দ দেবও রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘‘ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানালে তা হবে পরোক্ষে ট্রাইবুনাল অবমাননার সামিল।’’ হঠাৎ এমন বিজ্ঞপ্তি জারিকে হিন্দু বাঙালিদের হেনস্তা করার চক্রান্ত বলেই মনে করছেন তিনি। বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপ পাল বছর দেড়েক আগে ভাইয়ের বিদেশি নোটিশ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করলেও আজ তিনি সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য, বিদেশিমুক্ত অসম। বিদেশি কারা, তাও কেন্দ্র স্পষ্ট করে দিয়েছে। হিন্দুরা কোনও মতেই এখানে বিদেশি হতে পারে না।’’ ফলে সত্যিকারের ভারতীয়দের সমস্যা হবে না বলেই দাবি করেন তিনি।

জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা প্রাক্তন সাংসদ কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য জানান, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাঁরা কোনও ভাবেই মেনে নেবেন না। তিনি বিষয়টি হাইকমান্ডের নজরে আনবেন। একে বাঙালির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক আচরণ বলেই উল্লেখ করেন কর্নেন্দুবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government Foreigners Tribunal High court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE