ষোলো বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে লড়াইয়ের অন্তত প্রথম ধাপটুকু পেরোনোর আশা দেখছেন কার্গিল শহিদ সৌরভ কালিয়ার বাবা-মা।
বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সোমবার বলেছেন, সৌরভ হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া যায় কি না, সুপ্রিম কোর্টের কাছে তা জানতে চাওয়া হবে। বিগত ষোলো বছরে কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য বারবারই বলে এসেছে, আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার পথ নেই। ভারত ও পাকিস্তান কমনওয়েলথ-ভুক্ত দেশ। পরস্পরের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে না তারা। এ দিনও বিদেশ মন্ত্রকের তরফে প্রথমে সেই পুরনো কথারই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছিল। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে প্রবল হইচই শুরু হওয়ার পরে, অবস্থান কিছুটা বদলের ইঙ্গিত দিলেন বিদেশমন্ত্রী। জানালেন, সুপ্রিম কোর্ট অনুমতি দিলে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে আপত্তি নেই কেন্দ্রের। সে ক্ষেত্রে অবশ্য কেন্দ্রকে তার পুরনো হলফনামা বদল করতে হবে।
সব শুনে সৌরভের মা বিজয়ার প্রতিক্রিয়া, ‘‘সুষমা যা বলেছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু উনি এখনও কাজে কিছু করেননি। যদি ওঁর কিছু করার থাকে, আগে করুন, তার পর বিশ্বাস করব! ’’১৯৯৯ সালের ৯ জুন। বন্দি করার ২৬ দিন পর জাঠ রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন সৌরভ কালিয়া এবং পাঁচ ভারতীয় সেনার দেহ ফিরিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। দেহ বলতে খানিকটা মাংসপিণ্ড আর ভাঙা হাড়। খুবলে তুলে নেওয়া হয়েছে দু’টো চোখ। কেটে নেওয়া হয়েছে নাক-ঠোঁট। ভাঙা মাথার খুলি। সারা দেহে সিগারেটের ছেঁকা। হাত-পা এমনকী যৌনাঙ্গ পর্যন্ত টুকরো টুকরো করে কাটা। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল গোটা দেশ। দাবি উঠেছিল, সৌরভকে যে ভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা জেনিভা কনভেনশনের বিরোধী। অতএব আন্তর্জাতিক আদালতে এর বিচার হোক। কেন্দ্রে তখন ক্ষমতায় অটলবিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ সরকার। তারা এর প্রতিকার করতে যা যা করার করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি পরের ইউপিএ সরকারের আমলেও। ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন সৌরভের বাবা এন কে কালিয়া। কিন্তু সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার হলফনামা দিয়ে বলে, সৌরভ ও তার সঙ্গীদের হত্যাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে দেখছে না ভারত।
বিষয়টা এই অবস্থায় ধামাচাপা পড়ে ছিল। এর মধ্যে রবিবার বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, পাকিস্তান যত দিন ২৬/১১-র মূল চক্রী জাকিউর রহমান লকভিকে গ্রেফতার না করছে, তত দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবে না ভারত। এই কথার প্রেক্ষিতে এ দিন সৌরভের বাবা ক্ষুব্ধ স্বরে বলেন, ‘‘ভারত ২৬/১১ নিয়ে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে, অথচ তার জাতীয় নায়কদের হত্যা মামলায় উদাসীন!’’ এর পরে কেন্দ্র এ দিন ফের সংসদে জানায়, সৌরভ-হত্যার প্রশ্নে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া সম্ভব নয়। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়, ‘‘দুই দেশই কমনওয়েলথ সদস্য। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী যুদ্ধ সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যেতে পারি না আমরা।’’
এই বিবৃতি আসার পরে ফের শুরু হয় হইচই। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘুরে যায় সরকারের বক্তব্য। সুষমা জানালেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত দু’দেশের মধ্যে যে সিদ্ধান্ত ছিল, তাতে ভারত-পাকিস্তান কেউই একে অপরের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করবে না বলেই ঠিক ছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তা অমার্জনীয় অপরাধ। তাই আমরা ঠিক করেছি, এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হব। শীর্ষ আদালত যদি অনুমতি দেয়, তা হলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy