Advertisement
১৬ মে ২০২৪

লোকসভায় পাশ জিএসটি বিল, আশায় শিল্পমহল

প্রত্যাশা মতোই পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি চালুর জন্য বুধবার লোকসভায় পাশ হল সংবিধান সংশোধনী বিল। কিন্তু রাজ্যসভায় কংগ্রেস, বিজেডি, এডিএমকে-র মতো দলগুলি এখনও জিএসটি বিলকে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর জন্য গোঁ ধরে রয়েছে। লোকসভায় বিল পাশের সময়েও কংগ্রেস ওয়াক-আউট করেছে। আগামী কালই রাজ্যসভায় জিএসটি বিল নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু সেখানে সরকারের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকায় তাদের কৌশলই বা কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০৪:৩৩
Share: Save:

প্রত্যাশা মতোই পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি চালুর জন্য বুধবার লোকসভায় পাশ হল সংবিধান সংশোধনী বিল। কিন্তু রাজ্যসভায় কংগ্রেস, বিজেডি, এডিএমকে-র মতো দলগুলি এখনও জিএসটি বিলকে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর জন্য গোঁ ধরে রয়েছে। লোকসভায় বিল পাশের সময়েও কংগ্রেস ওয়াক-আউট করেছে। আগামী কালই রাজ্যসভায় জিএসটি বিল নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু সেখানে সরকারের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকায় তাদের কৌশলই বা কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এমনকী লোকসভায়ও এ দিন বিলের একটি ধারা পাশ হওয়ার সময়ে তার বিরুদ্ধে বিজেপির ১২ জন সাংসদ ভোট দেন। বিজেপির দাবি, ভোটাভুটির সময়ে ভুল করে ওই সাংসদরা সবুজের বদলে লাল বোতাম টিপেছিলেন। বিল পাশের সময়ে বিজেপি-র হুইপ থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লোকসভায় উপস্থিত ছিলেন না। তা নিয়েও দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে আজ ব্যবসার কাজ সহজ হওয়া ও আর্থিক বৃদ্ধির
হার ১ থেকে ২ শতাংশ বাড়ার যুক্তি দিয়েই বিরোধীদের জিএসটি-র
পক্ষে আনার চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, জিএসটি চালু হলে গোটা দেশ একটি অভিন্ন বাজারে পরিণত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যও চাঙ্গা হবে। করের উপর কর চাপবে না। তাঁর দাবিকে সমর্থন করেছে গোটা শিল্পমহলও। জিএসটি চালু হলে নতুন করের হার কী হবে, তা নিয়ে অবশ্য যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে জিএসটি-র গড় হার ১৬.৪%। তবে দেশের একটি সরকারি উপদেষ্টা সংস্থারই
প্রস্তাব, জিএসটি-র হার ২৭% হওয়া উচিত। ফলে পরিষেবার
উপর করও এখনকার ১৪ থেকে বেড়ে ২৭% হবে বলে আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে টেলিফোন-মোবাইলের বিল থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার মতো যাবতীয় পরিষেবার খরচ এক লাফে অনেকটাই বাড়বে। কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে তৈরি জিএসটি পরিষদের পক্ষ থেকে করের হার এমন ভাবে ঠিক করার কথা, যাতে রাজ্যগুলির কোনও রাজস্ব ক্ষতি না-হয়। উদ্বিগ্ন সাংসদদের আশ্বস্ত করতে আজ জেটলি বলেন, ‘‘আমি স্বীকার করছি ২৭% যথেষ্ট চড়া। কেন্দ্র-রাজ্য মিলে অ্যালকোহলকে জিএসটি-র আওতার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পেট্রোল-ডিজেলও বাইরে থাকছে। কোনও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীই চড়া হারে কর বসাতে রাজি নন। কাজেই হার অনেকটা কম হবে।’’

বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসও প্রমাণ করছে জেটলির দাবি। ১৬০টি দেশে এই ধরনের সরল কর কাঠামো চালু রয়েছে। এক বছরের মধ্যেই তাদের বৃদ্ধির হার বেড়েছে। ভারতও এর ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করছে শিল্পমহলও। উৎপাদন শিল্পের আশা, সর্বত্র এক রকম কর কাঠামো হলে কমবে লাল ফিতের ফাঁস। বাড়বে ব্যবসা করার সুযোগ। দাম কমবে ২৫ থেকে ৩০%। ভারত যে সংস্কারের পথেই রয়েছে, সেই ইঙ্গিত যাবে দেশি-বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছেও। সব মিলিয়ে বাড়বে আর্থিক বৃদ্ধির হার। শিল্পমহলের যুক্তি, এখন কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে একগুচ্ছ কর মেটাতে হয়। সেই করের হিসেব রাখতেও প্রচুর কর্মচারী রাখতে হয়। কিন্তু ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। সব উঠে গিয়ে একটিমাত্র কর, জিএসটি চালু হলে হিসেব রাখাটাই সহজ হয়ে যাবে। বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াতের দাবি, আর্থিক বৃদ্ধি ১.৫% বাড়বে। সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, দেশে একটিই বাজার গড়ে তুলতে এটি প্রথম পদক্ষেপ। পিএইচডি চেম্বারের প্রেসিডেন্ট অলোক বি শ্রীরামের বক্তব্য, জটিল কর ব্যবস্থা সরল হওয়াটাই জরুরি।

পশ্চিমবঙ্গের শিল্পপতি সেঞ্চুরি প্লাই-এর প্রধান সঞ্জয় অগ্রবাল বলেন, ‘‘কাঁচামাল কেনা থেকে শুরু করে পণ্য তৈরি করে বাজারে ছাড়া পর্যন্ত দফায় দফায় কর দিতে হবে না। ফলে উপাদনের খরচ কমলে প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের দাম কমবে। আখেরে লাভবান হবেন ক্রেতা।’’ সফ্‌ট লাগেজ নির্মাতা ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল-এর প্রধান তরুণ মল্লিকের দাবি, কাঁচামালের দামও কমবে। কারণ কাঁচামাল সরবরাহকারীদেরও কর কম
দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘উৎপাদন শুল্ক, সেস ও যুক্তমূল্য কর মিলিয়ে শিল্প এখন যে-কর দেয়, তার তুলনায় আমদানি শুল্কও কম।’’ তাঁর দাবি, কমবে ‘ইনস্পেক্টর রাজ’-এর সমস্যাও। কারণ বহুস্তর কর কাঠামোয় লাল ফিতের ফাঁস
বেশি। ছোট-মাঝারি শিল্পও উপকৃত হবে বলে মত ফেডারেশন অব
স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ (ফসমি)-এর প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, ‘‘এই ব্যবস্থা চালু হলে অকট্রয়, সেলস ট্যাক্স, সিএসটি, রাজ্য স্তরের ভ্যাট, প্রবেশ কর, লাইসেন্স ফি-র মতো বিভিন্ন ধরনের করের বদলে একটি কর থাকলে ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE