কেন্দ্রীয় পেট্রেলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী। ফাইল চিত্র।
যে তেল পাওয়া যাচ্ছে, ভারত তা কিনছে। প্রশ্নটা নৈতিক দ্বন্দ্বের নয়, চাহিদার। কার্যত স্টেপ আউটের ভঙ্গিতে রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল কেনা নিয়ে দিল্লির মনোভাব জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় পেট্রেলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী।
ইউক্রেনের যুদ্ধের আবহে আমেরিকার একটি সংবাদ সংস্থার সাক্ষাৎকারে পুরীকে প্রশ্ন করা হয়, রুশ তেল কিনতে ভারতের নৈতিকতায় কি কোনও সমস্যা দেখা দেয় না? তখনই পুরী জানান, তেল কেনার ক্ষেত্রে নৈতিকতার চুলচেরা বিচার নয়, জাতীয় নিরাপত্তার চাহিদাই বড় কথা। তিনি বলেন, “আমাদের সরকারের উপরে কোনও চাপ নেই। দেশের স্বার্থে যা করা উচিত, সরকার সেটাই করবে।... নৈতিক দিক থেকে তো কোনও অসুবিধাই নেই। কারণ বিশেষ কোনও দেশ থেকে বেছে বেছে তেল আমদানি করা হয় না। বাজারে যে তেল পাওয়া যায়, সেটাই কেনা হয়। তা ছাড়া, এই বিষয়ে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। তেল কেনে তেল সংস্থাগুলি।”
আসন্ন জি-২০ বৈঠকে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তিনি বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অবশ্যই জি-২০ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কারণ যুদ্ধের প্রথম দিকে রুবলে দাম মেটানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। এর পরে কেনাবেচার উপরে তা হয়েছে। পরে আরও কিছুতে হতে পারে। গোটা বিষয়টির প্রভাব অন্যত্রও পড়ছে। ফলে এটি নিয়ে আলোচনা হবেই।”
ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী ইউক্রেনে হামলা চালানোর পরেই রাশিয়ার তেলের দাম অনেকখানি কমে যায়। সেই সময়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করার প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। আগ্রাসী রাশিয়াকে ভারত সাহায্য করছে, এমন অভিযোগও উঠেছিল। চাপ এখনও যথেষ্ট রয়েছে। জি-৫ গোষ্ঠী রাশিয়া থেকে তেল কেনায় বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর চেষ্টা করছে ভারত-সহ বেশ কিছু দেশের উপরে। এর আগে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন, ইউরোপ এক বিকেলে রাশিয়া থেকে যত তেল কেনে, ভারত তা আমদানি করে এক মাসে। তিনি বার্তা দিতে চেয়েছিলেন, ইউরোপের কোনও অধিকারই নেই এ ব্যাপারে ভারতকে উপদেশ দেওয়ার।
সাক্ষাৎকারে পুরী আরও বলেছেন, “পশ্চিমের দেশগুলি যদি রুশ তেল আমদানির পথ বন্ধ করে দেয়, তা হলেও আমাদের কাছে বিকল্প রাস্তা আছে। ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা করেছি আমরা।... যদি তেলের দাম বেড়ে যায়, তা হলে পাল্লা দিয়ে দেশে মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা বাড়বে। দেশের সব মানুষকে জ্বালানির সুবিধা দেওয়ার কথাও মাথায় রাখতে হয়। সেই জন্য যেখান থেকে খুশি তেল কিনতে পারে ভারত। তা ছাড়া কেউ তো ভারতকে বলেনি যে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা যাবে না।”
পুরী আরও ব্যাখ্যা করেন, “রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে একটি ভুল ধারণা রয়েছে। সাধারণত গোটা ইউরোপ এক বিকেলেই যা কেনে, আমরা গোটা এক ত্রৈমাসিকে কিনি। গত অর্থবর্ষে আমরা মোট মাত্র ০.২% রুশ তেল আমদানি করেছি। তবে হ্যাঁ, ২৪ ফেব্রুয়ারির পরে (যুদ্ধ পরিস্থিতি) রাশিয়া থেকে আমদানি উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy