(বাঁ দিক থেকে) শিবকুমার, সুখু এবং প্রতিভা। ছবি: পিটিআই।
কংগ্রেসের তিন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের সঙ্গে বৈঠকের পরে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আলোচনা হয়েছে। সমস্যা মিটে যাবে। আমরা একসঙ্গে লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ব।’’ শুক্রবার দুপুরে হিমাচল প্রদেশ কংগ্রেসের সভানেত্রী প্রতিভা সিংহ বললেন, ‘‘আমাদের দলের চেয়ে বিজেপির কাজের পদ্ধতি ভাল!’’
সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি আরও অনেক কিছু করবে। আমাদের অবস্থান দুর্বল।’’ তাঁর এই মন্তব্যের জেরে হিমাচলে কংগ্রেস সরকারের সঙ্কট আপাতত কাটছে না বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।
প্রতিভার সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতের বৈঠকে ছিলেন তাঁর পুত্র বিক্রমাদিত্য সিংহও। বুধবার সকালে হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখুর সমালোচনা করে মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। বুধের রাতে সেই ইস্তফা ফেরানোর কথা জানালেও বৃহস্পতির সকালেই আবার ‘বেসুরো’ হয়েছিলেন তিনি। এখনও বিক্রমাদিত্য সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
মঙ্গলবার রাজ্যসভার ভোটে কংগ্রেসের আইনজীবী-নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে হারিয়ে বিজেপি প্রার্থী হর্ষ মহাজন নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সুখু সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এর পর বিক্রমাদিত্যের ইস্তফার পরে সরকার পতনের জল্পনা আরও জোরালো হয়। পরিস্থিতি সামলাতে বুধবার রাজধানী শিমলায় পৌঁছেছিলেন কংগ্রেস হাইকমান্ডের ‘দূত’, কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার, হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা এবং ছত্তীসগঢ়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল।
বৃহস্পতিবার শিবকুমার গিয়েছিলেন প্রতিভা ও বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে দেখা করতে। তার পরে সন্ধ্যায় একসঙ্গে তাঁরা পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী সুখুর বাসভবনে। সেখানে দীর্ঘ বৈঠক হয়। রাতে এআইসিসির আর এক পর্যবেক্ষক ভূপেন্দ্র সাংবাদিক বৈঠক করেন প্রতিভাকে নিয়ে। বলেন, ‘‘সমস্যা মিটেছে। সরকারের কাজকর্ম সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি সমন্বয় কমিটি গড়া হবে।’’ তাঁর বক্তব্যে সায় দিয়েছিলেন প্রতিভাও।
তবে কেন শুক্রে হঠাৎ সুরবদল? কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিদ্রোহী ছ’জন কংগ্রেস বিধায়কের তড়িঘড়ি পদ খারিজ নিয়ে আপত্তি রয়েছে প্রতিভা ও বিক্রমাদিত্যের। ফলে সুখু সরকারের সঙ্কট কেটেও কাটছে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। প্রতিভার স্বামী প্রয়াত বীরভদ্র ছিলেন হিমাচলের ছ’বারের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার ভোটপর্ব শুরুর আগেই প্রতিভা সরাসরি কংগ্রেস বিধায়ক দলে ভাঙনের কথা জানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী সুখুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের কার্যকলাপে কংগ্রেস বিধায়কদের একাংশের ক্ষোভ রয়েছে। রাজ্যসভা ভোটে তার প্রভাব পড়তে পারে।’’
মঙ্গলের রাত গড়াতেই স্পষ্ট হয়েছিল তাঁর অনুমান নির্ভুল। কংগ্রেসের ছ’জন এবং ‘সরকার সমর্থক’ তিন নির্দল বিধায়কের ‘ক্রস ভোটিং’-এর জেরে রাজ্যসভা ভোটে কংগ্রেসের আইনজীবী-নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে হারিয়ে বিজেপি প্রার্থী হর্ষ মহাজন নির্বাচিত হন। ৬৮ সদস্যের হিমাচল বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘জাদুসংখ্যা’ ৩৫। ছ’জন বিধায়কের পদ খারিজের ফলে এখন রয়েছেন ৬২ জন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অঙ্ক নামল ৩৩-এ। এই মুহূর্তে কংগ্রেসের রইলেন ৩৪ বিধায়ক। বিজেপির ২৫। অর্থাৎ তিন নির্দলকে পাশে পেলেও কংগ্রেসকে ছুঁতে পারবে না তারা। কিন্তু প্রতিভার মন্তব্য নতুন করে তৈরি করল অনিশ্চয়তার আবহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy