দেশে ফেরার অপেক্ষা ছবি: রয়টার্স
পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এত ক্ষণে হয়তো আফগানিস্তানের মাটি ছেড়ে নতুন দেশে পৌঁছে যেতেন তাঁরা। কারও গন্তব্য দিল্লি, কারও আমেরিকা। কিন্তু গতকাল কাবুল বিমানবন্দরের সামনে বিস্ফোরণের ঘটনা বদলে দিয়েছে সবটা। আপাতত একরাশ উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ সঙ্গে নিয়েই দেশ ছাড়ার প্রতীক্ষায় অন্তত ২১০ জন আফগান হিন্দু ও শিখ।
এমনই এক জন কুলবিন্দর সিংহ জানিয়েছেন, আপাতত তাঁরা কাবুলের দশমেশ পিতা গুরু গোবিন্দ সিংহ কারতে পারওয়াঁ গুরুদ্বারে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই সুস্থ আছেন বলেও জানিয়েছেন কুলবিন্দর।
তবে বেজায় বিপদের মুখে পড়েছিলেন হিন্দু ও শিখদের ১৪০ জনের একটি দল। বিমানবন্দরের বিপুল ভিড়ের খবর পেয়ে বুধবারই কাবুলের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল দলটি। যাতে সময় থাকতেই নিরাপদে বিমানবন্দরে পৌঁছোনো যায়। তবে বিমানবন্দর চত্বরে পৌঁছনোর পরেও গতকাল রাত ২টো নাগাদ কাবুলের দশমেশ পিতা গুরু গোবিন্দ সিংহ কারতে পারওয়াঁ গুরুদ্বারে ফিরে যেতে বাধ্য হন তাঁরা। ওই দলের একটি বাস গুলিযুদ্ধের মধ্যেও পড়েছিল বলে খবর মিলেছে। তবে কারও বিপদ ঘটেনি।
গুলিযুদ্ধের আতঙ্ক নয়, দেশ ছাড়তে না পারার হতাশাই গ্রাস করেছে প্রত্যেককে। ওই দলের এক সদস্য বলেন, ‘‘বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে রয়েছি। কবে যে এখান থেকে বেরোতে পারব! এ যেন অনন্তকালের অপেক্ষা।’’
ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, সাতটি বাসে চড়ে তাঁরা রওনা হয়েছিলেন বিমানবন্দরের উদ্দেশে। সঙ্গে ছিল পবিত্র গুরু গ্রস্থ সাহিব। এমনিতেই বিমানবন্দরের বাইরে বিপুল ভিড়। হঠাৎই গুলিবৃষ্টি শুরু করে তালিবান। দলে মহিলা ও শিশু থাকায় কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি তাঁরা। উড়ান ধরার জন্য ১২ ঘণ্টার দীর্ঘ অপেক্ষাকে ব্যর্থ করেই নিকটবর্তী এক গুরুদ্বারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। বিস্ফোরণের পরে ফের দিল্লির উড়ান ধরার সুযোগ মিলবে কি না, তা-ও বুঝতে পারছেন না। শিখ সম্প্রদায়ের ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘৩১ অগস্টের মধ্যেই আমেরিকানরা দেশ ছাড়বে। বিমানবন্দরের দখলও নেবে তালিবান। আমাদের যে কী হবে, কিছুই জানি না।’’
আমেরিকার এক শিখ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানিয়েছে, বুধবার বহু শিখ ধর্মাবলম্বী কাবুল বিমানবন্দরের নর্থ গেটে পৌঁছেছিলেন। সেখানে তদারকির দায়িত্বে রয়েছে আমেরিকান সেনা। কিন্তু আমেরিকান সেনা ও তালিবান যোদ্ধাদের লড়াইয়ে আর উড়ান ধরা হয়নি। ওই দিন রাতে ফের তাঁরা বিমানবন্দরে ঢোকার চেষ্টা করেন। নর্থ গেটে পৌঁছেওছিলেন। কিন্তু ফের অশান্ত পরিস্থিতির জেরে ফিরতে হয়েছে। আপাতত এক নিরাপদ স্থানে পৌঁছেছেন তাঁরা।
ওই সংগঠনের এক সদস্য জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে রওনা হওয়ার ১৮ ঘণ্টা পরে গুরুদ্বারে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। আপাতত বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তাঁরা।
দিল্লি শিখ গুরুদ্বার ম্যানেজমেন্ট কমিটির প্রাক্তন সভাপতি মনজেন্দ্র সিংহ সিরসা জানিয়েছেন, কাবুল বিমানবন্দরে হামলার পরেই অনিশ্চিত আফগান শিখ ও হিন্দুদের ভাগ্য। কবে, কখন দিল্লির উড়ান পাওয়া যাবে, সেই সম্পর্কে কোনও তথ্য মিলছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy