চলছে গোলাবর্ষণ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের সীমান্তের বাতাসে এখন বারুদের গন্ধ।
ভোররাতে বায়ুসেনার বিমান জইশ শিবিরে গিয়ে বোমা ফেলে এলেও, পাকিস্তান আঁচড়ও কাটতে পারেনি বলে দাবি ভারতের। কিন্তু বিকেল থেকেই নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে গোলাবর্ষণ শুরু করে দিল পাকিস্তানি সেনা। পাল্টা প্রস্তুতি মেপে নিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লিতে তাঁর সামরিক বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন।
পাকিস্তান জবাব দিতে চাইবে আঁচ করে আজ গোটা পাকিস্তানি সীমান্তে কড়া সতর্কতা জারি করেছে সেনাবাহিনী। বিশেষত, পঞ্জাব, গুজরাত, হিমাচলের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। অমৃতসর, ফিরোজপুর, গুরুদাসপুর, পঠানকোট-সহ পঞ্জাবের ছ’টি জেলায় ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, ভারি যুদ্ধাস্ত্রবাহী বিমান ও কপ্টারে করে সীমান্তে ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করা হচ্ছে। বিজেপি সূত্রে খবর, ‘প্রিসিশন এয়ার স্ট্রাইক’ই ছিল একমাত্র পথ। এ দিনের অভিযানে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পাঁচটি এলাকা বেছে নেওয়া হয়েছিল। সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য বালাকোটে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। ১২টি মিরাজ ২০০০ বিমান অংশ নিয়েছিল। যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হয়ে সুখোই যুদ্ধবিমান ও তেল ভরার বিমান আইএল-৭৮ মিলে আরও ১০টি বিমান ছিল ভারতীয় আকাশসীমায়। আরব সাগরে ‘প্রপেক্স’ নামে মহড়ায় ব্যস্ত ছিল নৌসেনার কিছু জাহাজ-ডুবোজাহাজ। পাকিস্তানকে বিভ্রান্ত করতে সেগুলিকে পাক নৌসেনার অবস্থানের কাছাকাছি এলাকায় পাঠানো হয়। নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক সংঘর্ষবিরতির পাল্টা জবাব দেওয়াও শুরু হয়।
কূটনৈতিক ভাবে আজ নয়াদিল্লি বার্তা দিয়েছে, ভারত যুদ্ধ চায় না। পাকিস্তানও নিজেকে ‘শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্র’ বলে দাবি করেছে। এখনই পুরোপুরি যুদ্ধ না হলেও ছোটখাটো সংঘাতের সম্ভাবনা ওড়াচ্ছেন না বিশেষজ্ঞেরা। পাকিস্তানে নিযুক্ত প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শরৎ সবরবালের মতে, ‘‘ভারতকে যেমন এই ধরনের জবাব দিয়ে যেতে হবে, তেমনই পাল্টা আঘাতের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে তৈরি থাকতে হবে।’’
সেনা সূত্রে খবর, পুলওয়ামার পরে ভারতের দিক থেকে বিমান অভিযান হতে পারে ভেবে প্রস্তুতি নিচ্ছিল পাকিস্তান। তারাও নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করছিল। পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া গত সপ্তাহেই পাকিস্তানের দিকে নিয়ন্ত্রণরেখা ঘুরে গিয়েছেন। পাকিস্তানের বায়ুসেনা প্রধানের সঙ্গেও বৈঠক করেন বাজওয়া।
আরও পড়ুন: ভোররাতে পাকিস্তানের মাটিতে ধ্বংস জঙ্গি ঘাঁটি
আজ ভারতের হামলার পরে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানিয়ে দেন, পাকিস্তান নিজের সময়-সুযোগ মতো এর জবাব দেবে। পাকিস্তানের এই হুমকির পরেই দিল্লিতে তিন সামরিক বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়াকে অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে সীমান্তে সতর্কতা নিয়েও আলোচনা হয় বলে সরকারি সূত্রের খবর।
আজ বায়ুসেনার হানার পরেই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক বসে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশসচিব থেকে সমস্ত শীর্ষকর্তাদের উপস্থিতিতে বায়ুসেনার হানার পাশাপাশি পাকিস্তান প্রত্যাঘাত করলে তা সামলানো নিয়েও আলোচনা হয়।
সেনার খবর, মঙ্গলবার বিকেল থেকে পাকিস্তান জম্মু, রাজৌরি, পুঞ্চের ৫৫টি ভারতীয় চৌকিতে গোলাগুলি ছুড়েছে। তাতে পাঁচ ভারতীয় জওয়ান আহত হয়েছেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর থেকে গোলাগুলি শুরু হয়। কৃষ্ণঘাঁটি, নওশেরা, পুঞ্চ থেকে আখনুর, কোনও সেক্টরই বাদ যায়নি। ভারতও জবাব দিয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy