বায়ুর গুণমানের নিরিখে নয়াদিল্লি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী। — ফাইল চিত্র।
নয়াদিল্লির দূষণ নিয়ে নানাবিধ আলোচনা, পদক্ষেপ করা হলেও পরিস্থিতি যে সেই তিমিরেই ফের তা স্পষ্ট হল সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়। সুইৎজ়ারল্যান্ডের সংস্থা আইকিউএয়ার গোটা বিশ্বের দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে যাচ্ছে, বায়ুর গুণমানের নিরিখে নয়াদিল্লি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী। এই নিয়ে টানা চার বার দূষণের মুকুট জুটল রাজধানীর। শুধু নয়াদিল্লি নয়, গোটা ভারতের অবস্থাও সঙ্গিন। বিশ্বের দূষণ তালিকায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পরেই তৃতীয় স্থানে ভারত।
২০২৩ সালের তথ্যের নিরিখে বিশ্ব বায়ু গুণমান রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আইকিউএয়ার। সেখানে বলা হয়েছে, ভারতে গড় বার্ষিক পিএম ২.৫ প্রতি ঘনমিটারে ৫৪.৪ মাইক্রোগ্রাম। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যথাক্রমে ৭৯.৭ এবং ৭৩.৭ মাইক্রোগ্রাম। ২০২২ সালের রিপোর্টে দূষণ তালিকায় ভারতের অবস্থান ছিল অষ্টম। সেই সময়ে পিএম ২.৫ প্রতি ঘনমিটারে ছিল ৫৩.৩ মাইক্রোগ্রাম।
নতুন সমীক্ষায় বিহারের বেগুসরাই সারা বিশ্বে শহরগুলির মধ্যে সব চেয়ে দূষিত। সেখানকার বায়ুর গুণমান প্রতি ঘনমিটারে ১১৮.৯ মাইক্রোগ্রাম। বিশ্বের দূষিত প্রথম ১১টি শহরের মধ্যে লাহোর বাদে বাকি ১০টিই ভারতের। দূষিত ৫০টি শহরের মধ্যে ৪২টি ভারতের। নয়াদিল্লিতে বায়ুর গুণমান ২০২২ সালে ছিল ৮৯.১ মাইক্রোগ্রাম। ২০২৩-এ তা বেড়ে হয়েছে ৯২.৭।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মাপকাঠি অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর সহনীয় মাত্রা ৫ মাইক্রোগ্রাম। সেখানে নয়াদিল্লির দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। যার প্রভাব পড়ছে রাজধানীর নাগরিকদের স্বাস্থ্যে। শুধু নয়াদিল্লি নয়, ওই রিপোর্ট অনুযায়ী হু নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে সাত গুণ বেশি দূষণে জর্জরিত ভারতের ৯৬ শতাংশ নাগরিক। ৬৬ শতাংশ শহরে বায়ুমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম। হু নির্দেশিত মাত্রার মধ্যে রয়েছে সাতটি দেশ (অস্ট্রেলিয়া, এস্টোনিয়া, ফিনল্যান্ড। গ্রেনাডা, আইসল্যান্ড, মরিশাস ও নিউ জ়িল্যান্ড)।
সমীক্ষক সংস্থাটি জানিয়েছে, গোটা বিশ্বের ৩০ হাজার স্টেশনে বায়ুর গুণমানের নজরদারি চালানো হয়েছে। এর পাশাপাশি কম খরচ সাপেক্ষ সেন্সরও ব্যবহার করা হয়। ২০২২ সালে ১৩১ দেশের ৭৩২৩ অঞ্চল থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে ১৩৪টি দেশের ৭৮১২ অঞ্চলে বায়ুর গুণমানের রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়।
দূষণের জেরে বিশ্ব জুড়ে প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে। প্রতি ন’জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী দূষণ। হু-র রিপোর্ট জানাচ্ছে, প্রতি বছর বিশ্বে দূষণের জেরে প্রাণ হারান ৭০ লক্ষ মানুষ। পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, দূষণের জেরে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের নানা রোগ ক্রমশ বাড়ছে।
রাজধানীর দূষণের পিছনে এক দিকে যেমন রয়েছে ফসলের গোড়া পোড়ানো অন্য দিকে সেন্ট্রাল ভিস্তাকেও দায়ী করেছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, ওই ভবন তৈরি করতে গিয়ে বিপুল গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। দূষণ তালিকায় বার বার প্রথম সারিতে থাকা এমন অঞ্চলে সবুজ ধ্বংসের পরিণামই উঠে আসছে আন্তর্জাতিক সমীক্ষায়। ফসলের গোড়া পোড়ানোর প্রভাব পরিবেশে পড়লেও তার কোনও সমাধান বার করতে পারেনি কেন্দ্র কিংবা সংশ্লিষ্ট রাজ্য। ফলে উত্তরোত্তর খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি। ভোট প্রচারে ব্যস্ত রাজনীতিকদের বোধোদয় হবে কি? উঠছে প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy