নোট বাতিলের প্রশ্নে কার্যত রাজনৈতিক সংঘাতে নেমে পড়ল বিজেপি-তৃণমূল। ‘কালো টাকা বিরোধী এই অভিযানে’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় বিস্ময় প্রকাশ করে তাঁর সমালোচনায় মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তেমনই তৃণমূলনেত্রীও বিরোধীদের একজোট হওয়ার ডাক দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন বিষয়টি নিয়ে সংসদের আসন্ন অধিবেশনে শেষ দেখে ছাড়বে তাঁর দল।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৃহস্পতিবার নোট বাতিলের বিরোধিতা করে মমতারই মতো কেন্দ্রকে তুলোধনা করেছেন মায়াবতী-মুলায়মও। তাতে আরও অক্সিজেন পেয়ে যায় তৃণমূল। এ ব্যাপারে কেন্দ্র বিরোধিতায় বৃহত্তর বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার জন্য এর পরই জাতীয় রাজনীতির বন্ধুদের কাছে আবেদন করেন তৃণমূলনেত্রী।
গত মঙ্গলবার নোট বাতিলের বল পিচে পড়তেই রে রে করে উঠেছিলেন মমতা। এমনকী, প্রতিক্রিয়ায় এও বলেছিলেন, মোদী সরকারকে এখনই বরখাস্ত করা উচিত। এ প্রসঙ্গে জেটলি এ দিন বলেন, ‘‘মমতাজি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন দেখে আমি খুবই হতাশ। আশা করেছিলাম, উনি ও ওঁর দল কালো টাকা বিরোধী এই অভিযানকে সমর্থন করবেন।’’
এখানেই থামেননি জেটলি, নোট বাতিলের বিরোধিতায় জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের তথাকথিত বন্ধুরা যে অনেকেই মমতার পাশে নেই, সেই কথাটাও এ দিন তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। বলেন, ‘‘নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়েক কিন্তু এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে সমর্থন করছেন।’’
প্রসঙ্গত, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত শোনামাত্র মমতা গর্জে উঠেছিলেন ঠিকই। কিন্তু ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও দেখা যায়, একমাত্র সিপিএম ছাড়া এ ব্যাপারে তাঁর সমস্বরে কেউ মুখ খুলছেন না। ফলে, কিছুটা হলেও বুধবার গলা খাদে নামিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। কিন্তু এ দিন ফের পুরনো মেজাজে ফিরে যান মমতা। সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, ‘‘মুষ্টিমেয় কয়েকজন পুঁজিপতিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে আম জনতার লক্ষ্মীর ঝাঁপি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। যা চলছে, তা হল সম্পূর্ণ আর্থিক নৈরাজ্য।’’ তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘‘দেশের মানুষ চরম অসুবিধায় প়ড়ে বাজারহাট পর্যন্ত করতে পারছে না। আর প্রধানমন্ত্রী চলে গেলেন জাপান!’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতার ফের ঝলসে ওঠার একটা কারণ হতে পারে, গোড়ায় চুপ থাকলেও এ দিন মুলায়ম-মায়াবতীও এ ব্যাপারে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়েছেন। উভয়েরই বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি। এক প্রকার আর্থিক জরুরি অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, জেটলির সমালোচনা। হয়তো তাতে নতুন করে চটেছেন মমতা। আর তাই শুধু কেন্দ্রের সমালোচনা করে থামেননি তৃণমূল নেত্রী। বলেছেন, ‘‘দেখুন না লোকসভায় এ সব উঠবে। কাদের সুবিধা দিতে এ সব করা হচ্ছে, সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।’’
এ ব্যাপারে শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই সংসদের উভয় কক্ষে মুলতবি প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-ডেরেক ও’ব্রায়েনরা। তা ছাড়া নোট বাতিলের বিরোধিতায় সংসদে বিরোধী দলগুলির মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য তথা সমন্বয় গড়ে তোলার চেষ্টাও যে তৃণমূল করবে, এ দিন তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা। রাতে টুইট করে বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রের গরিব-বিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে একজোট হওয়ার জন্য সব বিরোধী দলকে আহ্বাণ জানাচ্ছি। আসুন, এই রাজনৈতিক এবং অথর্নৈতিক নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করি।’’
তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, জেটলি কেন মমতার সমালোচনায় সরব হলেন? কারণ, সরাসরি তৃণমূল নেত্রীর সমালোচনা তিনি সাধারণত এড়িয়ে চলেন। এমনকী বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসেও মমতার বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি!
বিজেপি সূত্র বলছে, মোদী-জেটলিও দেখতে পারছেন ইদানীং জাতীয় রাজনীতিতে কেন্দ্র বিরোধী রাজনীতিতে সব চেয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন মমতা। কিন্তু নোট বাতিলের প্রশ্নে নীতীশ-নবীন-লালুপ্রসাদ কেন্দ্রকে সমর্থন করে দেওয়ায় মমতার সেই চেষ্টা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চেয়েছেন জেটলি। এ ব্যাপারে মমতা যে নিঃসঙ্গ, তা নিয়ে কৌশলেই খোঁচা দিতে চেয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রীকে।
মমতা ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, হতে পারে নোট বাতিলের বিষয়ে মমতা-নীতীশ মতান্তর রয়েছে। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী জানেন, এই ঘটনায় মানুষের অসুবিধার বিষয়গুলি নিয়ে তাঁর দল সংসদে সরব হলে তাতে সায় দেবে কংগ্রেস, সপা-বিএসপি, বামেরাও। সেটাও সরকারের উপরে কম চাপ নয়। তা ছাড়া, নোট বাতিলই একমাত্র বিষয় নয়। বর্তমানে দেশের যা অবস্থা, তাতে মোদী-বিরোধী হাজারও হাতিয়ার রয়েছে। ফলে, কোনও না কোনও বিষয়ে সমস্ত বিরোধী দলগুলি এককাট্টা হয়েই যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy