জুডিথের সঙ্গে সুষমা। ফাইল চিত্র।
উৎকণ্ঠার সেই দীর্ঘ চুয়াল্লিশ দিন ধরে তাঁদের কাছে আশার আলো বলতে ছিলেন শুধু তিনি, সুষমা স্বরাজ। গ্লোরিয়া ডিসুজাকে ফোনে তখনকার বিদেশমন্ত্রী সুষমা বলেছিলেন, ‘‘জুডিথ স্রিফ আপকি বেটি নেহি। উও দেশ কি বেটি হ্যায়। উসকো ওয়াপস লানা হি হোগা।’’ (জুডিথ তো শুধু আপনার মেয়ে নয়। ও দেশের মেয়ে। ওকে ফিরিয়ে আনতেই হবে।)
বিদেশমন্ত্রীর এই আশ্বাস ডিসুজা পরিবারের কাছে ছিল একমাত্র সম্বল। বিপদের দিনে পাশে থাকা বুধবারের সকাল সেই ভালবাসার মানুষটির মৃত্যুসংবাদ বয়ে এনেছে। কলকাতায় সিআইটি রোডের ফ্ল্যাটের দরজা খুলে জুডিথের মা গ্লোরিয়া বললেন, ‘‘সুষমাজি যে-ভাবে আমার মতো এক জন অচেনা সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছেন, তা অবিস্মরণীয়।’’
বন্ধুর বাড়ি থেকে নিজের ফ্ল্যাটে ফেরার পথে কাবুলের রাস্তা থেকে অপহরণ করা হয়েছিল কলকাতার মেয়ে জুডিথ ডিসুজাকে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে জুডিথ সেখানে নারী ও শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছিলেন। সেটা ২০১৬ সালের ৯ জুন। তার পর থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক বার কলকাতায় ডিসুজাদের ল্যান্ডফোনে ভেসে এসেছে সুষমার সেই মমতাময় স্বর, ‘‘চিন্তা করবেন না। আমরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’’ কথাও রেখেছিলেন। ৪৪ দিন পরে জুডিথ ছাড়া পেয়ে ভাই জেরোমের সঙ্গে যখন দিল্লিতে সুষমার বাড়িতে যান, সে-দিন ফলের রস দেখে চমকে উঠেছিলেন দু’জন। মোঙ্গোলিয়া থেকে ফোনে জেরোম বললেন, ‘‘দিদি যে চা খেতে ভালোবাসে না, ফলের রস খেতে ভালবাসে, সেটাও সম্ভবত খোঁজ নিয়ে রেখেছিলেন সুষমাজি।’’
জুডিথ ফিরে আসার পরে সেই বছর তাঁর জন্মদিনের কাছাকাছি কোনও একটি দিনে ফোন করেছিলেন সুষমা। পরের বছর আবার ওই সময়ে ফোন। জেরোম বলেন, ‘‘দিদিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাননি। তবে ২০১৭-র শেষেও ফোন করে জানতে চেয়েছেন, কেমন আছি আমরা। কতটা মানবিক হলে তবেই ওই স্তরের একটি মানুষ এটা করতে পারেন!’’
জেরোম জানান, অপহরণের পরে ভারতীয় সময় রাত দেড়টা নাগাদ কলকাতার বাড়িতে ফোন করে কাবুলে ভারতীয় হাইকমিশনার বিষয়টি জানান। জেরোম তখন বেঙ্গালুরুতে। তিনি পরের দিন সকালে টুইট করেন। দুপুরে সুষমা সরাসরি কলকাতায় ফোন করে জুডিথের বাবা ডেনজিল ও মা গ্লোরিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। জেরোমের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলতেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তা। আর সপ্তাহে এক দিন করে সুষমা নিজে কলকাতায় ফোন করতে থাকেন। জুডিথ ফিরে আসার পরে দিল্লিতে নিজের বাড়ি থেকে নিজের গাড়িতে বসিয়ে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন সুষমা। জেরোম ছিলেন অন্য গাড়িতে। ‘‘নিজের মেয়েকে মা যেমন করে আগলে নিয়ে যান, সুষমাজি ঠিক সে-ভাবে দিদিকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যান। কী করে ভুলব,’’ এখনও অভিভূত জেরোম।
জুডিথ কলকাতায় নেই। বাড়ি গিয়ে জানা গেল, জুডিথ-জেরোমের বাবা ডেনজিল মারা গিয়েছেন গত ১২ মে। গ্লোরিয়ার আর-এক মেয়ে অ্যাগনেস বলেন, ‘‘সুষমাজির চলে যাওয়া দেশের পক্ষে ক্ষতি।’’
নিজের ফেসবুক পোস্টে জুডিথ লিখেছেন: অপহরণকারীদের কাছ থেকে উদ্ধারের পরে আমি তখন কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসে বসে। ২৩ জুলাই সকাল। ফোনে বলেছিলেন সুষমাজি, ‘বেটি ক্যায়সি হো? আজ ওয়াপস আনা চাহতে হো? ম্যায় এক বার তুমসে মিলনা চাহতি হুঁ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy