Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মানই নেই তো হানি কীসের, পাল্টা কেজরীর

মামলা ঠুকেছেন মানহানির। জবাব এল, মানই নেই যাঁর, তাঁর মানহানি হয় কী করে? এটা জানা ছিল, জবাব আসছে দু’হাজার পাতার। কিন্তু তার সঙ্গে যে এমন আজব গুগলি ছুড়বেন অরবিন্দ কেজরীবাল, তা বুঝি কল্পনাও করতে পারেননি অরুণ জেটলি বা তাঁর দলের কেউ!

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:১৮
Share: Save:

মামলা ঠুকেছেন মানহানির। জবাব এল, মানই নেই যাঁর, তাঁর মানহানি হয় কী করে?

এটা জানা ছিল, জবাব আসছে দু’হাজার পাতার। কিন্তু তার সঙ্গে যে এমন আজব গুগলি ছুড়বেন অরবিন্দ কেজরীবাল, তা বুঝি কল্পনাও করতে পারেননি অরুণ জেটলি বা তাঁর দলের কেউ!

দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ তুলে জেটলিকে নিশানা করার পরে কেজরীবাল ও তাঁর আম আদমি পার্টির পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে মানহানির এই মামলা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। আদালতে আজ তারই জবাব পেশ করলেন কেজরীবাল। তাঁর বক্তব্য, জনজীবনে জেটলির ‘মান’ কোথায়, যে তাঁকে রক্ষা করতে হবে? ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে অমৃতসর কেন্দ্র থেকে এক লাখের বেশি ভোটে হেরে গিয়েছেন তিনি। তাঁর ‘মান’ বলে কিছু আছে— ভারতীয় গণতন্ত্রে তা কোনও দিনই স্বীকৃতি পায়নি।

হতভম্ব বললেও বুঝি কম বলা হয়। বিজেপি নেতারা ভেবে পাচ্ছেন না এমন জবাবে কী প্রতিক্রিয়া জানাবেন। এ তো কলতলার ঝগড়া! ভোটের ময়দানে মেঠো সভায় কাদা ছোড়াছুড়ি যে হয় না তা নয়। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সে সব নিয়ে ঢি-ঢিও পড়ে। টিভির পর্দায় তুখোড় তরজায় চলে কাটাছেঁড়া। কিন্তু আদালতে আইনি লড়াইকে আপ নেতা এমন স্তরে নামিয়ে আনবেন, এটা ভাবতে পারেননি বিজেপির কেউ। এটা ঘটনা লোকসভা ভোটে জেটলি হেরেছিলেন। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্র ও সংবিধানের নিয়মকানুন মেনেই তিনি আজ কেন্দ্রে অর্থমন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার অঘোষিত দু’নম্বর ব্যক্তি। রাজনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের পরিচিত মুখ। তাঁর আবার মান কী— এমন প্রশ্ন তোলা যায় কি না, সেই প্রশ্নটাই উঠে আসছে বিজেপি নেতাদের ঘরোয়া আলোচনায়। আদালতে এ যুক্তি আদৌ টিকবে কি না, সে তো অনেক পরের কথা! প্রকাশ্যে না বললেও বিজেপির নেতাদের এক জন এই প্রশ্নও তুললেন, ভোটে জেতা-হারাটাই যদি মাপকাঠি হয়, তবে দেশের ক’টা লোকের ‘মান’ আছে? দলীয় ভাবে অবশ্য কোনও মন্তব্য করা হয়নি এ নিয়ে। বিজেপি সূত্রের খবর, আদালতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২০০০ পাতার এই রিপোর্ট আসার পর পাল্টা জবাবের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।

একটু অন্য ধরনের রাজনীতির মুখ হিসেবেই কেজরীবালের উঠে আসা। কিন্তু উত্তরোত্তর যে স্তরে নেমে এসে তিনি আদালতকেও রাজনৈতিক কাজিয়ায় ব্যবহার করছেন, তার খেই রাখাই মুশকিল হয়ে পড়ছে— কবুল করছেন বিজেপি, এমনকী কংগ্রেস নেতাদেরও একটি অংশ। বিজেপির এক নেতা স্পষ্টই বললেন, ‘‘কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের রাজনীতিক এই স্তরে নেমে এসে আক্রমণ করেন না।’’

কী ভাবে এই আক্রমণের মোকাবিলা করতে চলেছে বিজেপি?

তারা হাতিয়ার করতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে লেখা আইএএস অফিসার চেতন সাঙ্ঘির চিঠিকে। দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার বিষয়ে তদন্তের জন্য এই আমলাকেই নিয়োগ করেছিলেন কেজরীবাল। সেই সাঙ্ঘিই অভিযোগ করেছেন, জেটলির ভাবমূর্তি লঙ্ঘনের জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হয়েছিল।

বিজেপির সচিব শ্রীকান্ত শর্মার বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে সাঙ্ঘি যে চিঠি লিখেছেন তাতেই স্পষ্ট, কেজরীবাল নিচু স্তরের রাজনীতি করছেন। এবং জেটলির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি। কেজরীবাল নিজের সচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের মোড় ঘোরাতেই জেটলিকে বদনাম করার ষড়যন্ত্র করেছেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যে মানহানির মামলা করা হয়েছে, তাতে কারাবাস হবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর। তার জন্য তাঁর প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন।’’

এই হুমকিতে অবশ্য পিছপা হওয়ার পাত্র নন কেজরীবাল। উঠে এসেছেন পথে বিক্ষোভ-ধর্নার পথ বেয়ে। জেলে গেলে তখন সেটাই হয়ে উঠতে পারে তাঁর মূল আকর্ষণ তথা ‘ইউএসপি (ইউনিক সেলিং পয়েন্ট)’। আপ বলতে পারবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ চালিয়ে জেলেও গিয়েছেন তাঁদের নেতা। ফলে এটা বেশ স্পষ্ট সম্ভাব্য ফলের কথা জেনেবুঝেই কেজরীবাল শব্দ বেছেছেন জবাবের। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় লিখেছেন, অরুণ জেটলির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কোনও আক্রমণ করা হয়নি। আর জনজীবনে তাঁর ভাবমূর্তিতে আঁচ পড়ার প্রশ্ন তখনই আসে, যদি তাঁর কোনও মান থাকে। মান রক্ষার কোনও বিষয়ই যদি না থাকে, তা হলে মানহানি কোথা থেকে হয়?

আপ সূত্রের মতে, আদালতে এই জবাব দেওয়ার আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কিছু প্রবীণ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করে আটঘাট বেঁধেই আদালতে এই জবাব দেন। এর মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যাঁরা জেটলির ‘শত্রু’ বলেই পরিচিত। এমনকী, এই মুহূর্তে যে গোপাল সুব্রহ্মণ্যমকে দিয়ে দিল্লি ক্রিকেট দুর্নীতির তদন্ত করার জন্য কমিশন গঠন করিয়েছেন কেজরীবাল, তাঁর সঙ্গেও জেটলির ব্যক্তিগত তিক্ততা রয়েছে। কেজরীবাল বেছে বেছে এখন সেই ব্যক্তিদেরই সাহায্য নিচ্ছেন, যাঁরা জেটলিকে ভাল চেনেন। এবং নানা কারণে জেটলির সঙ্গে যাঁদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

national news kejriwal defamation case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE