তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ শশী তারুর। ফাইল চিত্র।
সর্বভারতীয় কংগ্রেস পরিচালনার ক্ষেত্রে সংস্কারের দাবি করে আগেই তাঁর নাম উঠেছে ‘বিক্ষুব্ধ’ জি-২৩ তালিকায়। এ বার কেরল প্রদেশ কংগ্রেসের শো-কজ়ের মুখে পড়তে হল তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ শশী তারুরকে। প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, দলের লাইন মানলে সাংসদ দলে থাকবেন। নয়তো নয়!
তারুরকে এই নিয়ে সমস্যার কারণ অবশ্য দলের কোনও দ্বন্দ্ব নয়। বরং, বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে উন্নয়নমূলক একটি প্রকল্প ঘিরে কেরলের কংগ্রেস তথা বিরোধী জোট ইউডিএফের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন। যে অবস্থান ‘যুক্তিসঙ্গত’ নয় বলে মন্তব্য করেছেন তারুর। আর তাতেই ক্ষিপ্ত রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কেরলে আপাতত বিতর্ক বেধেছে ‘সিলভারলাইন’ রেল প্রকল্প ঘিরে। দক্ষিণের তিরুঅনন্তপুরম থেকে উত্তরের কাসারগোড় পর্যন্ত ৫২৯.৪৫ কিলোমিটার দ্রুতগামী রেল প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চাইছে কেরলের বাম সরকার। রেল এবং রাজ্য সরকার মিলে গঠিত যৌথ সংস্থা ‘কেরালা রেল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড’ (কে-রেল) ওই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে। প্রকল্পের খরচ প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা। অর্থনীতি এবং পরিবেশের উপরে যে প্রভাব পড়বে, সেই কারণ দেখিয়ে প্রকল্পের বিরোধিতা করছে কংগ্রেস এবং ইউডিএফ। কিছু জায়গায় প্রকল্পের সমীক্ষার প্রতিবাদে স্থানীয় বিক্ষোভও হয়েছে। কে-রেল প্রকল্পের বিরোধিতায় সবিস্তার কারণ দেখিয়ে দক্ষিণী ওই রাজ্যের কংগ্রেস একটি চিঠি তৈরি করেছিল কেরলের মুখ্যমন্ত্রী এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারুর ওই চিঠি পড়ে দেখতে সময় লাগবে বলে জানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সই করেননি। বরং, সংবাদমাধ্যমে নিজের কলমে তিনি লেখেন, রাজনীতিতে বিরোধিতা থাকবেই। কিন্তু কেরলে উন্নয়নের প্রশ্নেও ইউডিএফ যে ভাবে বিরোধিতার অবস্থান নিয়েছে, তা ‘যুক্তিসঙ্গত’ নয়।
এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি কলকাতায় একটি বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসার আগে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে এক বেসরকারি অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল তারুরের। সেখানে কেরল সরকারের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ। এই গোটা বিষয়টিকে একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে সুধাকরন সাফ বলেছেন, ‘‘শশী তারুর এক জন ব্যক্তি মাত্র। দলের লাইন মানলে তিনি দলে থাকবেন, নচেৎ নয়!’’ কেরলের রাজনীতিতে সুধাকরণ কট্টর বাম-বিরোধী বলেই পরিচিত। সুধাকরন আরও বলেছেন, ‘‘ব্যক্তিগত মত থাকতেই পারে। তবে দলের কোনও সাংসদ দলের সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করতে পারেন না। সেটা তারুর হোক বা সুধাকরন!’’ কেরলের বিরোধী দলনেতা ভি ডি সতীশনও সুধাকরনের পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছেন, প্রদেশ সভাপতির বক্তব্যই শেষ কথা। সুধাকরন মেনে নিয়েছেন, তারুরের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলে তাঁকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে প্রদেশ সভাপতি উল্লেখ করেছেন, তারুরের অন্য কোনও ‘উদ্দেশ্য’ আছে বলে তাঁরা মনে করেন না।
তারুর অবশ্য এই হুঁশিয়ারির জবাবে এখনও মুখ খোলেননি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, চিঠিতে সঙ্গে সঙ্গে তিনি সই করেননি মানেই দলের উল্টো দিকে অবস্থান নিয়েছেন— ব্যাপারটা এমন নয়। তিনি গোটা বিষয়টা যুক্তি দিয়ে বিচার করার পক্ষপাতী।
মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন অন্য দিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিরোধিতা থাকলেও তাঁরা প্রকল্প পিছোতে চান না। সিপিএমের একটি জেলা সম্মেলনের অবসরে বিজয়নের বক্তব্য, ‘‘প্রাথমিক বিরোধিতার পরেও অনেক প্রকল্প কেরলে হয়েছে, মানুষ তার সুফল পাচ্ছেন। কে-রেল প্রকল্প সম্পূর্ণ হতে অন্তত পাঁচ বছর লাগবে। এখন শুরু না করলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সব কাজ এখনকার জন্য নয়। কিছু কাজ পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও করে যেতে হয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy