ভি এস অচ্যুতানন্দনের ৯২ বছরের কাঁধে ভর দিয়ে বাম জোটই ক্ষমতায় ফিরছে কেরলে। একই সঙ্গে বিজেপিও এই প্রথম খাতা খুলতে পারে দক্ষিণের এই রাজ্যে। আজ কেরলে ভোট পরবর্তী বিভিন্ন সমীক্ষা সে কথাই বলছে।
কেরলে প্রতি পাঁচ বছর অন্তরই ক্ষমতা বদল হয়। গত চার দশক ধরে এই ধারাই চলে আসছে। সে দিক থেকে এ বার কংগ্রেস জোটকে সরিয়ে বামেদের ক্ষমতায় ফেরা আশ্চর্য নয়। এমনিতেও পাঁচ বছরে খুব সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কংগ্রেস সরকার চালিয়েছে। ১৪০ আসনের বিধানসভায় কংগ্রেস জোটের মাত্র ৭২ জন বিধায়ক ছিলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজনীয়তার থেকে মাত্র এক জন বেশি। বাম জোটের বিধায়ক ছিলেন ৬৮ জন। উমেন চান্ডি সরকার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রশংসিত হলেও মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্যের অধিকাংশ মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। সমীক্ষা বলছে, এ বার বাম জোট ক্ষমতায় ফিরলেও তাঁদের পক্ষে বিরাট সমর্থন নেই।
বামেদের ক্ষমতায় ফেরার অর্থ, সিপিএম নেতৃত্বের সামনে নতুন ধাঁধা তৈরি হওয়া। সব থেকে বড় প্রশ্ন, কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন? ১৭ বছর রাজ্য সম্পাদক থাকার পর এ বার ভোটে লড়েছেন দলের রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন। মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে চান তিনি। কিন্তু ৯২ বছরের ভি এস অচ্যুতানন্দনই ছিলেন বাম জোটের ক্ষমতায় আসার প্রধান চাবিকাঠি। তিনিই ছিলেন প্রচারের মুখ। এমনকী, পিনারাইয়ের কেন্দ্রেও ভি এস-কে প্রচারে যেতে হয়েছিল। তাঁর কাঁধে চেপে দল ক্ষমতায় এলে ভি এস যে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি ছেড়ে দেবেন না, তা তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন। তখন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সামনে নতুন সঙ্কট তৈরি হবে। একটি সূত্র বলছে, প্রথম এক বছর ভি এস-কে মুখ্যমন্ত্রীর গদি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। তার পর পিনারাই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কিন্তু এক বছর পরে ভি এস সরে দাঁড়াতে রাজি হবেন কি না, তা নিয়ে তাঁর অনুগামীরাই সংশয়ে।
কেরলের ভোট পরবর্তী সমীক্ষা বিজেপির জন্যও খুশির খবর। রাজ্যে পাঁচ বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে ৬% ভোট পেয়েছিল বিজেপি। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে তা বেড়ে ১০% ছাপিয়ে যায়। গত বছর পুরসভা ও পঞ্চায়েতে প্রায় ১৪% ভোট পেয়েছে বিজেপি। এ বার বিধানসভা ভোটে অন্তত একটি আসন জিতে বিধানসভায় ঢুকতে মরিয়া ছিলেন অমিত শাহ। যার জন্য দু’টি কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। এক, কেরলে যুযুধান কংগ্রেস ও বামেদের প্যাঁচে ফেলতে পশ্চিমবঙ্গে জোটের কথা নিয়ে প্রচারে নামে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহর মুখে বারবার ‘বাংলায় দোস্তি, কেরলে কুস্তি’-র কথা শোনা গিয়েছে। এঢ়ভা সংগঠনের নতুন তৈরি দলের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল বিজেপি। কেরলে খ্রিস্টান ও মুসলমান ভোটের পরিমাণ ৪৪ শতাংশের বেশি। সেই ভোটের মায়া ছেড়ে বিজেপি হিন্দু উচ্চবর্ণ নায়ার ও ওবিসি এঢ়ভা ভোটের একাংশ ঝুলিতে টানার লক্ষ্য নেয়। এই এঢ়ভা সম্প্রদায় বরাবর বামেদের ভোট ব্যাঙ্ক বলেই পরিচিত ছিল। তবে তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের যুক্তি, ‘‘বিজেপির মতো জাতীয় দলের কোনও রাজ্যে একটি, দু’টি আসন পাওয়ায় ঢাক পেটানোর কিছু নেই। কারণ ১৪০ আসনের বিধানসভায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারবে না।’’ কিন্তু কংগ্রেসের আশঙ্কার দিক হল, অসমের পাশাপাশি কেরলেও ক্ষমতা হারানোর অর্থ, গোটা
দেশের মাত্র ৬টি রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy