ফাইল চিত্র।
দেরিতে পৌঁছেও উত্তর ভারতে এখনও স্বমূর্তি ধরেনি বর্ষা। তার মধ্যেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে বজ্রপাতে মৃত্যু। গত এক সপ্তাহে বিহারেই বাজ পড়ে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু বিহার নয়, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে বছরের এই সময় বজ্রপাতে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়। ২০২০-’২১ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ওই বছর গোটা দেশে বজ্রপাতে দেড় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যা ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ধস, হিটস্ট্রোক বা ঠান্ডায় মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে ঢের বেশি। এবং পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, বজ্রপাতে মৃত্যু সব চেয়ে বেশি গ্রামীণ এলাকায়।
বর্ষার সময় বজ্রপাতে মৃত্যুকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবেই গণ্য করা হয় সাধারণত। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক এবং ভারতীয় মৌসম ভবন প্রকাশিত ২০২০-’২১ সালের রিপোর্ট বলছে, ওই বছর ভারতে এক হাজর ৬৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে। সব চেয়ে বেশি উত্তর ভারতে। তার মধ্যে বিহারে মৃত্যু হয়েছে ৪০১ জনের, উত্তর প্রদেশে ২৩৮ জনের এবং মধ্যপ্রদেশে ২২৮ জনের। আবহবিদেরা বলছেন, ২০১৯-’২০ থেকে ২০২০-’২১ সালের মধ্যে দেশে বজ্রপাতের হার ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। যার পরিণাম বাজ পড়ে এত মানুষের মৃত্যু। তাঁদের আশঙ্কা, সরকারি খাতায় বজ্রপাতের মৃত্যুর সংখ্যা যা দেখানো হয়, আসল সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, অনেক মৃত্যু নথিভুক্তই হয় না।
কিন্তু বজ্রপাতের পরিমাণ এত বাড়ছে কেন? আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বজ্রপাতের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। হিমবাহ গলনের ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্প বাড়ছে। আর একটি কারণ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত দূষণ। দূষণের মাত্রা যত বাড়ছে, গড় তাপমাত্রা তত বাড়ছে। ফলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হওয়ার আদর্শ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশ জুড়ে বজ্রপাতে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে ৯৬ শতাংশেরও বেশি মৃত্যু ঘটে গ্রাম এলাকায়। ফাঁকা মাঠে চাষের কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে বহু মানুষের। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, খোলা মাঠে বাজ ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তা সহজেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু শহরাঞ্চলে তা ঘরবাড়ি থাকায় তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। আবহবিদেরা বলছেন, মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হলে ফাঁকা মাঠে না গিয়ে বাড়িতেই থাকা, কিংবা বাইরে থাকলে কোনও বাড়ির নীচে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার মতো বজ্রপাতের কোনও সতর্কবার্তা দেওয়া যায় কি না, সে দিকেও জোর দিচ্ছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy