আলোচনা: রামপুরের এক নির্বাচনী সভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভির সঙ্গে রামপুরের বিজেপি প্রার্থী জয়া প্রদা। সোমবার। পিটিআই
অভিনেত্রী ও রামপুরের বিজেপি প্রার্থী জয়া প্রদাকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে বিপাকে সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খান। নির্বাচনী সভায় তাঁর মন্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। জাতীয় মহিলা কমিশন আজমকে শুধু ভর্ৎসনাই করেনি, জানিয়েছে, সমাজবাদী পার্টির নেতার প্রার্থীপদ খারিজের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাতে চলেছে তারা। মহিলা কমিশন আজমকে শো-কজ নোটিস পাঠিয়েছে। রাতে আজমকে শাস্তি হিসেবে তিন দিনের জন্য ভোট প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি, মহিলার সম্ভ্রমহানির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। চাপের মুখে আজম অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি জয়াকে নিয়ে কিছু বলেননি, তাঁর নিশানায় ছিলেন আরএসএসের এক কর্মী, যিনি ১৫০টি বন্দুক নিয়ে তাঁকে খুঁজছেন। সঙ্ঘের খাকি প্যান্ট তিনিই পরেন।
গত কালই রামপুরে ভোটের সভায় জয়ার নাম না করে আজম খান বলেছিলেন, ‘‘দশ বছর উনি রামপুরের রক্ত চুষেছেন। আমি হাত ধরে ওঁকে এখানে এনেছিলাম। রাস্তাঘাট সব চিনিয়েছি। কাউকে ছুঁতে পর্যন্ত দিইনি। কোনও খারাপ কথাও বলিনি। দশ বছর ধরে ওঁকে আপনারা জনপ্রতিনিধি করেও পাঠিয়েছেন। কিন্তু হিন্দুস্তানওয়ালো.... ওঁকে চিনতে আপনাদের সতেরো বছর লেগে গিয়েছে, আমি কিন্তু সতেরো দিনেই বুঝেছি ওঁর অন্তর্বাসের রঙ খাকি।’’ মঞ্চে তখন উপস্থিত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। তিনি অবশ্য প্রতিবাদ করেননি।
সংবাদমাধ্যমে আজমের সেই ভিডিয়ো সামনে আসতেই সব স্তরে নিন্দার ঝড় ওঠে। জয়া দাবি তোলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে আজমের ভোটে লড়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া উচিত। তিনি অবশ্য একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে রাজি নন। জয়া বলেন, ‘‘এটা নতুন কিছু নয়। ২০০৯ সালে সমাজবাদী পার্টিরই প্রার্থী হয়েছিলাম, তখন আমাকে সমর্থন করা দূরের কথা, আজম খান যে সব মন্তব্য করেছিলেন, মহিলা হয়ে সে কথা উচ্চারণও করতে পারছি না।’’ আজমকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘‘আমি মরে গেলে কি আপনি (আজম) সন্তুষ্ট হবেন? তবে যদি ভেবে থাকেন, আমি ভয়ে রামপুর ছেড়ে যাব, তা হলে ভুল ভাবছেন। আমি এলাকা ছাড়ব না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জয়ার পাশে দাঁড়িয়ে এ দিন মুলায়ম সিংহের উদ্দেশে টুইট করেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিনি লিখেছেন, ‘‘মুলায়ম ভাই, আপনি সমাজবাদী পার্টির নেতা। আপনার সামনে রামপুরের দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ হচ্ছে। ভীষ্মের মতো চুপ করে বসে থাকার ভুল করবেন না।’’ অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পল এবং আর এক অভিনেত্রী ও সমাজবাদী পার্টির নেত্রী জয়া বচ্চনকে ট্যাগ করেন সুষমা। এখনও পর্যন্ত অবশ্য সমাজবাদী পার্টির কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়লেও আজমের নিন্দা করেছে কংগ্রেস। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির টুইট, ‘‘এই ধরনের মন্তব্য করে অত্যন্ত নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছেন আজম খান। এমন কথাবার্তা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকারক। আশা করি, নির্বাচন কমিশন ও অখিলেশ যাদব বিষয়টি দেখবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন।’’ গুজরাতে ভোটপ্রচারে গিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ‘‘আজম খানই শুধু নয়, সমাজবাদী পার্টি ও বিএসপিরও উচিত দেশের মহিলাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।’’
জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মার মতে, মহিলা ভোটারদের উচিত, আজমের মতো লোকেদের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া। তবে চাপের মুখে সমাজবাদী পার্টির নেতার মন্তব্য, ‘‘আমি রামপুরের নয় বারের বিধায়ক, মন্ত্রীও ছিলাম। কী বলতে হয়, জানি। কারও নাম করে অপমান করেননি। প্রমাণ করতে পারলে, প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেব।’’ আজম সংবাদমাধ্যমকেও আক্রমণ করেছেন।
আর এ সবের মধ্যেই জয়ার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা অমর সিংহের মন্তব্য, ‘‘আজম খান হলেন ভারতীয় রাজনীতির আবর্জনা। আমি চাই দেবী ভগবতী জয়ার মধ্যে আবির্ভূতা হয়ে রাজনীতির অসুরকে ধ্বংস করুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy