রাজকুমারী দিয়াকে লেবু-লঙ্কার মালা পরানো হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হলে এককালে উলুখাগড়াদের প্রাণ যেত।
দিন বদলেছে। মহারাজা-মহারানিরা ভোটের যুদ্ধে নামেন। উলুখাগড়াদের সামনেই হাত জোড় করে দাঁড়াতে হয়।
আমজনতা পুষ্পবৃষ্টি করলে রাজা-রানিরা মাথা পেতে নেন। ফুলের বদলে গ্রামের বয়স্ক জনেরা ‘বুরি নজর’ থেকে বাঁচতে লেবু-লঙ্কার মালা পরিয়ে দেন। তা-ও আশীর্বাদ হিসেবে মাথা পেতে নেন রাজকুমার-রাজকন্যারা।
১৯৬২-তে জয়পুরের মহারানি গায়ত্রী দেবী ভোটের লড়াইয়ে নেমে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন। সে বছর রেকর্ড ব্যবধানে জেতার পর আরও দু’বার স্বতন্ত্র পার্টির টিকিটে লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন কোচবিহারের গায়ত্রী।
এ বার লোকসভা ভোটের ময়দানে সম্পর্কে তাঁরই নাতনি দিয়া কুমারী। তাঁর সঙ্গে আরও দু’জন রাজপরিবারের সন্তান প্রজাদের ভোট চাইতে রাস্তায় নেমেছেন। আলওয়ারে কংগ্রেসের জিতেন্দ্র সিংহ, ঝালাওয়ার-বারাণে দুষ্যন্ত সিংহ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গায়ত্রী দেবীর স্বামী সওয়াই দ্বিতীয় মান সিংহের প্রথম পক্ষের পুত্র ছিলেন জয়পুরের শেষ মহারাজা সওয়াই ভবানী সিংহ। তাঁরই কন্যা রাজকুমারী দিয়া এ বার লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে। রাজসমন্দ থেকে বিজেপির প্রার্থী। এক বার বিধায়কও হয়েছিলেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য ভোটে লড়েননি।
লোকসভার ময়দানে দিয়া কুমারী অবশ্য নিজেকে ‘রাজার বেটি’ নন, পরিচয় দেন ফৌজি অফিসারের কন্যা হিসেবে। মনে করিয়ে দেন, ভবানী সিংহ সেনাবাহিনীতে প্যারাশুট রেজিমেন্টের মতো বিশেষ বাহিনীর শীর্ষ পদে ছিলেন। রাজস্থানে এমনিতেই এ বার বিজেপির প্রধান হাতিয়ার, নরেন্দ্র মোদীর সন্ত্রাস-দমন ও সেনা জওয়ানদের বীরত্ব। রাজস্থানি লেহরিয়া নকশার শিফন শাড়িতে ঘোমটা টেনে দিয়া একের পর এক জনসভায় বলছেন, ‘‘সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে হানা দেওয়ার জন্য আমার বাবা মহাবীর চক্র পেয়েছিলেন।’’ দিয়াকে লেবু-লঙ্কার মালা পরিয়ে দেন গ্রামের বয়স্কেরা। দিয়া বলেন, ‘‘এ আসলে আশীর্বাদ। মানুষ আমাকে খারাপ নজর থেকে রক্ষা করতে চান।’’
গায়ত্রীদেবী যেমন পর্দানসীন মহারানির ছক ভেঙে রাজনীতিতে নেমেছিলেন, দিয়াও রাজঘরানার প্রথা ভেঙে বিয়ে করেছিলেন সাধারণ পরিবারের নরেন্দ্র সিংহকে। দিয়াই এখন জয়পুরের আমের দুর্গ, জয়গড় দুর্গ ও সিটি প্যালেসের কর্ণধার। সেই সিটি প্যালেসেরই কোষাধ্যক্ষ ছিলেন নরেন্দ্র। রাজপুতদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে রাজপরিবারের বাইরে বিয়ে করেছিলেন দিয়া। তার পর রূপকথার মতোই ২০১৩-তে নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিংহ, বসুন্ধরা রাজের উপস্থিতিতে জয়পুরে ২ লক্ষ মানুষের সামনে বিজেপিতে যোগ দেন। দিয়ার ছেলে পদ্মনাভকে ভবানী সিংহ দত্তক নিয়ে রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী করে দিয়ে গিয়েছিলেন। দিয়ার হয়ে প্রচারে নামছেন পদ্মনাভ, রাজমাতা পদ্মিনী দেবীও।
কংগ্রেসের শিবিরেও অবশ্য রাজারাজড়া রয়েছেন। আলওয়ার থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী, রাজপরিবারের ভাঁওয়ার জিতেন্দ্র সিংহ। মনমোহন সরকারের আমলে জিতেন্দ্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও ছিলেন। দিয়ার বাবা ভবানী সিংহ একবার কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী হয়েও হেরে গিয়েছিলেন। আর জিতেন্দ্রর মা, মহেন্দ্র কুমারী বিজেপির টিকিটে সাংসদ হয়েছিলেন। জিতেন্দ্র আলওয়ারের রাস্তায় প্রচারে বের হলে ‘ভাঁওয়ার’ বলে জয়ধ্বনি দেন আলওয়ারের আমজনতা। জিতেন্দ্র মনে করিয়ে দেন, তাঁরা বংশপরম্পরায় আমজনতার সেবা করছেন। আলওয়ারের ফুলবাগ প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে জনতার ভিড়ে মিশে যান জিতেন্দ্র। দেহাতি মানুষের দু’হাত জড়িয়ে ধরে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের জন্য কে কাজ করে? আমরাই তো বংশপরম্পরায় আপনাদের জন্য কাজ করছি।’’
বিজেপি নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শুধু দিয়া কুমারী ও জিতেন্দ্র সিংহ নন। রাজস্থানের ভোটে এবার তিন-তিনজন রাজপরিবারের প্রার্থী। ঢোলপুরের প্রাক্তন মহারানি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের পুত্র দুষ্যন্ত সিংহ ঝালাওয়ার-বারাণ থেকে এ বারও ভোটে লড়ছেন। ‘রাজস্থান রয়্যালস’-এর তালিকা থেকে তাঁকেও বাদ দেওয়া চলে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy