নোটের ধাক্কা টোলে। তার ধাক্কা রাজকোষে।
নোট বাতিলের ফলে নগদ নিয়ে সমস্যায় দেশের সমস্ত জাতীয় সড়ক থেকে টোল ট্যাক্স আদায় বন্ধ রেখেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আজ, শুক্রবার নিয়ে টানা ২২ দিন এই টোল আদায় বন্ধ থাকছে। আর এই ২২ দিনে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১২৫৪ কোটি টাকা।
লোকসানের এই বহর বয়ে চলা অসম্ভব বুঝে কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রকের কাছে টোল ট্যাক্স ফেরানোর আর্জি জানিয়েছিলেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। ক্ষতির বহর বুঝে সেই আর্জি মেনে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে দেশের ৩৭০টি টোলপ্লাজায় ফের কর আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রক। একে নোটের আকাল। তার মধ্যে টানা তিন সপ্তাহের বেশি টোল ট্যাক্স আদায় বন্ধ থাকার পরে ফের তা চালু হলে অনেক জায়গাতেই গোলমাল হতে পারে, এমন আশঙ্কা থাকছেই। সেই কারণেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) স্থানীয় পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন।
মন্ত্রক সূত্রের খবর, দেশের ৯৩ হাজার কিলোমিটার জাতীয় সড়কের উপর ৩৭০টি টোল প্লাজা রয়েছে। এই সব প্লাজা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘরে দৈনিক গড়ে ৫৭ কোটি টাকা ঢোকে। সহজ পাটিগণিতের হিসেবেই টানা ২২ দিন বন্ধ থাকায় টোল বাবদ সরকারের ১২৫৪ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সেই কারণেই এনএইচএআই কর্তৃপক্ষ দ্রুত টোল ফেরানোর আর্জি জানিয়েছিলেন।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, টোল বাবদ সবচেয়ে বেশি আদায় হয় নয়াদিল্লি-মুম্বই আট নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে। তবে নাসিক থেকে তিরুঅনন্তপুরমগামী সড়কে নাসিকের উপর যে টোল প্লাজা, সেখান থেকে প্রতি দিন আদায় হয় ৩ কোটি টাকা। যা গোটা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
টোল বাবদ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জাতীয় সড়ক থেকেও আয় কম হয় না কেন্দ্রের। মন্ত্রক জানিয়েছে, এ রাজ্যে ১৬টি প্লাজা থেকে টোল আদায় করা হয়। এর মধ্যে বম্বে রোডের উপর ধূলাগড় টোলপ্লাজা থেকে দিনে রাজস্ব আসে গড়ে ৫৬ লক্ষ টাকা। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর ডানকুনি প্লাজা থেকে প্রতি দিন গড়ে ৩৭.২ লাখ, পালসিট থেকে গড়ে ৩৪.২৫ লাখ টাকা রোজগার হয় মন্ত্রকের। সব মিলিয়ে ১৬টি টোল প্লাজা থেকে দৈনিক গড়ে তিন কোটি টাকা আদায় হয়। এই পুরো টাকাটাই লোকসানের ঘরে চলে গিয়েছে।
মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘নগদের জোগান পর্যাপ্ত না থাকায় বেশ কিছু জায়গায় সমস্যা হচ্ছিল। সেই কারণে টোল প্লাজাগুলি সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু এই অন্তর্বর্তী সময়ে দেশের প্রতিটি টোল প্লাজাকে নগদবিহীন লেনদেনের জন্য উপযুক্ত করা হয়েছে। এ বার থেকে কার্ডের বিনিময়েও কর নেওয়া হবে। পাশাপাশি নতুন টাকাতেও কর নেওয়া হবে।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘নোট বাতিলের ফলে সাময়িক ক্ষতি হলেও কর আদায়ের পরিকাঠামো আরও শক্তিশালী হয়েছে।’’ মন্ত্রকের এই নয়া ব্যবস্থা মেনে নিয়েছে এনএইচআইএ।
শুধু কার্ড নয়, টোল ট্যাক্স দেওয়ার জন্য ‘ফাস্ট্যাগ’ নামে এক ধরনের প্রিপেইড ব্যবস্থাও চালু করেছে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। এতে নির্দিষ্ট দামের ট্যাগ কিনে গাড়ির সামনের কাচে লাগিয়ে দিতে হবে। টোল প্লাজায় সেই গাড়ি এলে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে টোল কাটা হয়ে যাবে। নগদে কিছু দিতে হবে না। এই ‘ফাস্ট্যাগ’ কেনার জন্য ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরনো ৫০০-র নোট নেওয়া হবে। এর ফলে বহু লরি বা ট্রেলার মালিক ‘ফাস্ট্যাগ’ কিনে নেবেন বলে মন্ত্রকের দাবি। তবে ২০০-র বেশি রিচার্জ করলে তবেই পুরনো ৫০০ টাকার নোট নেওয়া হবে। পুরো ব্যবস্থাটি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ক কর্তৃপক্ষের অফিসারদের টোল প্লাজায় শিবির করে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে।
ভোল বদল
• জাতীয় সড়কে ফের টোল চালু আজ, শুক্রবার মধ্য রাত থেকে
• ঝামেলা ঠেকাতে প্লাজায় থাকবে পুলিশ
• ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে টোল দেওয়া যাবে
• চালু হচ্ছে প্রিপেড ব্যবস্থাও
• প্রিপেড ট্যাগ লাগাতে হবে উইন্ডস্ক্রিনে
• পুরনো ৫০০ টাকা চলবে অন্তত ২০০ টাকার ট্যাগ কিনলে
• পুরনো টাকা ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত
• নগদ লেনদেনও থাকছে পাশাপাশি
• টোল ছাড়ের ২২ দিনে কেন্দ্রের ক্ষতি ১২৫৪ কোটি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy