Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
mahatma gandhi

Gandhi-Savarkar: গাঁধীর অনুরোধে সাভারকর ব্রিটিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেন, রাজনাথের মন্তব্যে বিতর্ক

রাজনাথের কড়া সমালোচনায় সরব হয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম। দু’দলেরই অভিযোগ, বিজেপি-আরএসএস ইতিহাসকে বিকৃত করার অভ্যাস ছাড়তে পারেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৪৮
Share: Save:

বিনায়ক দামোদর সাভারকর কারামুক্তির জন্য কার পরামর্শে বারবার ব্রিটিশ শাসকদের কাছে মুচলেকা দিতেন এই নিয়ে সঙ্ঘ-বিজেপি বনাম কংগ্রেস-বামেদের বিরোধ মাথা চাড়া দিল ফের। সূত্রপাত সাভারকারকে নিয়ে একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের মন্তব্যে। বিতর্ক ইন্ধন জুগিয়েছেন আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবতও।

গত কালের ওই অনুষ্ঠানে রাজনাথ দাবি করেন, “মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর অনুরোধেই সাভারকর অনেক বার ব্রিটিশের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে মুচলেকা দিয়েছিলেন। মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদীরা অন্যায় ভাবে তাঁকে ফ্যাসিবাদী তকমা দিয়ে থাকেন।” এই মন্তব্যের জন্য রাজনাথের কড়া সমালোচনায় সরব হয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম। ইতিহাসের তথ্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে দু’দলেরই অভিযোগ, বিজেপি-আরএসএস ইতিহাসকে বিকৃত করার অভ্যাস ছাড়তে পারেনি।

কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘মোদী সরকারে হাতে গোনা যে কয়েকটি সম্ভ্রান্ত মুখ রয়েছে, রাজনাথ সিংহ তার অন্যতম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সঙ্ঘের নতুন করে ইতিহাস লেখার বদভ্যাস থেকে তিনিও মুক্ত নন!’’ গাঁধী বিনায়ক দামোদর সাভারকরের ভাই এন ডি সাভারকরকে চিঠি লিখেছিলেন ১৯২০ সালের ২৫ জানুয়ারি। সেই চিঠি টুইট করে রমেশের দাবি, “প্রক্ষিপ্ত ভাবে সেই চিঠি সামনে এনে তার বক্তব্যকে বিকৃত ও অপব্যাখ্যা করেছেন রাজনাথ। তবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটাই বিজেপি-আরএসএসের স্বভাব।”

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘ইতিহাসকে নতুন করে লেখার আরও একটা ভয়ঙ্কর চেষ্টা এটা! সাভারকরের মুচলেকার ঘটনা ঘটেছিল ১৯১১ ও ১৯১৩ সালে। গাঁধী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন ১৯১৫ সালে। মোদ্দা কথা হল, আরএসএস কখনও স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ ছিল না। তারা বরং সুযোগ মতো ব্রিটিশদের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। এই ধরনের তথ্যবিকৃতি ঘটিয়ে সত্যকে মুছে দেওয়া যাবে না!’’ সিপিএমের তরফে আরও বলা হয়েছে, গাঁধী তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ১১ বার জেলে গিয়েছিলেন এবং এক বারও মুচলেকা দেননি। তিনি তা হলে সাভারকরকে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করার পরামর্শ দিতে যাবেন কেন? এ সবই ‘অসত্য’ দিয়ে ইতিহাসের একটা অধ্যায় মুছে ফেলার চেষ্টা বলে তাদের অভিযোগ।

বিজেপি সাংসদ রাকেশ সিংহ পাল্টা কটাক্ষ ছুড়েছেন তৎকালীন কংগ্রেস নেতাদের ব্রিটিশ-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে। টুইটে লিখেছেন, “কংগ্রেস চিরকালই সাভারকরের বিরোধিতা করে এসেছে। সাভারকর কখনওই ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে মেলামেশা করেননি। মাতৃভূমির জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। দেখা গিয়েছে, কংগ্রেসের নেতারাই বরং মাউন্টব্যাটনের বাসভবনে গিয়ে নৈশাহার সারতেন।”

রাজনাথের মতে, সাভারকার ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও কট্টর জাতীয়তাবাদী। ভারতের ইতিহাসের এই আইকনকে নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে তাঁকে খাটো করে দেখানোটা অন্যায়। সাভারকরের প্রশংসায় প্রতিরক্ষান্ত্রী কাল দাবি করেন, “কট্টর স্বাধীনতাকামী ছিলেন বলেই ব্রিটিশরা তাঁকে দু’বার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। বিশ শতকে তিনিই ছিলেন ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ। দেশের সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও কূটনৈতিক অবস্থানের প্রবক্তা।”

রাজনাথের মতে, সাভারকরের হিন্দুত্ব কোনও ধর্মের সঙ্গে নয়, সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর হিন্দুত্বকে আরও গভীর ভাবে বুঝতে হবে। একই সুরে সঙ্ঘ-প্রধান ভাগবতও বলেন, “সাভারকরের হিন্দুত্ব কখনও সংস্কৃতি বা উপাসনার পদ্ধতির ভিত্তিতে বিভেদ করেনি। সাভারকর বলতেন, আমরা একই দেশমায়ের সন্তান, পরস্পরের ভাই। দেশের জন্য আমরা একসঙ্গে লড়ছি।” সাভারকর মুসলিম বিরোধী ছিলেন না বোঝাতে ভাগবত উল্লেখ করেন, তিনি উর্দুতে বেশ কিছু গজ়ল লিখেছিলেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE