Advertisement
১৬ মে ২০২৪

গাঁধীও ‘লিঞ্চিং’ বলেছিলেন...

বিরোধী দল থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের বৃহদংশই কিন্তু মনে করছেন, গণপ্রহারে হত্যার ঘটনাকে ‘লিঞ্চিং’ না বলার কী অর্থ, তা বোধগম্য নয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১৬
Share: Save:

নাগপুরে বিজয়াদশমীর অনুষ্ঠানে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত দাবি করেছেন, লিঞ্চিং (গণপ্রহারে হত্যা) পশ্চিমি ব্যাপার। ভারতের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলিকে ‘লিঞ্চিং’ বললে ভারতের এবং হিন্দু সমাজের অবমাননা করা হয়।

বিরোধী দল থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের বৃহদংশই কিন্তু মনে করছেন, গণপ্রহারে হত্যার ঘটনাকে ‘লিঞ্চিং’ না বলার কী অর্থ, তা বোধগম্য নয়। অনেকে এ-ও মনে করিয়েছেন যে, এ দেশে সাম্প্রদায়িক হিংসা প্রসঙ্গে ‘লিঞ্চিং’-এর কথা তুলেছিলেন স্বয়ং মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীই। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, ভাগবত কি তবে গাঁধীকেও ভারতীয় সংস্কৃতির অবমাননাকারী বলে চিহ্নিত করবেন?

কী বলেছিলেন গাঁধী? ১৯৪৮ সালের ২২ জানুয়ারি আনন্দবাজার পত্রিকায় (ছবিতে) প্রকাশিত হয় ২০ জানুয়ারি দিল্লিতে গাঁধীপ্রদত্ত ভাষণের খবর। তাতে দেখা যাচ্ছে, গাঁধী বলেন—‘‘মুসলমানের বিরুদ্ধে শত্রুতা ভারতের বিরুদ্ধেই শত্রুতা বলিয়া গণ্য হইবে। সকলের প্রতি আমার বিশেষ অনুনয় এই যে, শাস্তিদানের অধিকার নিজ হস্তে গ্রহণ না করিয়া আপনারা আইনের মর্যাদা রক্ষা করিয়া চলুন। অমানুষিক কার্য হইতে বিরত থাকুন— অন্যথায় সমাজ ধ্বংস হইবে।...আপনারা এবং আপনাদের সংবাদপত্রগুলি যে সকল আমেরিকান নিগ্রোদিগকে লিঞ্চ করিয়া মারিয়াছে তাহাদের বর্বরতার তীব্র নিন্দা করিয়াছেন। আপনারা যদি নিজেরা ঐ ধরণের কার্য করেন, তাহা হইলে তাহা কি কম বর্বরতার পরিচয় হইবে?’’

১৯৪৮ সালের ২২ জানুয়ারি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত গাঁধীপ্রদত্ত ভাষণের খবর।

দেশভাগ পরবর্তী ভারতে নানা প্রান্তে সাম্প্রদায়িক হিংসা, বিশেষ করে দিল্লিতে সংখ্যালঘুদের বিতাড়ন এবং নির্যাতন সে সময় গাঁধীকে খুবই ব্যথিত করেছিল। ১৩ জানুয়ারি থেকে যে কারণে গাঁধী অনশন শুরু করেছিলেন। ১৮ জানুয়ারি তিনি সে অনশন ভঙ্গ করেন। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার গাঁধীর সার্ধশতবর্ষ উদ্‌যাপনে ব্যস্ত ঠিকই। কিন্তু তারই পাশাপাশি গত কয়েক বছরে কখনও গরু, কখনও জাত-ধর্ম, কখনও রামনাম, কখনও গুজবকে ছুতো করে গণআক্রোশ, গণধোলাই এবং হত্যার ঘটনা ক্রমশ বেড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে একাধিক রাজ্য ‘লিঞ্চিং’ রোধে আলাদা আইনও তৈরি করেছে। এই অবস্থায় ‘লিঞ্চিং’কে ‘ভিনদেশি’, ‘পশ্চিমি’ ব্যাপার বলে দেগে দিয়ে ভাগবতের দাবি, ‘‘সামাজিক হিংসার ঘটনাকে লিঞ্চিং বলা মানে আমাদের দেশ, হিন্দু সমাজকে কলঙ্কিত করা এবং অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা।’’

কংগ্রেসের শশী তারুর গত কালই পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছিলেন, ভাগবত তবে ভারতে গণপ্রহার ও হত্যার ঘটনা বর্ণনা করার জন্য নতুন কোনও শব্দ বলুন! সিপিএমের মুখপত্রে আজ ভাগবতের সমালোচনা করে লেখা হয়েছে, ‘‘লিঞ্চিং-এর কোনও স্থানিক-সাংস্কৃতিক পরিচয় হয় না। সঙ্ঘপ্রধান এক কথায় গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনাগুলোকেই অস্বীকার করছেন এই ভাবে।’’ এমআইএম সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসির কথায়, ‘‘ভাগবত লিঞ্চিং বন্ধ করতে বলেননি, উনি শুধু ওই নামে ডাকতে বারণ করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mahatma Gandhi Lynching Communal Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE