Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Manipur Violence

দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর আগে একাধিক খুন করা হয়েছিল, পোড়ানো হয় বাড়িও: এফআইআর

গত ৪ মে মণিপুরের কঙ্গপকপি জেলায় ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। ৯০০ থেকে ১০০০ জন মানুষ কুকি অধ্যুষিত গ্রামে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। চলে অবাধ লুটপাট। তার পরেই ঘটে যায় সেই ঘটনা।

file image

হিংসা থামার নাম নেই মণিপুরে। — ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
ইম্ফল শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৩ ১৫:০৮
Share: Save:

উত্তর-পূর্বের ছোট রাজ্য মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া এফআইআরে রয়েছে বিস্ফোরক তথ্য। তাতে দাবি করা হয়েছে, কঙ্গপকপি জেলার ওই গ্রামে দুই মহিলাকে অপহরণের ঠিক আগে আরও একাধিক ব্যক্তিকে খুন করে জনতা এবং বহু বাড়িতেও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই সেই এফআইআরের প্রতিলিপি হাতে পেয়েছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে, গত ৪ মে উন্মত্ত জনতা এক ব্যক্তিকে খুনও করে। তাঁর ‘অপরাধ’ ছিল, তিনি বোনকে গণধর্ষিতা হওয়া থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। তার পরেই দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয়। শ্লীলতাহানি করা হয়।

এফআইআরের প্রতিলিপিতে লেখা হয়েছে, ‘‘৯০০ থেকে ১০০০ জন মানুষ একে রাইফেল, এসএলআর, ইনসাস-সহ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হুড়মুড় করে আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়ে।’’ অকুস্থল থেকে ৬৮ কিলোমিটার দূরের সাইকুল থানায় দায়ের হওয়া এফআইআরে আরও লেখা হয়েছে, ‘‘উত্তেজিত জনতা সমস্ত বাড়িঘর ভাঙচুর করে এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। বাড়িঘর থেকে সমস্ত জিনিসপত্রও লুট করা হয়েছে।’’ কী কী লুট হয়েছে? এফআইআরে দাবি করা হয়েছে, নগদ টাকা, আসবাবপত্র, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, খাদ্যশস্য এবং গবাদি পশু লুট করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে দাবি, পুলিশ পাঁচ জনকে নিকটবর্তী জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেছিল, সেই পাঁচ জনকে জনতা ছিনিয়ে নেয়।

১৯ জুলাই ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় দেখা যাওয়া চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরের দিন গ্রেফতার করা হয়। যদিও এ ব্যাপারে কঙ্গপকপি জেলার সাইকুল থানায় অভিযোগপত্রটি দায়ের হয়েছিল গত ২১ জুন।

এ দিকে যে দু’জন মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো এবং শ্লীলতাহানি করা হয়েছিল, তাঁদের এক জনের স্বামী ভারতীয় সেনার হয়ে কার্গিল যুদ্ধে লড়েছেন। ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য হিসাবে শ্রীলঙ্কাও গিয়েছিলেন দায়িত্ব পালন করতে। কিন্তু সেই ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে ব্যর্থ হলেন।

তিনি বলছেন, ‘‘আমি দেশের হয়ে কার্গিল যুদ্ধে লড়াই করেছি। শ্রীলঙ্কাতেও ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর হয়ে গিয়েছি। আমি দেশরক্ষা করেছি কিন্তু আমার অসহায় লাগছে যে, আমি আমার স্ত্রীকে আর গ্রামের প্রতিবেশীদের রক্ষা করতে পারলাম না।’’ তাঁর দাবি, গত ৪ মে সকালে এলাকায় ঢুকে বহু বাড়িতে আগুন লাগায় উন্মত্ত জনতা। তার পর দু’জন মহিলাকে বিবস্ত্র করে গ্রামের পথে হাঁটানো হয়। তিনি বলছেন, ‘‘পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। যাঁরা এ ভাবে মহিলাদের সঙ্গে অভব্যতা করল এবং এই তাণ্ডব চালাল, তাঁদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হয়।’’

গত ৩ মে থেকে মণিপুরে জাতিগত হিংসার শুরু। তার পর থেকে একনাগাড়ে চলছে হিংসার রমরমা। রাজ্য জুড়ে হিংসায় কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের দেড়শো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। ঘরছাড়ার সংখ্যাও আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে আসে একটি ভিডিয়ো। তাতে দেখা যায়, বহু মানুষ দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তা দিয়ে হাঁটাচ্ছে। দুই মহিলার শ্লীলতাহানিও করা হয় বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, এই ভিডিয়ো গত ৪ মে সকালের। কিন্তু রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় তা এত দিন চাপা পড়ে ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manipur Violence FIR
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE