Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Ram Mandir Inauguration

পথে বের হওয়ার শেষ দিন, রাস্তাঘাট একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শনিবার সন্ধ্যা হলেই রাম-দখলে অযোধ্যা

অযোধ্যার হাতে আর সময় নেই। সোমবার প্রধানমন্ত্রী আসবেন। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তো ‘ডেলি প্যাসেঞ্জার’ হয়ে গিয়েছেন। সোমে যত ভিভিআইপি আসবেন তাতে ইতিহাস তৈরি হবে। তাই অযোধ্যাবাসীও তৈরি নিয়ম মানার জন্য।

অযোধ্যার রামমন্দির দর্শনে আসা এক ভক্ত।

অযোধ্যার রামমন্দির দর্শনে আসা এক ভক্ত। —ছবি: পিটিআই।

পিনাকপাণি ঘোষ
অযোধ্যা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:১৭
Share: Save:

শুক্রবার সকাল থেকেই অযোধ্যা শহরে ঘোরাফেরা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ শহরের এ-মাথা থেকে ও-মাথা ঘুরেছেন। নিরাপত্তার খুঁটিনাটি সরেজমিনে দেখে গিয়েছেন। শনিবারও আসছেন তিনি। তার আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। মন্দির এলাকার রাস্তাঘাটে ঘুরতে গেলে দেখাতে হবে নির্দিষ্ট ‘পাস’। ছাড় শুধু উৎসব আয়োজকদের। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের জন্য বিশেষ পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধারণ অযোধ্যাবাসীকে শনিবার দিনের মধ্যেই বাজারহাট সেরে ফেলতে হবে।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার থেকেই বিশেষ আমন্ত্রিতেরা অযোধ্যায় আসতে শুরু করবেন। রবিবার থেকেই আসতে শুরু করবেন ভিভিআইপি আমন্ত্রিতেরা। তবে গোটা দেশের যে সব করসেবক ১৯৯০ বা ১৯৯২ সালে পুলিশের আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, তাঁরা শনিবার থেকেই আসছেন অযোধ্যায়। তাঁদের স্বাগত জানাতে অযোধ্যা ধাম স্টেশনে তৈরি হয়েছে পরিষদের শিবির।

অযোধ্যায় অন্যতম পর্যটনের জায়গা রাম কি পৌরি। সরযূ নদীর জল এখানে একটি খাল কেটে ঢুকেছে প্রাচীন রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে। দু’দিকটাই বাঁধানো। সুন্দর সিঁড়ি। সেখানে আলাদা আলাদা ঘাট। কৌশল্যা, কৈকেয়ী, রাম, লক্ষ্মণ, ভরত— সকলের আলাদা আলাদা ঘাট। একেবারে শেষেরটা সুমিত্রা ঘাট। এই ঘাট চত্বরে এমনিতে সারা বছর রামকথা চলে। দেব দীপাবলিতে এই ঘাটই প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয়। তবে উদ্বোধনের এই পরবে নদী আর দশরথ পরিবারের মাঝের জায়গা সংবাদমাধ্যমের দখলে। শুক্রবার থেকেই তৈরি হয়ে গিয়েছে সারি সারি নিউজ স্টুডিয়ো।

অযোধ্যায় ব্যবস্থাপনা দেখার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা।

অযোধ্যায় ব্যবস্থাপনা দেখার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।

এখানেই ব্যবস্থাপনা দেখার দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশ অফিসার সুকুমার দ্বিবেদী। স্থানমাহাত্ম্য এমনই যে, পুলিশের মুখেও রামনাম। সঙ্গে ইতিহাস। শনিবার সকালে কয়েক মুহূর্তে নিজে থেকেই ‘গাইড’ হয়ে গেলেন। বললেন, ‘‘অযোধ্যা মানে যাকে যুদ্ধে হারানো যায় না, অজেয়।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘এই শহর জিততে জানে। সুতরাং সোমবার গোটা পৃথিবী দেখবে ভারতের জয়।’’ এ তো হিন্দুদের জয়! শুনে সুকুমার বললেন, ‘‘এই নগরীর আর এক নাম সাকেত। এখানেই শাক্যবংশের রাজধানী ছিল। তাই সাকেত। হিউয়েন সাঙের ভ্রমণবৃত্তান্তে সাকেতের কথা পাবেন, অযোধ্যা নয়। গৌতম বুদ্ধও দীর্ঘ সময় এই শহরে বাস করেছিলেন। শুধু হিন্দু নয়। বৌদ্ধ, জৈন সম্প্রদায়েরও তীর্থস্থান এই অযোধ্যা। ছ’জন তীর্থঙ্করের জন্ম এখানে। বৈষ্ণবদেরও অনেক মঠ আছে।’’

অযোধ্যায় পুলিশি নিরাপত্তা।

অযোধ্যায় পুলিশি নিরাপত্তা। —নিজস্ব চিত্র।

মঠ-মন্দিরের অভাব নেই অযোধ্যায়। এক রামভক্ত এবং মোদীভক্তের সঙ্গে কথা হয়েছিল শুক্রবার সন্ধ্যায়। নয়াঘাটের হোটেলের মালিক শম্ভু সিংহ। ভক্ত, কিন্তু সোজাসাপটা কথা বলেন। যেমন বললেন, ‘‘এই শহরে মানুষের থেকে বাবার সংখ্যা বেশি। মন্দির হলে বাবাদের সবচেয়ে বেশি লাভ। ভক্ত বাড়বে। রোজগার বাড়বে। যে কোনও গলিতে ধর্মশালা পেয়ে যাবেন। বাইরে থেকে কিছু মনে হবে না। কতটা ধনী, সেটা ভিতরে গেলেই মালুম হবে।’’

আপাতত ভিতরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাইরে থেকে দর্শনও শনিবার সন্ধ্যা থেকে সে ভাবে সম্ভব হবে না। কারণ, অযোধ্যায় এই প্রথম এত ভিভিআইপি একসঙ্গে আসবেন। তাতে অযোধ্যাও এখন ‘ভিভিআইপি’ হয়ে গিয়েছে। তবে অযোধ্যায় আসতে কাউকে নাকি বাধা দেওয়া যায় না। বললেন পুলিশকর্তা সুকুমার। বললেন, ‘‘অযোধ্যা মাহাত্ম্যে বলা রয়েছে সে কথা। ‘বিঘ্নমাচরতে যস্তু অযোধ্যা প্রতি-গচ্ছত। নরকে মজ্জতে মূঢ়ঃ কল্প মাত্র তুব রৌরবে।’ অর্থাৎ, অযোধ্যার যাত্রীগণকে বাধা দিলে মৃত্যুর পরে রৌরব নামক নরকে বাস করতে হয়।’’

কিন্তু তাঁদের মতো পুলিশকর্তারাই তো বাধা দিচ্ছেন! সুকুমার বললেন, ‘‘এটা অযোধ্যার নতুন পর্ব। আমরা কাউকে বাধা দিচ্ছি না। শুধু ক’টা দিনের জন্য যাত্রীদের নিয়ম মানতে অনুরোধ করছি। তাতে কাজও হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ayodhya Ram Mandir Ayodhya Ram Temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE