Advertisement
০২ মে ২০২৪
Auto Driver

Auto Driver: কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক ছিলেন, ‘গার্লফ্রেন্ড’-এর জন্য ১৪ বছর অটো চালান ইনি

চোখেমুখে একটা বিস্ময়ের ভাব দেখে অটোচালক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিকিতাতে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ভাবছেন তো, এত ভাল ইংরেজি এক জন অটোচালক কী করে বলছে!’ এমন প্রশ্ন উড়ে আসবে ভাবেননি নিকিতা। অটোচালক তাঁর মনের কথাটা পড়ে ফেললেন কী ভাবে?

অটোচালক বলেন,  “আমার নাম পাতাবি রমন। এমএ, এমএড করেছি। ইংরেজিতে অধ্যাপনা করেছি মুম্বইয়ের একটি নামী কলেজেও।”

অটোচালক বলেন, “আমার নাম পাতাবি রমন। এমএ, এমএড করেছি। ইংরেজিতে অধ্যাপনা করেছি মুম্বইয়ের একটি নামী কলেজেও।”

সংবাদ সংস্থা
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২২ ১০:০৬
Share: Save:

‘প্লিজ কাম ইন ম্যাম, ইউ ক্যান পে হোয়াট ইউ ওয়ান্ট!’

বৃদ্ধ অটোচালকের সাবলীল ইংরাজি শুনে বেশ অবাকই হয়েছিলেন নিকিতা। চোখেমুখে একটা বিস্ময়ের ভাব দেখে অটোচালক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তরুণী যাত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ভাবছেন তো, এত ভাল ইংরেজি এক জন অটোচালক কী করে বলছে!’ এমন প্রশ্ন উড়ে আসবে ভাবেননি নিকিতা। অটোচালক তাঁর মনের কথাটা পড়ে ফেললেন কী ভাবে? কথাটা ভেবে একটু অস্বস্তিও হল তাঁর।

অটো চলা শুরু হল। তার পর সেই ‘ইংলিশ স্পিকিং’ অটোচালকের সঙ্গে ৪৫ মিনিট কী ভাবে যে কেটে গেল টেরই পেলেন না নিকিতা। নেটমাধ্যমে সেই অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন তিনি।

নিকিতা আইয়ার। বেঙ্গালুরুর চাকুরিজীবী তরুণী। দিন কয়েক আগের ঘটনা। সে দিন সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য উবরের অটোতে চেপেছিলেন নিকিতা। কিন্তু যানজটের কারণে আটকে পড়েছিলেন। এ দিকে অফিসের সময় হয়ে আসছিল। ফলে একটা দুশ্চিন্তা তাড়া করছিল নিকিতাকে। রাস্তায় চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এক তরুণীকে দেখে প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছিলেন বৃদ্ধ অটোচালক— ‘কোথায় যাবেন?’ অটোচালকের প্রশ্নে সম্বিৎ ফিরতেই নিকিতা জানান, দ্রুত অফিস পৌঁছনো দরকার। এমনিতেই বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে।

এর পরের বিষয়টির জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না নিকিতা। তাঁর উত্তর শুনে বৃদ্ধ অটোচালক সাবলীল ইংরেজিতে বললেন, ‘‘প্লিজ কাম ইন ম্যাম, ইউ ক্যান পে হোয়াট ইউ ওয়ান্ট!’ এক জন অটোচালকের মুখে এত সুন্দর ঝরঝরে ইংরাজি শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন নিকিতা। নেটমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘অটোচালকের এত নম্র ব্যবহার এবং তাঁর এত সাবলীল ইংরাজি শুনে আমি থ হয়ে গিয়েছিলাম। তাঁর কথার উত্তরে শুধু বলেছিলাম— ‘ওকে’। তার পরের ৪৫ মিনিট যে কী ভাবে কেটে গেল এবং ওই সময়ে এত সমৃদ্ধ হলাম তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’

অটোচালক! এত সাবলীল ইংরাজি!— এই কথাগুলোই তাঁর মনের মধ্যে তোলপাড় করছিল। কৌতূহলটাও নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারেননি নিকিতা। আর সেই কৌতূহল নিরসনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অটোচালককে তাঁর প্রথম প্রশ্ন, ‘আচ্ছা, আপনি এত ঝরঝরে ইংরেজি বলেন কী ভাবে?’

দু’জনের কথোপকথনের সফর শুরু হল এখান থেকেই। অটোচালক এ বার নিজের জীবনকাহিনির ডালি মেলে ধরলেন নিকিতার সামনে। যত তাঁর কাহিনি শুনছিলেন, নিকিতার অবাক হওয়ার বহর যেন ততই বাড়ছিল। অটোচালক বলতে শুরু করলেন— ‘আমার নাম পাতাবি রমন। এমএ, এমএড করেছি। ইংরেজিতে অধ্যাপনা করেছি মুম্বইয়ের একটি নামী কলেজেও।’ এ পর্যন্ত বলে একটু থেমেছিলেন তিনি। নিকিতা সবে প্রশ্ন করতে যাবে, ঠিক তার আগেই অটোচালক তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করে আরও এক বার যেন ‘অস্বস্তি’তে ফেললেন। এ বারও তিনি বললেন, “জানি, আপনার পরের প্রশ্নটা কী হতে চলেছে। নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসা করবেন কেন আমি অটো চালাচ্ছি, তাই না?” নিকিতা শুধু ঘাড়টা নাড়ালেন এবং বুঝিয়ে দিলেন যে, ঠিক এই প্রশ্নটাই করতে চাইছিলাম। যেটা আপনি যথারীতি আগেই বুঝতে পেরেছেন!

ফের অটোচালক বলতে শুরু করলেন— ‘কর্নাটকে কাজ পাইনি। তাই চলে গিয়েছিলাম মুম্বইয়ে। সেখানে একটি কলেজে লেকচারারের চাকরি পাই।’ এর পরই তাঁর গলায় আক্ষেপের এবং একটা চাপা ক্ষোভের সুর টের পেয়েছিলেন নিকিতা। অটোচালক আবার বলা শুরু করলেন— ‘কর্নাটকের কলেজগুলিতে যখন চাকরির জন্য আবেদন করি, প্রত্যেক জায়গায় জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আমি কোন জাতের। বলেছিলাম আমার নাম পাতাবি রমন। এ কথা শুনে ওঁরা আমাকে বলেছিলেন, ঠিক আছে আপনাকে পরে জানাব।’ কলেজগুলি থেকে এ ধরনের উত্তর পেয়ে বিরক্ত আর হতাশায় কর্নাটক ছেড়ে বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন রমন। নিজের রাজ্য মুখ ফিরিয়ে নিলেও মুম্বই কিন্তু মুখ ফেরায়নি। এখানেই পওয়াইতে একটি নামী কলেজে অধ্যাপনার কাজ পান। ২০ বছর ধরে অধ্যাপনা করে অবসরের পর ফের বেঙ্গালুরুতে ফিরে যান রমন।

তিনি বলেন, “শিক্ষকদের বেতন ভাল ছিল না। খুব বেশি হলে ১০-১৫ হাজার টাকা। যে হেতু বেসরকারি কলেজে কাজ করতাম, তাই পেনশনও নেই। কিন্তু পেট তো চালাতে হবে।” এ বার একটু রসিকতার ছলেই বলেন, “বাড়িতে আবার আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। অটো চালিয়ে দিনে ৭০০-১৫০০ টাকা আয় করি। ওতেই আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডের দিব্যি চলে যায়।” গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে নিকিতা হেসে ওঠায়, রমন বলেন, “আসলে স্ত্রীকে আমি গার্লফ্রেন্ড বলেই ডাকি।”

আপনার সন্তান? এ প্রশ্ন শুনে রমন সহাস্যে বলেন, “আমাদের একটি ছেলে। ও আমাদের ঘর ভাড়া দিয়ে দেয়। সাহায্যও করে। কিন্তু আমরা সন্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চাই না। ওরা ওদের মতো জীবন কাটাক। আমরা আমাদের মতো।”

নিকিতা সব শেষে নেটমাধ্যমে লেখেন, ‘মিস্টার রমনের সম্পর্কে যতই প্রশংসা করা যায়, শব্দ যেন ততই কম পড়ে যায়। এমন একটা মানুষের সঙ্গে আলাপ হল, জীবন সম্পর্কে যাঁর কোনও অভিযোগ নেই, কোনও অনুতাপ নেই। এমন মানুষগুলির কাছ থেকে যেন অনেক কিছু শেখার আছে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Auto Driver bengaluru Lecturer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE