—ফাইল চিত্র
তিন কৃষি আইন নিয়ে কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে মোদী সরকারের মন্ত্রীদের আলোচনা কার্যত কানাগলিতে ঢুকে পড়ল। দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় আলোচনায় আপাতত ইতি পড়ল। গত বৈঠকে মোদী সরকারের কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সরকার এক থেকে দেড় বছরের জন্য তিন কৃষি আইন স্থগিত রাখতে রাজি রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দু’পক্ষের একটি কমিটি গঠন করে আইনের আপত্তিকর বিষয় ও ফসলের দামের আইনি গ্যারান্টি নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে কৃষক সংগঠনগুলি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। কৃষক নেতারা একই দাবিতে অনড় থাকেন, প্রত্যাহার করতে হবে ওইতিন আইন।
আজ, তা শুনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা দিল্লির বিজ্ঞান ভবনের বৈঠকে জানিয়ে দেন, সরকারের পক্ষেও এর থেকে নমনীয় হওয়া সম্ভব নয়। সরকার আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার হবে না। এ বিষয়ে সরকারের দিক থেকে যতখানি সম্ভব বেশি প্রস্তাব দেওয়ার ছিল, তা সরকার দিয়ে দিয়েছে।
এর পরে আলোচনা আর এগোয়নি। কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা কৃষক নেতা রুলডু সিংহ মানসার গাড়িতে পুলিশের ভাঙচুর, হান্নান মোল্লার গাড়ি আটকানো, দর্শন পালকে হুমকি ফোন নিয়েও অভিযোগ তোলেন। বৈঠক শুরুর আধ ঘণ্টা পরেই তোমর, খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালরা কৃষক নেতাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে বলে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু কৃষক সংগঠনগুলির প্রতিনিধি হিসেবে যে ৪০ জন নেতা সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন, তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঠিক করেন, সংযুক্ত কিসান মোর্চার অধীনে প্রায় পাঁচশো সংগঠন মিলে যা ঠিক করেছে, তা তাঁদের পক্ষে বদল করা সম্ভব নয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পরে মন্ত্রীরা ফের বৈঠকে ফেরেন। কিন্তু কৃষকদের অবস্থানে বদল হচ্ছে না দেখে বৈঠকে ইতি টানা হয়।
কৃষিমন্ত্রী তোমরের অভিযোগ, কিছু কৃষক সংগঠন সরকারের প্রস্তাবে রাজি। কিন্তু অনেক সংগঠন চাইছে, যাতে আন্দোলন চলে। সমাধানসূত্র না-বোরোয়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আন্দোলনের পবিত্রতা নষ্ট হলে সমাধান হয় না। আমরা আন্দাজ করতে পারছি, কিছু সংগঠন আন্দোলন জিইয়ে রাখতে চায়। তারা কৃষকদের উপকার চাইছে না।’’ আলোচনা যে শেষ, তা বুঝিয়ে দিয়েও তোমর বলেন, কৃষক নেতাদের সরকারি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়ে শনিবার বেলা ১২টার মধ্যে জানাতে পারেন।
কিসান সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘কৃষকরা দেড় বছরের জন্য আইন স্থগিত রাখার পক্ষে নন। তাঁরা গত দু’মাস ধরে শীতের মধ্যে আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁদের হয়ে আমাদের স্পষ্ট কথা, তিন আইন প্রত্যাহার হোক। তার পরে সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন আইন আনুক।’’ তবে এ বিষয়ে কৃষক সংগঠনগুলির মধ্যে বিভাজন রয়েছে বলে কৃষক নেতারা মানতে রাজি নন। শিবকুমার কাকার মতো কিছু নেতা আগেই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় অবশ্য সরকারের বিভাজনের তত্ত্বে জল্পনা ছড়িয়ে ছে। স্বরাজ ইন্ডিয়ার নেতা অভীক সাহা বলেন, ‘‘কেউ যদি বেরিয়ে যেতে চান, যাবেন। আন্দোলনে তার প্রভাব পড়বে না।’’ হান্নানের যুক্তি, দু’এক জনের ভিন্ন মত থাকতেই পারে। কিন্তু সরকারি প্রস্তাব খারিজের সিদ্ধান্ত সবাই মিলে নেওয়া হয়েছে। কৃষক নেতাদের এখন প্রধান চিন্তা ২৬ জানুয়ারির ট্র্যাক্টর মিছিল।
আজও দিল্লির পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে এ বিষয়ে কৃষক নেতাদের বৈঠক হয়েছে। প্রায় ১ লক্ষ ট্র্যাক্টর নিয়ে মিছিল করাতে চান তাঁরা। মিছিল দিল্লির একটি অংশে হলেও প্রায় সারা দিন ধরেই তা চলবে। ফলে পুলিশ কর্তাদের মাথায় হাত পড়েছে। মিছিল থেকে অশান্তি ছড়ালে তাতে শান্তিপূর্ণ কৃষক আন্দোলনেও কালি লাগবে বলে কৃষক নেতারাও ভাবনায় রয়েছেন। আজ ধর্না আন্দোলনস্থলের কাছ থেকে এক ব্যক্তিকে ধরে ফেলেন কৃষকেরা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ওই ব্যক্তির উদ্দেশ্য ছিল চার জন কৃষক নেতাকে গুলি করা এবং ২৬ জানুয়ারির ট্র্যাক্টর মিছিলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy