সাংসদদের বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ জমা পড়েছিল গত বছরই। কিন্তু সায় ছিল না প্রধানমন্ত্রীর। তাঁর মত ছিল, প্রধানমন্ত্রী মানে দেশের প্রধান সেবক। বাকি সাংসদেরাও তা-ই। তাঁদের বেতন অনেক ভেবেচিন্তে বাড়ানো উচিত। তখনকার মতো তামাদি হয়ে গিয়েছিল এই সংক্রান্ত সুপারিশ এবং কমিটি। কিন্তু সওয়া এক বছরের মধ্যেই আবার গড়ে তোলা হল সাংসদদের বেতন কাঠামো খতিয়ে দেখার কমিটি। এ বারও চেয়ারম্যান হলেন বিজেপি-র সেই যোগী আদিত্যনাথ, যাঁর নেতৃত্বাধীন কমিটি সাংসদদের বেতন দ্বিগুণ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল!
লোকসভা ও রাজ্যসভা থেকে সাংসদদের নিয়ে যৌথ কমিটির প্রথম বৈঠকে বুধবার আদিত্যনাথকে চেয়ারম্যান বেছে নেওয়া হয়েছে। সংসদ সূত্রের খবর, গত বছর প্রধানমন্ত্রীর সায় না থাকলেও বিজেপি-র মধ্যে থেকেই ফের চাপ এসেছে বেতন বাড়ানো নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার জন্য। সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার পরে সরকারি কর্মীদের বেতন এখন বেড়েছে। তাই সাংসদদের বেতন কাঠামোও কেন সেই প্রেক্ষিতে পুনর্বিন্যাস করা হবে না, প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সদ্যই রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সুপারিশ অনুমোদিত হলেই তা কার্যকর হবে। সেখানেও সপ্তম বেতন কমিশনের প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে। এই আবহেই ফের সাংসদদের বেতন নিয়ে চর্চা হচ্ছে। নতুন কমিটিতে সদস্য হিসাবে এ রাজ্যের সাংসদদের মধ্যে থেকে সুখেন্দুশেখর রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অধীর চৌধুরী, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়েরা আছেন। আদিত্যনাথের কমিটি যখন সাংসসদের মূল বেতন মাসিক ৫০ হাজার টাকা থেকে দ্বিগুণ বা়ড়ানোর সুপারিশ করেছিল, তখন প্রধানত আপত্তি করেছিল সিপিএম। তাদের সাংসদ কে এন বালাগোপাল নোট দিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, সাংসদদের বেতন বাড়ানো উচিত কি না, তা ঠিক করা উচিত নিরপেক্ষ কোনও কমিটির। সাংসদেরা নিজেরাই বেতন বাড়িয়ে নেবেন, এটা ঠিক নয়! বিজেপি থেকে কংগ্রেস বা সমাজবাদী পার্টি অবশ্য বেতন বৃদ্ধিরই পক্ষে ছিল। এ বার কমিটি পুনর্গঠিত হওয়ার পরে এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘যে পরিস্থিতিতে কমিটি ফের গড়া হয়েছে, তাতে বেতন বৃদ্ধির চাপ আরও বেশি। কমিটির পরিবেশটাই এমন যে, সিপিএম ছাড়া আর সকলে একমত হয়েই আছেন!’’
সাংসদদের মূল বেতন এখন মাসে ৫০ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে তাঁরা নির্বাচনী কেন্দ্র ও কার্যালয় চালানোর জন্য ভাতা পান। অধিবেশন চললে বা কমিটির বৈঠকে যোগ দিলে সাংসদদের যে দৈনিক ভাতা প্রাপ্য, সেই অঙ্ক বাড়ানোরও দাবি ছিল আগে থেকে। গত বছর কমিটি সুপারিশ জমা দেওয়ার আগে সাংসদদের একাংশ যুক্তি দিয়েছিলেন, দিল্লি বা তেলঙ্গানার মতো রাজ্যে বিধায়কদের যা বেতন, তার চেয়ে তাঁদের মাইনে কম। এই বৈষম্য দূর করা উচিত। কিন্তু সাংসদেরা নিজেরাই কেন বেতন ঠিক করে নেবেন, সেই বিতর্ক ছড়িয়েছিল সংসদের বাইরেও। কমিটিতে সেই প্রশ্নই তুলেছিল সিপিএম। এ বার সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ অবশ্য টাকা বাড়ানোর পক্ষে থাকা সাংসদদের কাছে বাড়তি হাতিয়ার। নতুন কমিটির পরবর্তী বৈঠক বসবে দেওয়ালির পরে, নভেম্বরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy