জোড়-বিজোড় আইন নিয়ে প্রশ্নের মুখে বিজেপি সাংসদ পরেশ রাওয়াল। ছবি: এএফপি।
গাড়ি থেকে নামতেই বুঝে ফেলেছেন, ধরা পড়ে গিয়েছেন।
মিডিয়া তখন চারদিক থেকে ছেঁকে ধরেছে। তুখোড় অভিনয়গুণে মুখের হাসিটি বজায় রেখে কোনওক্রমে সংসদের ভিতরে পালিয়ে বাঁচলেন। বুঝতেও দেননি, সংসদে প্রবেশের আগেই বিজোড়ের দিন জোড় সংখ্যার গাড়িতে চেপে দু’হাজার টাকার জরিমানা দিয়ে এসেছেন দিল্লি পুলিশকে। পরে অবশ্য টুইট করে ক্ষমা চেয়েছেন অভিনেতা থেকে রাজনীতিক হওয়া বিজেপি সাংসদ পরেশ রাওয়াল। টুইটে লিখেছেন, ‘‘গুরুতর ভুল হয়ে গিয়েছে। অরবিন্দ (কেজরীবাল) ও দিল্লিবাসীদের কাছে দুঃখিত।’’
দিল্লিতে দ্বিতীয় বারের জন্য জোড়-বিজোড় শুরু হওয়ার পর আজই প্রথম সরাসরি এর খপ্পরে পড়লেন সাংসদেরা। প্রথম বারের সময় সংসদের অধিবেশন ছিলই না। সাংসদদের সংসদে পৌঁছে দিতে দিল্লি সরকার অবশ্য ছ’টি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু হাতে গুণে দু’-এক জন ছাড়া সেই বাসে কেউই চড়েননি। বরং নিজেদের দাপট দেখাতে আজ একগুচ্ছ সাংসদ নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই আইন ভাঙলেন। আর তাতে পরেশ রাওয়াল একা নন, উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভুবনচন্দ্র খান্ডুরি, উদিত রাজ, প্রহ্লাদ পটেলের মতো অনেক সাংসদই বিজোড়ের দিন বহাল তবিয়তে এলেন জোড় সংখ্যার গাড়িতে।
শুধু এখানেই থেমে থাকেনি সাংসদকুল। সংসদ শুরু হতে দলমত নির্বিশেষে দাবি তুলেছেন, জোড়-বিজোড়ের ধাক্কা থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হোক সাংসদদের। লোকসভায় কেজরীবালকে ‘মানসিক রোগী’ অ্যাখ্যা দিয়ে রীতিমতো জিহাদ ঘোষণা করেন সাংসদ পাপ্পু যাদব। রাজ্যসভায় নরেশ অগ্রবাল বলেন, ‘‘দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী নিজের খামখেয়ালিপনা শুরু করেছেন। এর পর তো এক দিন পুরুষ, আর এক দিন মহিলাদের রাস্তায় বেরোনোর আইন বানাবেন!’’ বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদও বলেন, ‘‘বেসরকারি গাড়ি নিলেও তা সংসদে প্রবেশ করতে পারবে না। যে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা-ও পর্যাপ্ত নয়। সাংসদদের এর থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া উচিত।’’
পার্লামেন্টে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সাংসদদের বাস। ছবি: এএফপি।
সব শুনে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েন সরকারকে নির্দেশ দেন, ‘‘আমি শুনেছি, জোড়-বিজোড়ের জেরে সাংসদেরা সময়মতো সংসদে পৌঁছতে পারছেন না। একটি কমিটির বৈঠকও এক ঘণ্টা দেরি হয়েছে।’’ রসিকতার ছলে তিনি বলেন, ‘‘এমনকী, সাংসদরা যদি সংসদে এসে হল্লাও করতে চান, তা হলেও তো সময়মাফিক পৌঁছনো দরকার। দিল্লি সরকারের সঙ্গে কথা বলে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত অবিলম্বে এর সমাধান বের করা।’’ সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী মোখতার আব্বাস নকভি আশ্বাস দেন, ‘‘কেন্দ্র উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এর পথ খোঁজার চেষ্টা করবে।’’
কিন্তু কেজরীবালের দল ‘মুষ্টিমেয়’ সাংসদের দাবি মেনে আইন বদলানোর পক্ষপাতী নয়। দলের মুখপাত্র রাঘব চাড্ডা বলেন, ‘‘যেখানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এই আবেদনে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন, তখন সাংসদদেরও উচিত আইন মেনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।’’ এই সব ঝুটঝামেলায় না গিয়ে বিজেপির এক সাংসদ অনিল দাভে অবশ্য একটি সাইকেল কিনে ফেলেছেন। তা-ও সবুজ রঙের। দিল্লির ঠা-ঠা রোদ্দুরে মাথায় টুপি পড়ে সাইকেল চালিয়ে আজ সংসদে চলে আসেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘সাইকেলে চেপে এলে কোনও বিধিনিষেধও নেই। আবার পরিবেশের দিক থেকেও মঙ্গল।’’
আরও পড়ুন...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy