অরবিন্দ মায়ারাম, অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম ও রাজীব মেহরিশি
অরবিন্দে ভরসা নেই, অরবিন্দে আছে।
ক্ষমতায় আসার পরে এই প্রথম আমলা স্তরে বড় মাপের রদবদল করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই কথাটাই স্পষ্ট করে দিলেন। পি চিদম্বরমের আমলের অর্থসচিব অরবিন্দ মায়ারামকে বদলি করে পাঠালেন অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন মন্ত্রকে। আর মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদে নিয়ে এলেন অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমকে, যিনি রঘুরাম রাজনের মতো আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)-এর অর্থনীতিবিদ ছিলেন। অরবিন্দ মায়ারামের জায়গায় আনা হচ্ছে রাজস্থানের মুখ্যসচিব রাজীব মেহরিশিকে। রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজের নেতৃত্বে শ্রম আইন ও অন্যান্য যে সব বড় মাপের সংস্কার হয়েছে, তার প্রধান কারিগর এই মেহরিশি। সে দিক থেকে মোদীর এই সিদ্ধান্ত আরও বেশি সংস্কারেরই ইঙ্গিত।
মায়ারাম ও মেহরিশি একই ব্যাচের আইএএস অফিসার এবং রাজস্থান ক্যাডারের। মেহরিশি সম্পর্কে আইএএস মহলে একটা কথা চালু রয়েছে, তিনি অনেক এগিয়ে ভাবেন। শুধু শ্রম আইনের সংস্কার নয়, নতুন বিনিয়োগ ও শিল্পের স্বার্থে পুরনো জমি অধিগ্রহণ আইনে পরিবর্তন, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, নদী সংযুক্তকরণেও বসুন্ধরা রাজের সরকার যে সব পদক্ষেপ করেছে, তার পিছনে ছিলেন মেহরিশি। রাজস্থানকে এত দিন মোদী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির পরীক্ষাগার হিসেবে দেখা হচ্ছিল। সেই পরীক্ষাগারের প্রধানকেই অর্থসচিবের দায়িত্বে নিয়ে এলেন মোদী। নতুন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমও আজ আশাবাদের কথা শুনিয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরে তিনি বলেন, “আর্থিক বৃদ্ধি, নতুন বিনিয়োগ এবং সমাজের সব অংশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরিই আমার অগ্রাধিকারে থাকবে।” নতুন সরকারের আমলে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর আশাও তৈরি হয়েছে বলে তাঁর মত। অরবিন্দ দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ, আইআইএম-আমদাবাদ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। এত দিন তিনি আমেরিকার ‘পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক্স’ ও মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট’ (সিজিডি)-র সিনিয়র ফেলো হিসেবে কাজ করছিলেন। অরবিন্দ সম্পর্কে সিজিডি-র ডিরেক্টর ন্যান্সি বার্ডসঅল মন্তব্য করেছেন, “সুব্রহ্মণ্যম শুধু এক অর্থনীতিবিদ নন, এক জন সৃজনশীল চিন্তাবিদ-ও বটে।”
ক্ষমতায় আসার পরে আমলা স্তরে খুব বেশি রদবদলের পথে হাঁটেননি মোদী। সেই কাজ শুরু করেছেন এখন, প্রায় পাঁচ মাস কেটে যাওয়ার পরে। গত দু’দিনে মোট ২০ জন আমলাকে রদবদল করা হয়েছে। যার মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ রদবদল হয়েছে শীর্ষ স্তরে, সচিব পর্যায়ে। কয়লা, প্রশাসনিক সংস্কার, জল সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক, পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রকের সচিব পদেও নতুন নিয়োগ হয়েছে। তবে তার মধ্যে সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ অর্থসচিবের পদে বদলি। আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। মায়ারামকে বদলির পরে কার্যত নতুন অর্থসচিব ও নতুন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার ‘টিম’ নিয়ে বাজেটের প্রস্তুতি শুরু করবেন তিনি।
প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন পরে কেন মায়ারামকে সরানো হল? সরকারের একাংশ মনে করছে, সম্প্রতি ওয়াশিংটনে এক সাক্ষাৎকারে শ্রম আইন সংস্কার নিয়ে খুব বেশি আশার আলো দেখাননি মায়ারাম। মোদী সরকারের একটা অংশের মতে, এর ফলে শিল্পমহলে ভুল বার্তা গিয়েছিল। আর তার ফলেই সম্ভবত এই বদলি।
রাজ্যের অফিসারকে আনলেন নিজের দফতরে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদে নিযুক্ত হলেন পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইএএস অফিসার ভাস্কর খুলবে। মনমোহন সিংহের জমানায় রাজ্যের বর্তমান মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের যুগ্মসচিব পদে ছিলেন। কিন্তু সে সময়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ইচ্ছানুসারেই সঞ্জয়বাবু প্রধানমন্ত্রীর দফতরে নিযুক্ত হন। খুলবের বেলায় মোদী সরকারই তাঁকে নিয়োগ করেছে। সঞ্জয় মিত্রের পরে ভাস্করই রাজ্যের প্রথম অফিসার যিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এলেন। গত জুলাই পর্যন্ত খুলবে দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের রেসিডেন্ট কমিশনার হিসেবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের দৌত্যের কাজটি করতেন। ১৯৮৩ ব্যাচের আইএএস অফিসার ওই পদে ছ’বছর কাজ করেন। শিল্প উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। এরপর জুলাইতে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মিবর্গ দফতরের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে যোগ দেন। গত বছর রেসিডেন্ট কমিশনার থাকার সময়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে কলকাতায় বদলি করেন। যোজনা কমিশনের সামনে এসএফআইয়ের বিক্ষোভের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী খুলবের উপর ক্ষুব্ধ হন বলে অনেকের ধারণা। পারিবারিক কারণে ভাস্কর কলকাতায় যেতে রাজি হননি। মুখ্যমন্ত্রী ভাস্করকেই রেসিডেন্ট কমিশনার পদে রেখে দেন। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সচিব আর রামানুজন সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। আর এক অতিরিক্ত সচিব শত্রুঘ্ন সিংহ সম্প্রতি বদলি হন। জুনে রাজীবনয়ন চৌবেকে অতিরিক্ত সচিব পদে নিয়োগ করেও বাতিল করা হয়। সে জন্যই নতুন অতিরিক্ত সচিব নিয়োগের প্রয়োজন হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy