প্রতীকী ছবি।
ফ্ল্যাট নম্বর-৪, গ্রাউন্ড ফ্লোর, জুবিলি কোর্ট, লিঙ্কিং রোড, বান্দ্রা (পশ্চিম), মুম্বই।
এ ঠিকানা এখন গোটা ভারতে বিখ্যাত। মাত্র ৬৪০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। কিন্তু ফ্ল্যাটের মালিক ২ লক্ষ কোটি টাকার মালিক! আয়কর দফতরে জমা পড়া ঘোষণাপত্রে অন্তত সে রকমই লেখা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ইনকাম ডিসক্লোজার স্কিম বা আইডিএস-এর (অঘোষিত আয়ের হিসাব প্রকাশ করার প্রকল্প) আওতায় নিজের এই বিপুল পরিমাণ অঘোষিত সম্পত্তির অস্তিত্বের কথা জানিয়েছেন আবদুল রজ্জাক মহম্মদ সৈয়দ নামে এক ব্যক্তি। তাঁর ঘোষণাপত্রে যে ঠিকানা লেখা রয়েছে, সেটিই হল বান্দ্রার জুবিলি কোর্টের এই ফ্ল্যাট।
আয়কর বিভাগ রজ্জাকের ঘোষণাপত্র খারিজ করে দিয়েছে। জানিয়েছে, ভুয়ো ঘোষণাপত্র দিয়েছেন এই ব্যক্তি, তাঁর কাছে এত সম্পত্তি থাকতেই পারে না। কিন্তু সরকারের ঘরে ঘোষণাপত্র জমা দিয়ে যে ব্যক্তি দাবি করছেন, তাঁর সম্পত্তি মুকেশ অম্বানীর চেয়েও বেশি, সেই ব্যক্তির সম্পর্কে উৎসাহ তো তৈরি হবেই। হয়েছেও। অতএব খোঁজও শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলের তরফ থেকে। কিন্তু উৎসাহ যতই তৈরিক হোক, উৎসুকদের শেষ পর্যন্ত হতাশই হতে হয়েছে। বান্দ্রার ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে আবদুর রজ্জাক মহম্মদ সৈয়দের কোনও খোঁজ মেলেনি। তাঁর পরিবারের খোঁজ মেলেনি।
জুবিলি কোর্টের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, নিজেদের আবাসনের একটি ফ্ল্যাটের মালিক ২ লক্ষ কোটি টাকার বেহিসেবি সম্পত্তির মালিক জেনে তাঁরা নিজেরাই চমকে উঠেছেন। কিন্তু নিজেদের এই তথাকথিত প্রতিবেশীকে ওই আবাসনের কোনও বাসিন্দাই চেনেন না। কারণ আয়কর দফতরে ২ লক্ষ কোটি টাকার ঘোষণাপত্র জমা দেওয়া ব্যক্তির প্যান কার্ডে যে ঠিকানা দেওয়া রয়েছে, সেই ঠিকানার ফ্ল্যাটটি গত সাত বছর ধরে বন্ধ পড়ে রয়েছে। কোনও একটি বেসরকারি সংস্থার নামে ফ্ল্যাটটি রয়েছে বলে জুবিলি কোর্টের অন্য বাসিন্দারা জানেন। কিন্তু কী নাম সেই সংস্থার, কে তার মালিক, এ সব জানা নেই কারওরই। ফ্ল্যাটের দরজায় যে নেমপ্লেট ঝুলছে, তাতে লেখা, আরআর বৈদ্য। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এই আরআর বৈদ্য ফ্ল্যাটটির আগের মালিক। পরে ফ্ল্যাটের হাতবদল হয়েছে। সম্ভবত হাতবদলের পর থেকেই সেটি বন্ধ পড়ে রয়েছে। তাই ২ লক্ষ কোটি টাকার মালিক বলে নিজেকে যিনি দাবি করেছেন, খাতায়-কলমে বান্দ্রার জুবিলি কোর্টের ওই গ্রাউন্ড ফ্লোরের ফ্ল্যাটটিই তাঁর ঠিকানা হলেও, ‘প্রতিবশীরা’ কেউই আবদুর রজ্জাককে চেনেন না, তাঁর পরিবার সম্পর্কেও এঁরা কিছুই জানেন না।
আরও পড়ুন: মানুষের থেকে টাকা তুলে উধাও আর্থিক সংস্থা সবচেয়ে বেশি গুজরাতে
জুবিলি পার্ক আবাসন কমিটির যিনি সম্পাদক, তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ছ’মাস অন্তর কেউ না কেউ এসে ওই ফ্ল্যাটের মালিকের হয়ে আবাসন রক্ষণাবেক্ষণ তহবিলের টাকা মিটিয়ে দিয়ে যেতেন। কিন্তু সেই টাকা দিতে যাঁরা আসতেন, তাঁদের মধ্যে কেউ আবদুর রজ্জাক মহম্মদ সৈয়দ কি না, তা কারওরই জানা নেই।
আবদুর রজ্জাক এবং তাঁর পরিবারকে আয়কর দফতরও খুঁজে পায়নি। খোঁজ চলছে। কেন এমন অস্বাভাবিক ঘোষণাপত্র জমা দওয়া হল, সে বিষয়ে রজ্জাক ও তাঁর পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান আয়কর কর্তারা। কিন্তু জেরা করবেন কাকে? ঠিকানা তো গত সাত বছর ধরে খালি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy