শেষ হল প্রতীক্ষা। ব্রডগেজ লাইনে ইঞ্জিন ঢুকল বদরপুরে। শুক্রবার। ছবি: উত্তমকুমার মুহরী।
ইঞ্জিন-জুড়ে বাদুড়ঝোলা বরাকের মানুষ!
ব্রডগেজ রেল লাইনে শুধু দেখা যাচ্ছিল সেটির লোহার চাকাগুলিই। বাকিটা মালা, মানুষের মাথায় ঢাকা।
ব্রডগেজ ইঞ্জিনকে এ ভাবেই স্বাগত জানালেন বদরপুর, শিলচরের বাসিন্দারা। ১৯ বছর পর ব্রডগেজে যুক্ত হল লামডিং-শিলচর। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের হিসেবে, ২০১ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন বদলেছে। কিন্তু বরাকবাসী বলছেন, আসলে বদলে গিয়েছে বহির্বিশ্বের সঙ্গে উপত্যকার মেলামেশার লাইনটাই। কারও কারও কথায়, “এ ভাবেই উন্নয়নের পথে পা দিল বরাক।”
কামরা-বিহীন ইঞ্জিন আজ যত এগিয়েছে, ততই বেড়েছে ভিড়। ইঞ্জিনে, লাইনের পাশে, স্টেশনে কোথাও তিল ধারণের জায়গা ছিল না। বদরপুরে পৌঁছনোর পর ইঞ্জিনের চালক এ কে রাম বলেই ফেললেন, “এ যেন জনসমুদ্র!” শিলচরে পৌঁছনোর পর মুখের ভাষাই হারালেন তিনি। পাঁচগ্রাম স্টেশনে বিজেপি কর্মীরা শাঁখ বাজিয়ে, ধূপ-দীপে বরণ করলেন ইঞ্জিন-দেবতাকে। উলুধ্বনিতে মুখরিত হল গোটা এলাকা।
এ দিন সকাল থেকেই সরগরম ছিল শিলচর স্টেশন। ভাষা শহিদ স্টেশন স্মরণ সমিতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ-সহ অন্য সংগঠন গান-বাজনার আসর বসায়। বিজেপি পতাকায় ভরে ছিল স্টেশন চত্বর। স্লোগান ওঠে, ‘ব্রডগেজ আনল কে, বিজেপি আবার কে!’ শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পাল বিধানসভা অধিবেশনের জন্য হাজির ছিলেন না শহরে। তিনি বললেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বরাকের জন্য তিনটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ব্রডগেজ এনে দিলেন। এ বার ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর গড়বেন। তার পর কাটাবেন হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত জটিলতা।”
শহরে ফিরেছেন শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেবও। তিনি বলেন, “কংগ্রেস নানা সমস্যার মধ্যেও কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তাই বিজেপি ক্ষমতায় বসেই শিলচরে ইঞ্জিন পৌঁছতে পেরেছে।” তবে, তিনি এ জন্য মোদী সরকারকেও সাধুবাদ জানান।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলচরের উদ্দেশে ব্রডগেজের ইঞ্জিন গত রাতে রওনা দেয়। মাইগ্রেনডিসায় আট ঘণ্টা দাঁড়ানোর পর এ দিন সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে পৌঁছয় ডিমা হাসাওয়ের জেলা সদর নিউ হাফলঙয়ে। ১২ জানুয়ারি সেখানে প্রথম ব্রডগেজের ইঞ্জিন পৌঁছেছিল। সেই হিসেবে বাড়তি উন্মাদনার সুযোগ ছিল না। কিন্তু তা-ও বেলা ১১টা ৫ মিনিটে যখন ইঞ্জিন হাফলঙ ছাড়ে, তখন বড়াইল পাহাড়ের এ দিক ও দিকে হর্ষোল্লাস ছড়িয়ে পড়ছিল। শিলচরে পৌঁছে চালক জানান, লাইন ঠিকই রয়েছে। ফাঁকা জায়গায় ৫০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চালানো গিয়েছে। গতিবেগ আরও বাড়ানো যাবে।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার অজিত পণ্ডিত জানান, রবিবার খালি কামরা নিয়ে আরও একটি ইঞ্জিন শিলচর যাবে। পর দিন সেটি জেনারেল ম্যানেজার রাকেশকুমার সিংহকে লামডিং নিয়ে যাবে। তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতে ২২ মার্চের মধ্যে পাথরখলা-হাফলঙ চূড়ান্ত পর্যায়ের নিরাপত্তা পরীক্ষা হবে। এর পর পরীক্ষা হবে হাফলঙ-শিলচর রুটে। ৩১ মার্চের মধ্যে সে কাজ সম্পূর্ণ হবে। ১ এপ্রিল থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে চলবে মালগাড়ি।
শিলচরে ইঞ্জিন পৌঁছনোয় উৎসাহ ছড়িয়েছে ত্রিপুরাতেও। আগামী ১ অক্টোবর থেকে ওই রুটে লাইন বসানোর কাজ শুরু হবে। ত্রিপুরাবাসী আশাবাদী, রেলের আশ্বাসমতো, ২০১৬ সালের মার্চের মধ্যেই ব্রডগেজের ইঞ্জিন পৌঁছবে সে রাজ্যেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy