সরকারের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ যে নিরঙ্কুশ, সে কথা গোড়া থেকেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন যোগী। ছবি: পিটিআই।
শপথ নিয়েছেন ১৯ মার্চ। সে দিন ছিল রবিবার, সরকারি অফিস-কাছারিতে ছুটির দিন। অর্থাৎ যোগী পুরোদস্তুর কাজ শুরু করেছেন ২০ মার্চ, সোমবার থেকে। ঠিক তার পরের সোমবারে পৌঁছে ছবিটা ততটাই চমকে যাওয়ার মতো, বিজেপি নেতৃত্ব উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে যোগী আদিত্যনাথের নাম ঘোষণা করার পর যতটা চমকে গিয়েছিল রাজনৈতিক শিবির। গত এক সপ্তাহে একটাও ক্যাবিনেট বৈঠক করেননি উত্তরপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। এবং এই সিদ্ধান্তগুলির অধিকাংশই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য।
গো-রক্ষা চিরকালই বিজেপি-আরএসএস-এর প্রিয় এজেন্ডা। তবে এ বারের নির্বাচনে গো-রক্ষা ইস্যুকে যতটা তেড়েফুঁড়ে সামনে এনেছিল গেরুয়া শিবির, এর আগে কখনও ততটা দেখা দেখা যায়নি। গো-বলয়ের প্রাণকেন্দ্রে গো-রক্ষা ইস্যু নিয়ে তেড়েফুঁড়ে প্রচারে নামলে যে ফল মেলে, উত্তরপ্রদেশের রায় থেকে সে কথা কিছুটা হলেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে তাই বিন্দুমাত্র দেরি করতে রাজি হননি যোগী আদিত্যনাথ।
শপথ নিয়েই রাজ্যের সমস্ত অবৈধ কসাইখানা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশকে। যে সব যন্ত্রচালিত কসাইখানা বিপুল দূষণ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ, সেগুলোতেও তালা ঝুলিয়ে দিতে বলেছেন যোগী। এই বিরাট সিদ্ধান্ত কিন্তু যোগী আদিত্যনাথের একক সিদ্ধান্ত। বিধানসভায় আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। মন্ত্রিসভার পরামর্শও চাওয়া হয়নি।
শুধু কসাইখানা বন্ধের নির্দেশ দিয়েই যোগী আদিত্যনাথ ক্ষান্ত হননি। ক্ষমতাসীন হওয়ার দিন দুয়েকের মধ্যেই জোরকদমে পথে নামিয়ে দিয়েছেন ‘অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড’কে। রাস্তাঘাটে, জনবহুল এলাকায়, স্কুল-কলেজের পাড়ায়, শপিং মলে কোনও মেয়েকে উত্যক্ত করার বা হেনস্থা করার চেষ্টা দেখলেই নিমেষে সক্রিয় হচ্ছে অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড। পাকড়াও করা হচ্ছে ‘রোমিও’কে।
গোমতী নদী পরিদর্শনে গিয়ে সরকারি কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় যোগী। সঙ্গে দীনেশ শর্মা, রীতা বহুগুণা যোশীরাও। ছবি: পিটিআই।
যোগীর এই দুই সিদ্ধান্ত কতটা প্রভাব ফেলছে উত্তরপ্রদেশে?
অবৈধ কসাইখানা বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে মাংস বিক্রেতারা অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘট শুরু করেছেন উত্তরপ্রদেশে। কিন্তু সমর্থনের বহরটাও মন্দ নয়। কট্টর হিন্দুরা বেশ খুশিই। কেউ কেউ বলছেন, ‘গরু আমাদের মা। আমাদের বাড়িতে যা-ই রান্না হয়, প্রথমেই আমরা তা গরুকে খাওয়াই। গো-রক্ষা আমাদের কাছে উন্নয়নের চেয়েও বেশি জরুরি।’ যে গ্রামের বাসিন্দারা এই কথা বলছেন, বিশারা নামের সেই গ্রাম দিল্লি থেকে বড়জোর ৩০-৩২ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু রাস্তাঘাট বেশ ভাঙাচোরা, বিদ্যুৎ সরবরাহ খুব কম। সন্ধে ৭টা থেকে পর দিন সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে গ্রামে। দিনভর বিদ্যুৎ অমিল। কিন্তু দাদরিতে ফ্রিজে গোমাংস রাখার গুজব রটিয়ে আকলাখ আহমেদকে গণপ্রহারে হত্যা করায় অভিযুক্ত যে ১৪ জন, তাদেরই এক জনের পরিবারের তরফে জানানো হল, বিশারার রাস্তা সারাই হবে কি না, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়বে কি না, সে সব পরের বিষয়। গরুকে রক্ষা করা করার জন্য সরকার কী করছে, সেটাই তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড়।
আরও পড়ুন: বাজার থেকে উধাও মাংস, উত্তরপ্রদেশে মাছ বাজারে উপচে পড়া ভিড় দিনভর
অবৈধ কসাইখানা বন্ধ করা এবং মেয়েদের হেনস্থা রোখার নামে পুলিশ কোথাও কোথাও বাড়াবাড়ি করছে বলেও অভিযোগ উঠছে। নতুন মুখ্যমন্ত্রীর কানে সে কথা পৌঁছেও গিয়েছে। আর তৎক্ষণাৎ পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক করে যোগী আদিত্যনাথ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অতিসক্রিয়তা দেখানোর কোনও প্রয়োজন নেই। মাংসের বৈধ ব্যবসায়ীর দোকানে তালা ঝোলানো যাবে না। ‘রোমিও’ পাকড়াও করার নামে তরুণ যুগলদের হেনস্থা করার চেষ্টাও বরদাস্ত করা হবে না।
যোগীর নির্দেশ এবং সতর্কবার্তা কতটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে পুলিশ-প্রশাসন, তা নিয়ে কিছু সংশয় রয়েছে। ক্যাবিনেট বৈঠক না ডেকেই বড় বড় সিদ্ধান্ত তিনি কী ভাবে নিচ্ছেন, সে নিয়েও কোথাও কোথাও প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে যোগীর প্রতি উচ্চকিত সমর্থনের বহর যে ভাবে বাড়ছে, তাতে এই মুহূর্তে যোগীর কোনও সিদ্ধান্তকেই জোরদার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার অবস্থায় কেউ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy